Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

১২ জানুয়ারি, ২০২২ ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

দেখে এলাম নয়াগ্রা- ৫ম শ্রণি, বিষয়ঃ বাংলা , অধ্যায়ঃ২০

দেখে এলাম নয়াগ্রা


নায়াগ্রা নদী (/nˈæɡərə/ ny-AG-ər-ə): নদীটি, এরি হ্রদ থেকে ওন্টারিও লেক-এর উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদী কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের (পশ্চিমে) এবং যুক্তরাষ্ট্র-এ নিউইয়র্ক রাজ্যের (পূর্ব দিকে) সীমান্তের একটি অংশ গঠন করেছে। নদীর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব রয়েছে। আইরোকোইয়ান পণ্ডিত ব্রুস ট্রিগার-এর মতে, নায়াগ্রা স্থানীয়ভাবে বসবাসকারী নিট্রাল কনফেডেরেসির একটি শাখাকে দেওয়া নাম থেকে উদ্ভূত হয়েছিল। ১৭-শতাব্দীর শেষের বেশ কয়েকটি ফ্রেঞ্চ মানচিত্রে এই অঞ্চলকে নায়াগাগারেগা নামে অভিহিত করা হয়েছে।[৪] জর্জ আর. স্টুয়ার্ট-এর মতে, এটি ওঙ্গনিয়াহরা নামে একটি ইরোকোইস শহরের নাম থেকে এসেছে। এর অর্থ "দুই অংশে কাটা জমির বিন্দু"।[৫]

প্রায় ৫৮ কিলোমিটার (৩৬ মা) দীর্ঘ নদীটিকে সোজা হিসাবে বর্ণনা করা যায়।[৬] এর গতিপথে নায়াগ্রা জলপ্রপাত অবস্থিত। জলপ্রপাতটি বিগত ১২,০০০ বছর ধরে নায়াগ্রা এসকার্পমেন্ট থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার (৬.৮ মা) উপর থেকে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জলপ্রপাতের নীচে তৈরি হয়েছে গর্জ। বর্তমানে নদীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা করায় ক্ষয়ের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। নদী বরাবর পাড়ের উচ্চতা প্রায় ৯৯ মিটার (৩২৫ ফু)। নায়াগ্রা গর্জ জলপ্রপাত থেকে নিচে প্রসারিত হওয়ার সময় নায়াগ্রা ঘূর্ণিসহ র‌্যাপিডের অন্য একটি অংশে চালিত হয়।

নদীর তীরবর্তী বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলির মধ্যে রয়েছে কানাডার দিকে স্যার অ্যাডাম বেক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র (১৯২২ এবং ১৯৫৪ সালে নির্মিত) এবং আমেরিকার দিকের রবার্ট মোজেস নায়াগ্রা বিদ্যুৎ প্রকল্প (১৯৬১ সালে নির্মিত)। তারা একসাথে ৪.৪ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। নদীর প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে ১৯৫৪ সালে নির্মিত ইন্টারন্যাশনাল কন্ট্রোল ওয়ার্কসগ্রেট লেক-এর জাহাজগুলি নায়াগ্রা জলপ্রপাতকে পাশ কাটানোর জন্য কানাডার দিকের সেন্ট লরেন্স সমুদ্রপথ-এর কিছু অংশ ওয়েলল্যান্ড খাল ব্যবহার করে।

নায়াগ্রা নদীতে দুটি বড় দ্বীপ এবং অসংখ্য ছোট দ্বীপ রয়েছে। গ্র্যান্ড আইল্যান্ড এবং নেভি আইল্যান্ড, দুটি বৃহত্তম দ্বীপ যথাক্রমে আমেরিকান এবং কানাডিয়ান নদীর তীরে রয়েছে। গোট আইল্যান্ড এবং ক্ষুদ্র লুনা আইল্যান্ড নায়াগ্রা জলপ্রপাতকে তিন ভাগে বিভক্ত করে - হর্সশু জলপ্রপাত, ব্রাইডাল ভেইল জলপ্রপাত, এবং আমেরিকান জলপ্রপাতইউনিটি দ্বীপটি বাফেলো শহরের পাশাপাশি আরও উজানে অবস্থিত।

নায়াগ্রা নদী এবং তার উপনদী টোনাওয়ান্দা ক্রিক এবং ওয়েল্যান্ড নদী এরি খাল এবং ওয়েলল্যান্ড খালের শেষ অংশ গঠন করেছে। নিউইয়র্কের লকপোর্ট ছেড়ে যাওয়ার পরে, এরি খালটি দক্ষিণ-পশ্চিমে গিয়ে টোনওয়ান্দা ক্রিকে প্রবেশ করেছে। নায়াগ্রা নদীতে প্রবেশের পরে, জলযান দক্ষিণের দিকে চূড়ান্ত লকের দিকে এগিয়ে যায়। যেখানে খালের একটি সংক্ষিপ্ত অংশে জলযানগুলি নদীর উত্তাল স্রোত এড়িয়ে এরি হ্রদে প্রবেশ করে। ওয়েলল্যান্ড খাল জলপ্রপাতের দক্ষিণে নায়াগ্রা নদীর সাথে সংযোগ হিসাবে ওয়েলল্যান্ড নদীকে ব্যবহার করে। ফলে জলযান নিরাপদে নায়াগ্রা নদীতে পুনরায় প্রবেশ করতে পারে এবং এরি লেকের দিকে অগ্রসর হয়।

আমেরিকান ফলস, ডানদিকে গোট দ্বীপ।

ইতিহাস

কুইনস্টন, ওন্টারিও, তখন কুইন্সটাউন নামে পরিচিত, উচ্চ কানাডার রাজধানী। আর্মি সার্জন এডওয়ার্ড ওয়ালশের জলরঙা চিত্র, ১৮০৫। নায়াগ্রা নদী পরিষ্কার দেখা যায়।

ফরাসী অভিযাত্রী ফাদার লুই হেন্নেপিন-এর প্রথম সাক্ষাত অভিজ্ঞতার পরে ১৭ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে উত্তর আমেরিকার বাইরে নায়াগ্রা নদী এবং তার জলপ্রপাতগুলি সম্পর্কে খবর ছড়ায়। তিনি তাঁর ভ্রমণ সম্পর্কিত লেখায় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এই নতুন আবিষ্কারের বিষয়ের উল্লেখ করেন (১৬৯৮)।[৭]

আমেরিকার প্রথম দিকের নথিভূক্ত রেলপথ দ্রষ্টব্যস্থান ছিল এই নায়াগ্রা নদী। ১৭৬৪ সালে একজন ব্রিটিশ সামরিক প্রকৌশলী জন মন্ট্রেসর (১৭৩৬–১৭৯৯) কাঠ দিয়ে আনত এই ট্রামপথটি নির্মাণ করে ছিলেন। "দ্য ক্র্যাডলস" (দোলনা) এবং "দ্য ওল্ড লিউইসস্টন ইনক্লাইন" নামে পরিচিত, এই ব্যবস্থায় বোঝাই গাড়িগুলি কাঠের রেলে দড়ি দিয়ে টানা হত। বর্তমান নায়াগ্রা এসকার্পমেনন্ট এর উপরে লিউইসস্টন, নিউ ইয়র্ক-এ পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে তখন ব্যবহৃত হত।[৮]

নায়াগ্রা নদীর তীরে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। ঐতিহাসিকভাবে ফোর্ট জর্জ (কানাডিয়ান পক্ষ) এবং নদীর মুখে ফোর্ট নায়াগ্রা (আমেরিকান পক্ষ) এবং নদীর মাথার কাছে ফোর্ট এরি (কানাডিয়ান পক্ষ) থেকে রক্ষা করা হয়েছিল। এই দুর্গগুলি ফরাসি এবং ইন্ডিয়ান যুদ্ধ এবং আমেরিকার বৈপ্লবিক যুদ্ধ-এর সময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নদীর ধারে ১৮১২ এর যুদ্ধ ক্ষেত্রে সংঘটিত হয়েছিল কুইনস্টন হাইটসের যুদ্ধ

আমেরিকান গৃহযুদ্ধ-এর আগে এই নদীটি মুক্তির পথ হিসাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ পথ হয়ে উঠেছিল। আন্ডারগ্রাউন্ড রেলপথ-এর দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে তখন কানাডায় স্বাধীনতার সন্ধানে বহু আফ্রিকান-আমেরিকান এই পথে পালিয়ে আসতেন। পলাতক দাস এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের সাহসকে স্মরণীয় রাখতে লুইস্টনের নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে ফ্রিডম ক্রসিং স্মৃতিসৌধটি। ঐ সব স্বেচ্ছাসেবীরাই দাসদের গোপনে নদী পার করতে সহায়তা করতেন।

১৮৮০ এর দশকে, নায়াগ্রা নদী হয়ে ওঠে জলপথ গড়ে ওঠা উত্তর আমেরিকার প্রথম বৃহত্তম জলবিদ্যুতের উৎপাদন কেন্দ্র।[৯]

ফোর্ট জর্জ (পার্কস কানাডা দ্বারা কেন্দ্রীয়ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা একটি জাতীয় ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্যস্থান) ছাড়া ফোর্ট এরি সহ নদীতীরবর্তী যাবতীয় সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ, জনসাধারণের জন্য সবুজায়ন ও পরিবেশগত ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব পালন করে কানাডার নদী তীরের প্রাদেশিক সংস্থা নায়াগ্রা পার্কস কমিশন

আমেরিকার দিকে, নিউ ইয়র্ক স্টেট অফিস অফ পার্কস, বিনোদন এবং ঐতিহাসিক সংরক্ষণ-এর দপ্তর নায়াগ্রা জলপ্রপাত এবং নায়াগ্রা নদী সংলগ্ন কয়েকটি রাজ্য উদ্যান রক্ষণাবেক্ষণ করে।

এখন এই নদীটির সাথে কানাডিয়ান হেরাল্ডিক অথোরিটির, নায়াগ্রা হেরাল্ড এক্ট্রাঅর্ডিনারী যেন একাকার হয়ে উঠেছে।

আরো দেখুন