Loading..

ম্যাগাজিন

১৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০৭:৫৫ পূর্বাহ্ণ

নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে করণীয় কী?

বর্তমানের ডিজিটাল যুগে ইন্টারনেট এখন আমাদের নিত্য জীবনের একটি অপরিহার্য উপাদান। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে নিরাপদ থাকা যায় সেটি এখন মুখ্য বিষয়ের মধ্যে একটি। সবাই, বিশেষ করে শিশুরা যেন তাদের হাতে থাকা প্রযুক্তির মধ্য থেকে সেরাটা গ্রহণ করতে পারে, সে জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে সচেতনতা তৈরিকে দায়িত্ব বিবেচনা করে গ্রামীণফোন।


গ্রামীণফোন বিষয়টি নিয়ে চার বছর ধরে কাজ করছে। গ্রামীণফোন বিশ্বাস করে, মানুষের মধ্যে ইন্টারনেট সুবিধা ছড়িয়ে দিয়ে সমাজের অসমতা দূর করা সম্ভব। প্রযুক্তির সর্বাপেক্ষা ব্যবহার ও তা ব্যবহারের সুযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব বাধা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ইন্টারনেটের অনিরাপদ ব্যবহার। বর্তমান সময়ের তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে লাভবান করেছে সত্যি; কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তরুণদের একটি বড় অংশ এর অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার অপচয় করছে। আমরা যদি ফেসবুকের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাব তারা এক ধরনের একাকিত্বে ভুগছে, সমাজের বাস্তব ও মূলধারার সঙ্গে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি করে ফেসবুকের বন্ধু-বান্ধবী, ফেইক বন্ধু ও বান্ধবীদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাচ্ছে। সারা রাত এ কাজ করতে করতে অনেকেই ক্লাস মিস করে কিংবা ক্লাসে উপস্থিত হলেও মনোযোগী হতে পারে না। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ প্রবণতা যেন আরো বেশি। বিষয়টি তাদের অলস, কর্মবিমুখ ও বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ধীরে ধীরে তারা মাদকেও আসক্ত হয়ে পড়ছে। কেউ কেউ আন্তর্জাতিক অপরাধীচক্রের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে, সন্ত্রাসবাদে জড়িয়ে পড়ছে। এসব বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। ডিজিটাল যুগে তাঁদের ভূমিকাও ডিজিটাল হতে হবে, শুধু ট্র্যাডিশনাল দায়িত্ব পালন করলে চলবে না।


ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি অনলাইনে শিশুদের নিরাপদ রাখার চ্যালেঞ্জ এবং অনলাইনের হুমকি থেকে তাদের সুরক্ষিত রাখাটা এখন সময়ের দাবি। দেশের ৪৯ শতাংশ স্কুলশিক্ষার্থী সাইবার বুলিং বা ইন্টারনেটে অশোভন বার্তা পাওয়ার মতো ঘটনার শিকার হচ্ছে।

শিশুদের ইন্টারনেটে সহজে প্রবেশাধিকারের কারণে মা-বাবার কাছে আলোচিত ও শঙ্কার একটি বিষয় হচ্ছে সাইবার বুলিং। বাংলাদেশের ৪৯ শতাংশ স্কুলশিক্ষার্থীর একই ব্যক্তি দ্বারা উত্পীড়নের শিকার হওয়া অথবা অনলাইনে উত্ত্যক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নারীদের মধ্যে ৭৩ শতাংশ নানা ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ৪৯ শতাংশ স্কুলশিক্ষার্থী সাইবার হুমকির শিকার। তবে ২৩ শতাংশই অভিযোগ করে না।

জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তার অংশ হিসেবে অনলাইনে শিশুর নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করাকে নির্বাচন করেছে গ্রামীণফোন ও টেলিনর গ্রুপ। শিশুরা যাতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ও দায়িত্ব নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং এ মাধ্যমে যোগাযোগ করে ও এ ক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় সে লক্ষ্যেই কাজ করছে তারা। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যখন কোনো বিপজ্জনক ওয়েবসাইট পরিদর্শন করার চেষ্টা করে তখন তাদের সতর্ক করার মাধ্যমে এ উদ্যোগ মূলত মালওয়ের এবং ফিশিং প্রচেষ্টা থেকে Chrome ব্যবহারকারীদের রক্ষা করার জন্য নিরাপদ ব্রাউজিং প্রযুক্তি তৈরি করছে। ইন্টারনেটের ব্যবহার সবার জন্য নিরাপদ করতে এ প্রযুক্তিকে Apple Safari এবং Mozilla Firefox-সহ অন্যান্য কম্পানিকে বিনা মূল্যে তাদের ব্রাউজারে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। আজ পৃথিবীর অর্ধেক অনলাইন জনসংখ্যা নিরাপদ ব্রাউজিং দ্বারা সুরক্ষিত।

বান্দরবানসহ দেশে ১০টি ইন্টারনেট স্কুল আছে। এসব স্কুলে মানসম্মত শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ছয় কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে, তাদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ ব্যবহারকারী তরুণ। মেয়েদের থেকে ছেলেরা ইন্টারনেট ব্যবহারে এগিয়ে আছে। অর্ধেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কী করে, কী দেখে তা মা-বাবারা জানেন না। কাজেই মা-বাবাকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তরুণরা মা, বাবা ও শিক্ষকের কাছ থেকে এবং বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে শেখে। তাই সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে প্রত্যেক নাগরিককে ইন্টারনেট ব্যবহারের আওতায় নিয়ে আসা এবং তাদের মধ্যে অর্ধেককে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া, যাতে আইসিটি খাত থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলার, ২০২১ সালের মধ্যে পাঁচ বিলিয়ন ডলার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করা যায়। ২০০৮ সালের ব্যান্ডউইডথের মূল্য ছিল ৭৮ হাজার টাকা, যা কমিয়ে বর্তমানে করা হয়েছে ৬২৫ টাকা।

সত্যিকার অর্থে ইন্টারনেট ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে পারলে তরুণদের জীবনই বদলে যাবে। তাই এর ক্ষতিকর দিকগুলোও তাদের জানাতে হবে। একজন মানুষ যা জানতে চায় তার প্রায় সবই পাওয়া যাবে এই ডিভাইসে। তরুণরা আমাদের থেকে অনেক বেশি জানে ও বোঝে। তারা জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পারে ইন্টারনেট ইতিবাচকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে। তবে নিয়ন্ত্রণহীন ইন্টারনেট সমাজ ও জীবনকে বিপর্যস্ত করতে পারে। আমরা তরুণদের প্রযুক্তিনির্ভর করতে চাই, প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের জীবন ইতিবাচকভাবে বদলাতে চাই; কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের জীবন অন্ধকার হয়ে যাক, তা নিশ্চয়ই আমরা কেউ চাই না। তাই বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি