Loading..

শিক্ষায় অগ্রযাত্রা

১৫ জানুয়ারি, ২০২২ ০৮:৩৯ অপরাহ্ণ

দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে করণীয় ॥ দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে করণীয় ॥

একটা সময় ছিল যখন প্রযুক্তির দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে ছিল। কিন্তু এখন বহির্বিশ্বের প্রযুক্তির ছোঁয়া বাংলাদেশেও লেগেছে। একসময়ের স্বল্প উন্নত দেশ বাংলাদেশ, এখন সবক্ষেত্রেই উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। বেড়েছে শিক্ষার হার। কিন্তু এখনও বাড়েনি কর্মসংস্থানের সংখ্যা। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ‘এশিয়া-প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (২০০০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত) বলা হয়েছে যে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানে, যা ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশে এ হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এ অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রতি বছর শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মানুষ চাকরি পাচ্ছে, কিন্তু যে বিষয়ে ডিগ্রী অর্জন করেছে সেই বিষয়ের সঙ্গে তাদের কর্মক্ষেত্রের কোন প্রকার সংযোগ থাকছে না। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য দেশের বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা হচ্ছে, যাতে কোটি কোটি টাকা দেশের বাইরে যাচ্ছে। দেশের জনশক্তি দেশের বাইরে কাজ পাচ্ছে না ভাষাগত অজ্ঞতার কারণে। এসব সমস্যার একটি সমাধান হলো দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা, যারা শিক্ষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মেও দক্ষ হবে। এরই সঙ্গে বাড়াতে হবে যথেষ্ট কর্মসংস্থান, যাতে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা না বাড়ে। সরকারকে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে এই সমস্যার সমাধানে। প্রয়োজন উপযুক্ত পরিকল্পনা।

ইউজিসির তথ্যানুসারে বাংলাদেশে গত ২০১৮ সালে প্রযুক্তি/কারিগরি শিক্ষায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী জনগোষ্ঠী : প্রায় সব ইউনিভার্সিটিতেই কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল এ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আরও নানা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছে, যা আইটি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। দীর্ঘ চার বছরের ডিগ্রী অর্জন করে যখন এই সকল শিক্ষার্থী কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছে, তাদের অনেকেরই অদক্ষতার জন্য উপযুক্ত চাকরি হচ্ছে না । আর যদি চাকরি হয়েও যায় তারা তাদের পুঁথিগত বিদ্যাকে বাস্তবিক জীবনে কাজে লাগাতে পারছে না। শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থা যে, তারা চাকরির সাক্ষাতকারেও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী হতে পারে না। যে কাজগুলো করতে পারা তাদের জন্য খুব স্বাভাবিক ছিল, পুঁথিগত জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও সেই জ্ঞানের প্রয়োগ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাকরিদাতাদের অভিযোগ থাকে যে, তারা দক্ষ কর্মী পাচ্ছে না। ঠিক তেমনি এসব সদ্য ডিগ্রীপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীও কর্ম ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠতে হিমশিম খাচ্ছে। তাদের আলাদা করে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে চাকরিদাতাদের। এ কারণেই বেশিরভাগ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকার কথা বাধ্যতামূলক করা হয়। ফলে অনেক ভাল ফল থাকা সত্ত্বেও চাকরি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে।

এবার আসা যাক কর্মসংস্থানের বিষয়ে। প্রতিবছর যত সংখ্যক শিক্ষার্থী ডিগ্রী লাভ করছে, তত সংখ্যক উপযুক্ত চাকরির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে না। একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে- ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রীপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী কোন আইটি কোম্পানিতে চাকরি না করে চাকরি করছে একটি স্বল্প বেতনের কল সেন্টারে। এর কারণ হচ্ছে যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকা। যখন তার ডিগ্রী সম্পর্কিত চাকরির জন্য সে যাচ্ছে তার কাছে অভিজ্ঞতা চাওয়া হচ্ছে, কিন্তু সে চাকরি প্রার্থীর চাকরির অভিজ্ঞতা তো থাকছে তা কিন্তু কল সেন্টারের, যা কল সেন্টারগুলো ছাড়া অন্য কোথাও কাজে লাগবে না। কেউ কেউ আইটি ক্ষেত্রে লেখাপড়া করেও বিভিন্ন সরকারী চাকরি, ব্যাংক বা নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। এ সবই হচ্ছে যথাযথ কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে। অনেককেই দেখা যায় যে, হয়ত কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হচ্ছে, কিন্তু ভবিষ্যত চাকরি জীবনের কথা চিন্তা করে পরবর্তীতে তাদের লেখাপড়ার সাবজেক্ট পরিবর্তন করে হয়ত বিবিএতে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। কারণ এই বিষয়ে লেখাপড়া করলে চাকরি পাবার সম্ভাবনা বেশি মনে করছে তারা। খুব কম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত শিক্ষার বাস্তব প্রয়োগের কোন শিক্ষা দেয়া হয়। যেহেতু শিক্ষার বাস্তব প্রয়োগ শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে না। তার কারণেই শিক্ষার্থীরা যথাযথ জ্ঞান লাভ করতে পারছে না এবং অদক্ষ কর্মী হয়ে উঠছে। যার কারণে তারা দেশের উন্নতিতে আশানুরূপ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।


আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি