রসুন আমাদের দৈনন্দিন খাবারের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। রসুনে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৫, বি৬, বি৯ এবং সেলেনিয়াম ইত্যাদি। সেলেনিয়াম ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব দারুণ কাজ করে।

প্রাচীন ইতিহাস দেখলেই জানতে পারবেন, তখন রসুন কিন্তু শুধুই বিভিন্ন অসুখ সারানোর জন্যই ব্যবহার করা হতো। মিশরীয়, ব্যাবিলনীয়, গ্রিক, রোমান ও চৈনিক সভ্যতায় ঔষুধ হিসেবে রসুন ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এমনকি সকালে খালি পেটে রসুন চিবানো ও স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো।

রসুন খাওয়ার অসাধারণ উপকারিতাঃ

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
রসুনের অ্যান্টি–ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি–ফাঙ্গাল গুণ একে অনেকটা ওষুধের মতোই তৈরী করেছে, যার দরুণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খালি পেটে রসুন খেলে এই উপকার অনেক বেশী। বর্তমানে এই মহামারি পরিস্থিতিতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুবই জরুরী, তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ২ কোয়া রসুন খাওয়া।

২. উচ্চ রক্তচাপ কমাতে
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর অন্যতম উপায় রসুন। শরীরের এলডিএল (LDL) বেড়ে যাওয়ার কারণে রক্তচাপ বেড়ে যায়, দৈনিক ২ কোয়া রসুন সকালে খালি পেটে খেলে উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যা আর থাকবেই না।

৩. রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বাড়ায়
নিয়মিত সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন খেলে রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা অনেকটা বৃদ্ধি পায়, যার দরুণ রক্ত বাধাগ্রস্ত হয়ে যেসব রোগের সৃষ্টি করে, তা আর হতে পারে না।

৪. পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
পুরুষের যৌন ক্ষমতা নানান কারণে কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন খেলে আস্তে আস্তে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে ২ ধরণের মতামত থাকলেও পুরুষের ক্ষমতার মূল উৎস হলো রক্তের সাবলীল গতি। রসুনে এই কাজ করে বলেই যৌন ক্ষমতার কথা বলা হয়ে থাকে।

৫. হাড়ের শক্তি বাড়ায়
একটা বয়সের পর বিভিন্ন কারণে নারীদের হাড়ের শক্তি অনেকটাই কমে যায়। নিয়মিত ২ গ্রাম করে রসুন খেলে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রায় ভারসাম্য থাকে। যাঁদের কম থাকে, তাঁদের কিছুটাও বাড়ে। ফলে হাড় সংক্রান্ত সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। এমনকি যে নারীদের মেনোপোজ হয়ে গেছে, তাঁরাও দৈনিক রসুন খেলে অনেক বেশী উপকার পাবেন।

৬. সংক্রমণ প্রতিরোধে
মানুষের শরীরে যেকোন সময়েই সংক্রমণ ঘটতে পারে। সংক্রামক রোগ এমন একটি অবস্থা, যার কোনো পূর্বলক্ষণ থাকে না। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন খেলে শরীর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।

৭. ত্বক ভালো রাখে
প্রতিদিন ২ কোয়া রসুন খালি পেটে খেলে ত্বক ভালো থাকে, ত্বকে বার্ধ্যকের ছাপ পড়ে না, চেহারায় কোনও দাগ থাকলে অনেকটাই কমে যায়।

৮. শরীরে অবাঞ্ছিত ফোলা বা গোটা
অনেকের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ফোলা–পিণ্ড থাকে, বাড়ে কমে না, ব্যথাও করে না, কিন্তু ফোলাটা মিশে যায় না, এমন ফোলা বা গোটা শরীর থেকে মুছে ফেলতে নিয়মিত ৫-৭ কোষ রসুন সকালে খালি পেটে এবং দুপুর ও রাতে খাবার পর ২টি করে রসুন কোষ খেলে ফোলাটা আস্তে আস্তে মিশে যাবে। অথবা ২ কোয়া রসুন হালকা করে ভেজে তা খেতে হবে।

৯. ফুসফুসের সংক্রমণ প্রতিরোধে
ফুসফুসে বিভিন্ন কারণেই সংক্রমণ হতে পারে। অ্যালার্জি সমস্যা, ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থেকে ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটতে পারে। 

যা থেকে মুক্তি পেতে রসুন পিষে রস খেলে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে, সাথে হলুদগুঁড়া গরম পানি দিয়ে চায়ের মতো খেলে সংক্রমণ থাকে না। আর প্রতিদিন ২ কোয়া রসুন খালি পেটে খাওয়া ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে অত্যন্ত কার্যকর।

১০. হৃৎপিণ্ডের শক্তিবর্ধক
যাঁরা হৃদপিণ্ডের ছোট-খাটো সমস্যা নিয়ে বিব্রত আছেন, মাঝে মধ্যে বুকের বাঁ পাশে ব্যথা অনুভূত হয়, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে অনেক কষ্ট হয়, তাঁদের জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২ কোয়া রসুন পানি দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলতে হবে।

এতে করে হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হবে, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির কারণেই হৃদপিণ্ডের ব্লকগুলো আর বাড়বে না এবং ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারবে না, বুকের ব্যথা কমে যাবে, সিঁড়ি বেয়ে উঠতে আর কষ্টও হবে না।

রসুন খাওয়ার সঠিক নিয়মবলি:
আয়ুর্বেদ চিকিৎসক দেবাশিস ঘোষ বলেন, ‘‘সকালে খালি পেটে খেতেই হবে এমনটা কিন্ত নয়। বিকেল–দুপুর বা রাতে খেতে পারেন। পুরো উপকার পেতে গেলে খেতে হবে কাঁচা রসুন, আগেই বলা হয়েছে। এমনি খেতে অসুবিধা হলে ধনে পাতার সাথে বেটে নিন। 

নারকেল বা কচু বাটায় মেশান। সালাত বা দইয়ে মিশিয়ে খান। কারো ভয় একটাই, শ্বাসে কটূ গন্ধ হবে কি না? সে উপায়ও আছে। একটু পার্সলে পাতা ভালোভাবে চিবিয়ে নিন, দাঁত ভালোভাবে মাজুন বা ব্যবহার করুন মাউথ-ওয়াশ, গন্ধ একেবারেই চলে যাবে।’’

রসুনের উপকারিতা (rosuner upokarita) ও রসুন খাওয়ার নিয়ম পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানান। এছাড়াও এই সংক্রান্ত আরও কিছু তথ্য জানা থাকলেও সেটিও জানাতে ভুলবেন না।