Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

১৯ ফেব্রুয়ারি , ২০২২ ০৯:৫৭ অপরাহ্ণ

বাংলা ভাষণ

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এ ভাষা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দান। কবি ফররুখ আহমদ গানে গানে বলেছেন-

‘ও আমার মাতৃভাষা বাংলাভাষা

খোদার সেরা দান

বিশ্বভাষার সবই তোমার

রূপ যে অনির্বাণ।’

প্রত্যেক জাতিরই কোনো না কোনো বৈশিষ্ট্য আছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের যে এক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন, তা হল আমাদের নিখাদ মাতৃভাষা প্রীতি। ভাষার জন্য বুকের রক্ত ঢেলে দেয়া, এভাবে রক্ত দিয়ে ভাষার প্রেমকে কালজয়ী করা যেন মাতৃপ্রেমেরই জ্বলন্ত প্রকাশ। মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে- আমি কোনো নবীই এমন পাঠাইনি, যে তাঁর জাতির মাতৃভাষায় আমার বাণী তাদের কাছে পৌঁছায়নি, যাতে করে সে তাদের কাছে আমার আয়াতগুলো পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলতে পারে (সূরা ইবরাহিম, আয়াত নং-৪)।

১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনের অর্জন যে বিশ্বের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন এটি আজ আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত। জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গসংগঠন ইউনেস্কো আমাদের ভাষা আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ফলে ২১ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর সব দেশেই উদযাপিত হচ্ছে মাতৃভাষা দিবস।

আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলা দাবি করায় তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যাদের শহীদ করল তারা হলেন- রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত প্রমুখ। আমাদের জানামতে, তারা সবাই ছিলেন মুসলিম, যাদের নাম আমরা অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে উচ্চারণ করে থাকি, এরা মুসলিম ও মজলুম হওয়ার কারণে আমরা তাদের শহীদ হিসেবে অভিহিত করে থাকি। শুধু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে সন্তুষ্ট করার জন্য জীবন দিলে বা মজলুম অবস্থায় ঘাতকের হাতে কোনো মুসলিম জীবন দিলেই কেবল তাকে ইসলামী পরিভাষায় শহীদ বলা হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের ভাষা আন্দোলনের এ কৃতী সন্তানরা শহীদ, আর তাই তাদের স্মরণে যে স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হল তাকে ‘শহীদ মিনার’ বলে থাকি।

গোটা বাংলাদেশে আনুমানিক হাজার দশেক শহীদ মিনার আছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে দু-একটা শহীদ মিনার গড়ে ওঠেনি। ভাষাকে নিয়ে এ ধরনের নজির পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই, কখনই ছিল না। কিন্তু নবীর সবচেয়ে বড় ওয়ারিশ আমাদের দেশের জনসাধারণের শ্রদ্ধার পাত্র ওলামায়ে কিরাম এ ভাষা দিবস উদযাপনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছেন না, এটি একটি অস্বস্তির বিষয়।

কত সাধারণ কারণে ও তুচ্ছ ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আমাদের ওলামায়ে কিরাম কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল, দোয়া-মোনাজাত করে থাকেন। কিন্তু ভাষা শহীদদের জন্য কি আমাদের ওলামায়ে কেরাম এমনটি করতে পারেন না? এ শহীদদের ত্যাগ আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। তাই ওলামায়ে কেরামদের উচিত কোরআনখানি, আলোচনা সভা, দোয়া ও মোনাজাত করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করা।

আমাদের ভাষা শহীদরা তাদের টগবগে যৌবনকে বিসর্জন দিয়ে, ইহকালীন সব ভোগ-বিলাসকে তুচ্ছ জ্ঞান করে আমাদের প্রিয় বাংলাভাষার জন্য তাজা জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছেন। তাই তারা আমাদের ওলামায়ে কেরামের এবং মুসলমানের দোয়া পাওয়ার যোগ্য।

যদি ওলামায়ে কেরাম ভাষা দিবস উদযাপনের প্রতীকী দিকগুলোকে শরিয়ত গর্হিত কাজ বলে এর প্রতি অনাগ্রহ দেখান, তাহলে বলব এর জন্যও সম্মানিত ওলামায়ে কেরামই দায়ী। কেননা ভাষা শহীদদের প্রাপ্য পরিশোধে ওলামায়ে কেরামের অমনোযোগী হওয়ার সুযোগে শূন্য ময়দানে শরিয়ত গর্হিত কাজগুলো স্থান করে নিয়েছে। অথচ আমরা আমাদের মৃত পূর্ব পুরুষদের জন্য ঠিকই কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত, দোয়া ইত্যাদি করে থাকি।

পক্ষান্তরে ভাষা শহীদদের প্রতি জুলুম করেই যাচ্ছি; যা তাদের সঙ্গে এক রকম বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। আমাদের ভাবতে হবে পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরাম মাতৃভাষার জন্য কী অবদান রেখে গেছেন। এ ব্যাপারে মরহুম মাওলানা আকরাম খাঁর কথা গর্বভরে উচ্চারণ করা যায়।

আরো দেখুন