Loading..

প্রকাশনা

১৯ ফেব্রুয়ারি , ২০২২ ১১:৫৫ অপরাহ্ণ

মাতৃভাষা ও ইসলাম

মাতৃভাষা ও ইসলাম 

  ভাষা আল্লাহ তাআলার সেরা নেয়ামত। ইসলাম সব ভাষাকে সম্মান করতে শেখায়। কারণ, সব ভাষাই আল্লাহর দান ও তাঁর কুদরতের নিদর্শন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে”- (সূরা- রুম, আয়াত: (২২-২১)
সব মানুষ একই পিতামাতার সন্তান। সবারই পিতা আদম (আ.), মাতা হাওয়া (আ.)। তাই সব মানুষ ভাই ভাই, তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নাই। সাদা-কালো, লম্বা-খাটো সে তো আল্লাহর সৃষ্টি। বর্ণবৈষম্য, ভাষাবৈষম্য এবং ভৌগোলিক পার্থক্য মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ সৃষ্টি করে না।পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তিই বেশি মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব খবর রাখেন” (সূরা- হুজুরাত, আয়াত: ১৩

  সুতরাং কোনো ভাষাকে হেয় জ্ঞান করা যাবে না, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না এবং অবহেলা করা যাবে না; কেননা, ভাষার স্রষ্টা মহান আল্লাহ। তাঁর সৃষ্টির অবমূল্যায়ন করা তাঁর প্রতি অসম্মান প্রদর্শনেরই নামান্তর। আল্লাহ তাআলা মানুষের হিদায়াতের জন্য নবী-রাসুলদের পাঠিয়েছেন। তাঁদের ধর্ম প্রচারের প্রধান মাধ্যম ছিল দাওয়াত বা মহা সত্যের প্রতি আহ্বান। আর এর জন্য ভাষার কোনো বিকল্প ছিল না। আল্লাহ তাআলা বলেন-”আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য” (সূরা- ইবরাহিম, আয়াত: ৪,

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “তিন কারণে তোমরা আরবিকে ভালোবেসো; যেহেতু আমি আরবি ভাষায় কথা বলি, কোরআন আরবি ভাষায় লেখা এবং জান্নাতের ভাষাও হবে আরবি” (বুখারি)।

আরবি পরকালের ভাষা হওয়া সত্ত্বেও সব নবী-রাসুল আরবি ভাষাভাষী ছিলেন না; এমনকি সব আসমানি কিতাবও আরবি ভাষায় লেখা হয়নি। আমরা জানি, তাওরাত কিতাব ইবরানি ভাষায় হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর নাজিল করা হয়; জাবুর কিতাব ইউনানি ভাষায় হজরত দাউদ (আ.)-এর ওপর নাজিল করা হয়; ইঞ্জিল কিতাব সুরিয়ানি ভাষায় হজরত ঈসা (আ.)-এর ওপর নাজিল করা হয়; এবং সর্বশেষ আসমানি কিতাব কোরআন আরবি ভাষায় সর্বশেষ নবী ও রাসুল মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর নাজিল করা হয়।

সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল করার কারণ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা স্বয়ং ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, “ইহা আমি অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায়, যাতে তোমরা বুঝতে পারো” (সূরা- ইউসুফ, আয়াত: ২- অর্থাৎ আরবদের কাছে আরবি ভাষাভাষীর নবী ও আরবি কিতাব আল কোরআন নাজিল করা হয়েছে। কারণ, তাদের মাতৃভাষা আরবি; অনারবি ভাষায় নাজিল করলে তাদের বুঝতে ও অনুসরণ করতে সহজ হবে না।
ইসলাম শুধু ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে ব্যাপক জাতীয় কল্যাণ বাধাগ্রস্ত হতে দেয়নি। বরং যাযাবর আরবদের স্থানীয় ভাষায় কোরআন নাজিল করে বিশ্বকল্যাণ নিশ্চিত করা হয়েছে।

 

প্রতিটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতি ও বিশ্বাসের সঙ্গে স্বাধীনতা, স্বদেশপ্রেম ও মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা বিদ্যমান। এ ক্ষেত্রে ধর্মবিশ্বাসের পার্থক্য কোনো বিভেদ বা বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি করে না। তাই মুসলিম নাগরিকেরা সব সময় মা, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন। ইসলাম সব ভাষাকে সম্মান করতে শেখায়। কিন্তু ইসলামের নামে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী জনমতের বিপরীতে অবস্থান করে, মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে, ধর্মীয় চেতনার তোয়াক্কা না করে এ দেশের মানুষকে ভিনদেশি ভাষার পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে চায়। কিন্তু এ দেশের জনগণ তা মানতে অস্বীকৃতি জানায়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য বাকস্বাধীনতা ও নিজ ভাষায় কথা বলার অধিকারের জন্য প্রাণ দেয় নিরস্ত্র ছাত্রজনতা। পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র আমরাই মাতৃভাষার জন্য রক্ত ও জীবন দিয়েছি। তাই ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি আমাদের ‘ভাষাশহীদ দিবস’ এবং বর্তমানে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে সারা বিশ্বে।

হে আল্লাহ তাআলা! ভাষাশহীদসহ শাহাদাত কবুল করুন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে তাঁদের উচ্চমর্যাদায় আসীন করুন।আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ভাষাকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী রাখুন এবং উত্তরোত্তর এর শ্রীবৃদ্ধি সাধন করুন।  

মোহাম্মদ আনছার উল্লাহ।

সহকারী শিক্ষক

শহীদনগর সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

লালখাঁনবাজার,চট্টগ্রাম।

মোবাইল-০১৮১৯৫৩৭৯২৯

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি