সহকারী অধ্যাপক
২৩ এপ্রিল, ২০২২ ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ
করোনাভাইরাস বদলে দিচ্ছে মানুষের মস্তিষ্ক
করোনাভাইরাস
বদলে দিচ্ছে মানুষের মস্তিষ্ক
করোনাভাইরাসে
আক্রান্ত হওয়ার ফলে মস্তিষ্কে পরিবর্তন হতে পারে। সম্প্রতি এক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত
ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এ কথাই জানিয়েছেন একদল ব্রিটিশ গবেষক। সংবাদমাধ্যম বিবিসি
নিউজের নিবন্ধ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
অক্সফোর্ড
বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক বেশ কিছু মানুষের মস্তিষ্কের দুই দফা এমআরআই রিপোর্টের
তুলনামূলক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। প্রথম দফায় এমআরআই স্ক্যান
করা হয়েছিল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার আগে এবং দ্বিতীয়বার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত
হওয়ার পর। এ দুই এমআরআই স্ক্যানের তুলনামূলক পর্যালোচনার পর প্রত্যেকের মস্তিষ্কেই
উল্লেখযোগ্য পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকেরা
আরও দেখতে পান, করোনাভাইরাসের মৃদু সংক্রমণের পরও মস্তিষ্কের সামগ্রিক আয়তনের
সামান্য অংশ সংকুচিত হয়েছিল। এ ছাড়া মস্তিষ্কের যে অংশগুলো গন্ধ ও স্মৃতির সঙ্গে
সম্পর্কিত, সেই অংশগুলোতেও ধূসর পদার্থের পরিমাণ কমে গেছে। গবেষকেরা এখনো নিশ্চিত
নন যে মস্তিষ্কের এই পরিবর্তনগুলো স্থায়ী কি না। তবে তাঁরা জোর দিয়েই বলছেন,
মস্তিষ্ক নিজে থেকেই এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে।
বিজ্ঞান সাময়িকী
নেচারে প্রকাশিত ওই গবেষণা নিবন্ধে গবেষক দলের প্রধান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের
ওয়েলকাম সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটিভ নিউরোইমেজিংয়ের অধ্যাপক গোয়েনেল ডৌউড বলেছেন,
‘আমরা আমাদের গবেষণায় মূলত মৃদু সংক্রমণের দিকটায় ফোকাস করেছিলাম। আমরা আশা
করেছিলাম যে তাদের মস্তিষ্কে কিছু হলেও পার্থক্য দেখতে পাব। এই পরিবর্তন যারা
সংক্রামিত হয়নি তাদের মস্তিষ্কের তুলনায় বেশ উল্লেখযোগ্য।’
যুক্তরাজ্যের
বায়োব্যাংকের এই প্রকল্প প্রায় ১৫ বছর ধরে অন্তত ৫ লাখ মানুষের মস্তিষ্কের এমআরআই
স্ক্যানের রিপোর্টগুলো সংরক্ষণ করে আসছিল এবং মহামারির আগে করা স্ক্যানগুলোর তথ্য
সংরক্ষণ করা হয়েছিল, যাতে ভবিষ্যতে যেকোনো ভাইরাস স্বাস্থ্যের ওপর কী ধরনের প্রভাব
ফেলে তা জানা যায়। করোনা মহামারির আবির্ভাবের পর যাঁরা করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন,
তাঁদের কয়েকজনের মস্তিষ্কের পুনরায় এমআরআই স্ক্যান করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে
তাঁরা দেখতে পেয়েছেন—৪০১
জনের মধ্যে ৯৬ শতাংশ ব্যক্তিই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁরা বড়
ধরনের কোনো অসুস্থতার মুখোমুখি হননি। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যেসব ব্যক্তি
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের সামগ্রিক মস্তিষ্কের আকার ০ দশমিক ২ শতাংশ
থেকে ২ শতাংশের মতো সংকুচিত হয়েছিল। একই সঙ্গে মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশগুলো
ঘ্রাণ সংবেদ নিয়ন্ত্রণ করে, সেই অংশের ‘ধূসর পদার্থ’ কমে গিয়েছিল। গবেষকেরা আরও
দেখতে পেয়েছেন, কোভিড থেকে সেরা ওঠা ব্যক্তিদের জন্য যেকোনো ধরনে জটিল মানসিক
কাজগুলো করা বেশ কঠিন ছিল।
অধ্যাপক ডৌউড
বলেছেন, ‘ধূসর পদার্থের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি ঘ্রাণ সংবেদ অঞ্চলে হয়েছিল। তবে
এটি স্পষ্ট নয় যে করোনাভাইরাস সরাসরি এই অঞ্চলে আক্রমণ করে, নাকি কোভিডে আক্রান্ত
লোকেরা তাদের ঘ্রাণশক্তি হারানোর পরে কোষগুলো ব্যবহারের অভাবে মারা যায়।’
করোনাভাইরাসের সব
ধরন এই ক্ষতি করতে পারে কি না, বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে
পারেননি। তবে যখন এমআরআই স্ক্যানগুলো করা হয়েছিল, তখন করোনাভাইরাসের প্রধান ধরন ও
আলফা ধরনটি প্রচলিত ছিল। সে সময় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ ছিল
স্বাদ ও গন্ধ হারিয়ে ফেলা। কিন্তু বর্তমানে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনটি বিস্তার
লাভ করেছে এবং একই সঙ্গে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও নাটকীয়ভাবে কমে
গেছে।
বিবিসির
ওই প্রতিবেদনে একটি মজার বিষয়ও তুলে ধরা হয়। গবেষকেরা যখন বলছেন, করোনা ভাইরাসে
আক্রান্ত হওয়ার ফলে মানুষের মস্তিষ্ক সংকুচিত হচ্ছে এবং ঘ্রাণ ও স্মৃতির বিষয়
নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের এমন অংশের ধূসর পদার্থ কমে যাচ্ছে, বিপরীতে আশার আলো
দেখিয়েছেন আরেকদল গবেষক। তাঁরা দেখাচ্ছেন, অনুশীলনের মাধ্যমে ঘ্রাণ সংবেদ আবার
অনেকাংশে ফিরিয়ে আনা যায়। বায়োব্যাংকের প্রধান গবেষক অধ্যাপক নাওমি অ্যালেন এমনটাই
ইঙ্গিত দিয়েছেন।