Loading..

প্রকাশনা

২৯ জুন, ২০২২ ০৭:২৪ অপরাহ্ণ

ঋণগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও তার বিচক্ষণ কন্যার গল্প

ঋণগ্রস্ত ব্যবসায়ী তার বিচক্ষণ কন্যার গল্প

আমরা অনেক সময় ভয়াবহ কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ি। পরিস্থিতি কখনো এতই অসম্ভব হয় যে তা থেকে উত্তরণের আর পথ থাকে না।

জীবনে কঠিন পরিস্থিতি আসবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার রাস্তা তৈরি করা সম্ভব।

সমস্যা যত কঠিনই হোক, তার সমাধান আছে। আমরা যদি ধৈর্য্য ধরে নিজেদের বিচক্ষণতাকে কাজে লাগাতে পারি, গতানুগতিকের বাইরে চিন্তা করতে পারি তাহলে হয়ত আমরা কঠিন সমস্যার সহজ সমাধান পেতে পারি এবং কঠিন পরিস্থিতি থেকে হাসিমুখে বের হয়ে আসতে পারি।

বহুদিন আগের এক ঋণগ্রস্ত ব্যবসায়ী তার বুদ্ধিমতী কন্যার গল্প থেকে ব্যাপারটা আপনারা আন্দাজ করতে পারবেন।

* * *

ইতালির ছোট্ট একটা শহরের কথা। অনেক অনেক দিন আগে একবার সেই শহরের এক ছোট ব্যবসায়ী এক বয়স্ক লোকের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিল।

যে লোকের কাছ থেকে টাকা ধার করলো সেই বৃদ্ধ লোকটির কাজই ছিল ঝামেলা তৈরি মানুষকে বিপদে ফেলা।

ব্যবসায়ীর সময় ভাল যাচ্ছিল না। ব্যবসায়ে লোকসানের কারণে সময়মত টাকা ফেরত দিতে পারল না সে। তখন ওই বৃদ্ধ লোকটি ব্যবসায়ীর কাছে গিয়ে একটি প্রস্তাব দিল। তাকে বলল, একটা কাজ করলে সে পুরোপুরি ওই ঋণের দায় থেকে মুক্ত হয়ে যেতে পারে। যদি সে তার মেয়েকে বয়স্ক লোকটির সাথে বিয়ে দেয়।

খুব স্বাভাবিকভাবেই, ব্যবসায়ী এই প্রস্তাবটি মেনে নিতে পারল না।

তখন ওই বয়স্ক লোকটি বলল, একটা সুযোগ দেওয়া যেতে পারে ব্যবসায়ী তার কন্যাকে। সে বলল, আমি একটা কাপড়ের ব্যাগের মধ্যে দুটি পাথর খণ্ড রাখব, একটা সাদা, আরেকটা কালো। মেয়েটি যেকোনো একটা পাথর ব্যাগের ভিতর থেকে তুলে আনবে। যদি সেই পাথরটি কালো হয় তাহলে ঋণ মওকুফ হয়ে যাবে, তবে মেয়েটিকে ওই বয়স্ক লোককে বিয়ে করতে হবে। আর, যদি পাথরটি সাদা হয় তাহলে ঋণ মওকুফ হবে, এবং মেয়েটিকে ওই বৃদ্ধ লোকটিকে বিয়ে করতে হবে না।

ব্যবসায়ীর বাগানের রাস্তায় দাঁড়িয়ে বয়স্ক লোকটি পাথর তুলছিল। পাথর তোলার সময় মেয়েটি দূর থেকে লক্ষ্য করল ওই লোক নিচু হয়ে রাস্তা থেকে দুটিই কালো রঙের পাথর তুলে ব্যাগে রাখল।

লোকজন জড়ো হলো। মেয়েটিকে এখন ব্যাগের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে যেকোনো একটি পাথর খণ্ড বের করে আনতে হবে। বয়স্ক ওই লোক মেয়েটিকে যেকোনো একটি পাথর বের করে আনতে বলল। মেয়েটি চিন্তা করে দেখল তার হাতে এখন মাত্র তিনটি অপশন আছে।

এক. সে পাথর বের করে আনতে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।

দুই. দুটি পাথরই বের করে এনে ওই লোকের প্রতারণা সবার সামনে ধরিয়ে দিতে পারে।

তিন. তার পিতাকে ঋণের দায় থেকে মুক্ত করার জন্য জেনে-শুনেই একটি কালো রঙের পাথর বের করে আনতে পারে।

মেয়েটি ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করল। ব্যাগে হাত ঢুকিয়ে একটা পাথর বের করে আনল। এবং হাতের মুঠি থেকে খুলে দেখানোর আগেই হাত থেকে পাথর ফেলে দিল সে এমন ভাবে যেন দুর্ঘটনাবশত পাথরটা হাত থেকে পড়ে গেছে। পাথরটা ছিটকে রাস্তার অন্য সব পাথরের মধ্যে গিয়ে পড়ার কারণে সেটাকে আর আলাদা করার উপায় থাকল না।

মেয়েটা তখন বলল, ওহ, কী ভীষণ অসাবধান আমি। কিছু মনে করবেন না। এখন যদি ব্যাগের ভিতরের অন্য পাথরটি দেখেন তাহলে বুঝতে পারবেন আমি আসলে কোন পাথরটি তুলেছিলাম।

ব্যাগের ভিতরে অবধারিতভাবেই কালো রঙের পাথর ছিল। এই অবস্থায় ওই বয়স্ক ধূর্ত লোকটিও আর উচ্চবাচ্চ্য করল না। সেও এমন ভাব করল যে, ব্যাগের ভিতরের পাথরটি যেহেতু কালো, অতএব মেয়েটি সাদা রঙের পাথরই তুলেছিল।

বৃদ্ধ লোকটি ওই মেয়ের পিতাকে ঋণ মওকুফ করে দিয়ে চলে গেল।

* * *

মেয়েটির ঠাণ্ডা মাথায় একটু ব্যতিক্রমী চিন্তা নিজের বিচক্ষণতা কাজে লাগানোর এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় কোনো কঠিন পরিস্থিতি থেকে সবসময়ই উত্তরণ সম্ভব।

আপনি যদি মনে করেন আপনার অপশন সীমিত এবং গতানুগতিকভাবে চিন্তা করেন তাহলে কঠিন পরিস্থিতি থেকে খুব ভাল উত্তরণ সম্ভব নয়। আপনাকে সবসময় অপশন বাড়াতে হবে। আর গৎবাঁধা চিন্তায় বা দৃষ্টিভঙ্গিতে না থেকে ব্যতিক্রমী ভাবে ভাবলেই সেটা সম্ভব।

সৌঃ সিবি

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি