সহকারী প্রধান শিক্ষক
২৯ জুলাই, ২০২২ ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ
বিশেষ শিখন চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী ও সমস্যা সমাধানে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ
বিশেষ শিখন চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থী
সকল মানুষ সমান ক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে
না। জন্মগত কারণে মানুষে মানুষে পার্থক্য দেখা যায়। কেউ কেউ জন্মগত কারণে শারীরিক এবং
মানসিক ক্ষেত্রে উত্তম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়; কেউবা স্বাভাবিক প্রকৃতির আবার কেউ
কেউ শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে অসম্পূর্ণতা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। আবার জন্ম গ্রহণের পর
বিবিধ কারণে কারো কারো শারীরিক অথবা মানসিক সমস্যা দেখা দেয় যা তার স্বাভাবিক জীবনের
গতিকে ব্যাহত করে। যেসব শিক্ষার্থী দৈহিক, মানসিক, প্রক্ষোভিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যের
দিক থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চেয়ে পৃথক তাদেরকে বোঝানোর জন্য ‘বিশেষ শিখন চাহিদা
সম্পন্ন শিক্ষার্থী’ কথাটি ব্যবহার করা হয়। বিশেষ শিখন চাহিদার শিক্ষার্থীদের মধ্যে
রয়েছে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, শ্রবণ প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং শারীরিকভাবে অক্ষম
প্রতিবন্ধী। আমাদের মনে রাখতে হবে, এরাও মানুষ। সকলের মত এদেরও মৌলিক অধিকার পাওয়ার
সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে এবং সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা ও জীবন যাপনে অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ
করে দিতে হবে। এটা তাদের মৌলিক অধিকার যা আমাদের সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। স্বল্প মাত্রার
এসব প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষার শিক্ষার্থীদের সাথে একই বিদ্যালয়ে লেখা
পড়া করতে পারে। সামান্য সহযোগিতা ও উৎসাহ পেলে এরাও অনেক শ্রেণীর সাধারণ শিক্ষার্থীদের
শিখন অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। শিক্ষকের উচিত, এইসব শিক্ষার্থীদেরকে জানা,
তাদের সমস্যা খুঁজে বের করা এবং শিখন সমস্যা দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের আন্তরিকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গির
উপর পাঠদানের কার্যকারিতা নির্ভর করে। তাই সব সময় সতর্ক থেকে পাঠদান করতে হবে এবং সকল
শিক্ষার্থীর প্রতি নজর রাখতে হবে। বিশেষ চাহিদার শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল
দৃষ্টি দিয়ে পাঠদান করতে হবে। প্রয়োজনে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিশেষ
চাহিদার শিক্ষার্থীরা হল :
১. বুদ্ধি প্রতিবন্ধী
২. শ্রবণ প্রতিবন্ধী
৩. দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
৪. শারীরিকভাবে অক্ষম প্রতিবন্ধী।
প্রতিবন্ধী
শিক্ষার্থীদের সমস্যা
১. স্বল্প
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী
স্বল্প বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিখনের
গতি সমবয়সীদের তুলনায় খুবই কম। এদের স্মৃতিশক্তি ক্ষীণ হয়, বিষয়বস্তুর প্রতি বেশীক্ষণ
মনোযোগ দিতে পারে না, সবকিছুকে ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে দেখে, কৌতূহল প্রবৃত্তি ক্ষীণ হয়।
সমবয়সীদের যেসব বিষয়ে অনুরাগ থাকে, এদের তা থাকে না। এরা সমবয়সীদের সাথে মেলামেশা পছন্দ
করে না, বয়সে ছোট ছেলেমেয়েদের সাথে মেলামেশা করে।
২.
স্বল্প শ্রবণ প্রতিবন্ধী
স্বল্প শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের ভাব বিনিময়ে
অসুবিধা হয়। শিক্ষক ও সঙ্গী শিক্ষার্থীদের কথা ভালভাবে অনুসরণ করতে পারে না। কথা শোনার
সময় বক্তার মুখের কাছে ঝুঁকে কথা শোনে।
৩.
স্বল্প দৃষ্টি প্রতিবন্ধী
স্বল্প দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা শ্রেণীর
কার্যাবলি অনুসারণ করতে পারে না। কোন বস্তুকে খুব কাছে নিয়ে দেখে। পড়ার সময় বই চোখের
কাছে নিয়ে পড়ে। চক বোর্ডেও স্বাভাবিক লেখা/ অক্ষর আসনে বসে স্পষ্ট দেখতে পায় না। প্রায়ই
হোঁচট খেয়ে পড়ে। পড়তে দিলে মাথা ধরে বা ক্লান্ত হয়ে যায়। কেউ কেউ তীর্যকভাবে তাকায়
বা কিছু দেখার সময় মাথা কাত করে।
৪. শারীরিক
প্রতিবন্ধী
শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের
পোলিও বা দুর্ঘটনার কারণে কিংবা জন্মগতভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সমস্যা
থাকে। এতে তাদের চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়। অনেক সময় হাত পুড়ে গেলে লেখার ক্ষেত্রে সমস্যা
হয়। শরীরের কোন নির্দিষ্ট অঙ্গের হাড় বেড়ে গিয়ে বসার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। অনেক সময়
তাদের জন্য বিশেষ ধনের আসন-ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হয়। বোবা, তোতলা শিক্ষার্থী শিক্ষকের
বক্তব্য বুঝতে না পারলে প্রশ্ন করে জেনে নিতে পারে না কিংবা সংকোচ বোধ করে। অনেক সময়
এরা লম্বায় সমবয়সীদের তুলনায় খাটো হয়, বিদ্যালয়ের বা শ্রেণীর অন্যান্য কোন শিক্ষার্থী
না বুঝে তাদের বিকৃত নামে সম্বোধন করে। যেমন- এই পিচ্চি বা বামন বা নুলা (খোঁড়া) ইত্যাদি।
এতে এরা খুবই অসহায় অবস্থায় থাকে। সমবয়সী ও অন্যান্যদের সাথে মিশতে পারে না।