সহকারী শিক্ষক
৩১ জুলাই, ২০২২ ০৪:০০ অপরাহ্ণ
নারীর মুক্তি কতদূর!!
নারীর মুক্তি কতদূর!!
নারীর অধিকার, নারী স্বাধীনতা বলতে সত্যি কি কিছু আছে আমাদের পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রে?প্রতিনিয়ত চতুর্দিকে তাকালেই নারী নির্যাতনের যে চিত্র ফুটে উঠবে একুশ শতকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত কোনো নারীর কাছে কি সত্যি সেটি কাম্য হতে পারে? প্রশ্ন আসতে পারে একতরফা কিভাবে একথাটি বলা সহজ!!
নির্যাতন বলতে কি আমরা শুধু সংসারে স্বামীর হাতে স্ত্রীর মার খাওয়াকেই বুঝি? বহু উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত নারী বিয়ের পর নিজের মেধা মননের সাক্ষর রাখতে অক্ষম চার দেয়ালের গন্ডীর বাইরে। কারণ বাইরে উপার্জনের চেয়ে ঘরকন্নার কাজ আর সন্তান লালনপালন করাকেই অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করে থাকেন তথাকথিত স্বামীরা। ১০০ বা ততোধিক টাকার প্রয়োজনে বহু নারীকেই স্বামীর প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে শুনি। বাধ্য হয়ে হয়তো সে স্ত্রীকে স্বামীর পকেট কাটতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা জনৈক ভদ্রমহিলাকে গর্বের সাথে বলতে শুনেছি আপনার ভাইয়ের পকেট থেকে আজ ৫০০ টাকা নিয়েছি টের পায়নি। কারণ, চাইলে নাকি স্বামীর কাছে অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। আবার কিছু স্বামী নামক জীব বউয়ের উপার্জনকে খুব গর্বের সাথে বন্ধু মহলে প্রচার করে থাকেন কিন্তু বেতনের চেকটি নিজের কাছে রেখে দেন। মাস শেষে বউয়ের হাতে চেকবইটি ধরিয়ে দেন শুধুমাত্র স্বাক্ষর করার জন্য। অতি মেধাবী কতো যে মেয়ে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একবুক স্বপ্ন নিয়ে নিজের বা পরিবারের সম্মতিতে সংসার জীবন শুরু করে, তাদের অনেকেরই জীবনে সুখস্মৃতি বলে কিছু থাকেনা।
একজন ডাক্তার মেয়ে যে কিনা বাবা মায়ের অতি আদরের একমাত্র সন্তান, তাঁকে ও পি. এইচ. ডি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক স্বামীর, অহর্নিশ শরীরে আঘাতের যন্ত্রণা সহ্য করে এক কাপড়ে বাবা মায়ের কাছেই ফিরে আসতে হয়েছে।
বহু কম বয়সী মেয়েকে স্বামীর পরকীয়ার বলি হতে হয়,আর যারা মুখ বুজে মেনে নেয়,সহ্য করে তাদের সারাটি জীবন অমানুষিক দুঃখ কষ্ট ভোগ করেই কাটাতে হয়। বহু বছরের প্রেমের সম্পর্কের পর বিবাহিত জীবনে একাধিক সন্তানের চাকুরীজীবী মাকে ও নিত্যদিন স্বামীর হাতে মার খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে অফিস করতে দেখেছি। তারপরে ও কোনো এক অজানা টানে সে মেয়েটিকে সংসার ছাড়তে দেখিনি। কিন্তু এতো আবেগ, ভালোবাসা ও সে পাষণ্ড স্বামীর মন গলাতে পারেনি। নিজ থেকেই সম্পর্ক ছেদ করে অন্য আরেকটি মেয়েকে নিয়ে দিব্যি সংসার পাততে দেখেছি।
নারীর মেধা মননের, চিন্তাশীলতা, ভালোবাসা আর মতামত প্রকাশের কতটুকু সম্মান আছে আমাদের সমাজে? এখনো কি পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রেই নারীর সুচিন্তিত মতামতকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়?
মেয়েদের চিন্তার সৌন্দর্য চোখে পড়ে কয়জন পুরুষের!!
তাই সকল নারীদের উদ্দেশ্যেই বলছি, তুমি কখনোই কারোর বোঝা নও। সৃষ্টিকর্তা তোমাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন পুরুষের পাশাপাশি সৃষ্টিশীল ভালো কোন কাজ করার জন্য। জেগে ওঠো আপন শক্তিতে। নিজের মেধা, মননকে কাজে লাগিয়ে শুধুমাত্র ভালো চাকরি আর বিয়ের আশায় না থেকে, উদ্যোগী হও ভালো কিছু করার, উদ্যোক্তা হয়ে ওঠো। তোমার পরিচয় হবে তোমার কর্মে। নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলো ভালো মানুষ হিসেবে। শুধু নির্দিষ্ট কোনো দিন নয়, প্রতিটি দিনই তোমার জন্য।
নিজের সৎ চিন্তা, ভালো কিছু করতে চাওয়া আর অধিকারকে সবসময়ই সম্মান দিতে শেখো, সবসময় হাসি দিয়ে দুঃখটাকে জয় করে নাও, দেখবে এতেই তোমার মুক্তি।