Loading..

নেতৃত্বের গল্প

২৭ অক্টোবর, ২০২২ ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষক দিবস ও আমাদের প্রত্যাশা

“শিক্ষকদের হাত ধরেই শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর শুরু” -শিক্ষক দিবস ২০২২ঃ

“মানুষ গড়ার কারিগর তুমি,
মোদের শিক্ষাগুরু,
তুমিই আমাদের আলোর দিশারী,
শুভ চেতনার শুরু।”

শিক্ষকরা হলেন একটি জ্বলন্ত মোমবাতির মতো যাঁরা নিজেরা প্রজ্বলিত হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আলো প্রদান করেন। এনাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ নির্দেশনা, শৃঙ্খলা এবং স্নেহ-ভালোবাসা এই সবকিছুই পাওয়া যায়। একজন সফল মানুষের পিছনে শিক্ষক যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। একজন শিক্ষক তিনি যে শিক্ষার্থীকে শেখাবেন শুধু তাই নয়, তিনি শিক্ষার্থীকে চলার পথে পরামর্শ দেবেন, ব্যর্থতায় পাশে দাঁড়িয়ে উৎসাহ দেবেন, তিনি সাফল্যের দিনে নতুন লক্ষ স্থির করে দিয়ে শুধু সফলই নয় বরং একজন আদর্শ শিক্ষার্থী তথা নাগরিক হওয়া শেখাবেন।

১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্ব ব্যাপী পালিত হয়ে থাকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এই দিবসটি শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়।
বিশ্বের ১০০ টি এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এই দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। দিবসটি উপলক্ষে ইআই প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।

বাংলাদেশে শিক্ষক দিবসঃ
১৯৯৫ সাল থেকে শিক্ষক দিবস বেসরকারিভাবে বাংলাদেশে উদযাপিত হয়ে আসছে। কিন্তু সরকারীভভাবে এই প্রথম ২৭ অক্টোবর, ২০২২ পালিত হতে যাচ্ছে শিক্ষক দিবস। ২০২২ সালের শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে হচ্ছে “শিক্ষকদের হাত ধরেই শিক্ষা ব্যবস্থার রূপান্তর শুরু”।

শিক্ষক দিবসের ইতিহাসঃ
১৯৬৬ সাল থেকে প্যারিসে শিক্ষকের মর্যাদা সংক্রান্ত আন্তঃসরকার সম্মেলনে ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা শিক্ষকদের অধিকার, দায়িত্ব এবং মর্যাদা সম্পর্কে একটি যৌথ সুপারিশমালা প্রণয়ন করে। উক্ত সুপারিশমালায় শিক্ষকতা পেশাকে সম্মানজনক অবস্থানে নেওয়াসহ শিক্ষক প্রশিক্ষণ, নিয়োগ ও পদোন্নতি, দায়িত্ব ও অধিকার, চাকরির নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা বিধানের প্রক্রিয়া, পেশাগত স্বাধীনতা, কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন, শিক্ষা সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ, কার্যকর শিক্ষাদান ও শিখনের পরিবেশ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছিল।

শিক্ষক দিবস পালনের উদ্দেশ্যঃ
শিক্ষকরা শুধু পড়ালেখা শেখানোই নয়, পাশাপাশি জীবনে সফল হতে নানা উপদেশ দেওয়া, নৈতিকতা শেখানো, প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতেও শেখান। আর এই শিক্ষকদের অধিকার আদায় ও সম্মাননা হিসেবেই পালন করা হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস। পরবর্তী প্রজন্মও যাতে কার্যকরী ও যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে এই দিনটি পালন করে সেটাও উদ্দেশ্য।
১৯৯৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে। এই দিবস স্মরণে ইউনেস্কো প্রতি বছর শিক্ষকদের সম্পর্কে বিশ্বকে আরো ভালোভাবে বোঝাতে এবং শিক্ষার্থীদের বিকাশের ওপর তাদের প্রভাবের গুরুত্ব তুলে ধরতে ক্যাম্পেইন করে।

১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ১৯৯৫ সাল থেকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই প্রতি বছরের ৫ অক্টোবর যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে।

ইউনেস্কো এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘শিক্ষক: সঙ্কটে নেতৃত্বদান, ভবিষ্যতের পুনর্নির্মাণ।’ আজ বিশ্বব্যাপী শিক্ষকতা পেশা উদযাপন করা হবে এবং জানানো হবে মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

দেশ ভেদে শিক্ষক দিবসঃ
বিশ্বের ১০০টি দেশে শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে থাকে। অনেক দেশে দিবসটি ভিন্ন ভিন্ন তারিখে পালিত হয়। যেমন: ভারতে শিক্ষক দিবস পালিত হয় ৫ সেপ্টেম্বর। অস্ট্রেলিয়ায় অক্টোবর মাসের শেষ শুক্রবার শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। শেষ শুক্রবার যদি ৩১ অক্টোবর হয়, তা হলে ৭ নভেম্বর শিক্ষক দিবস পালিত হয়। ভুটান শিক্ষক দিবস পালন করে ২ মে, ইন্দোনেশিয়া ২৫ নভেম্বর, মালয়েশিয়া ১৬ মে, ইরান ২ মে, ইরাক ১ মার্চ, আর্জেন্টিনা ১১ সেপ্টেম্বর, ব্রাজিল ১৫ অক্টোবর, চীন ১০ সেপ্টেম্বর, তাইওয়ান ২৮ সেপ্টেম্বর, থাইল্যান্ড ১৬ জানুয়ারি, সিঙ্গাপুর সেপ্টেম্বরের প্রথম শুক্রবার দিনটি পালন করে। 

শিক্ষক দিবসের তাৎপর্যঃ
শিক্ষক হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। তারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত। তাদের হাত ধরেই মূলত আমরা জ্ঞানের মহাসাগর পাড়ি দেই। শিক্ষকরা প্রদীপের মত নিজেকে জ্বালিয়ে অন্যকে আলো দান করেন, অর্থা শিক্ষক অমর, তিনি বেঁচে থাকেন শিক্ষার্থীদের আদর্শের মাধ্যমে শিক্ষকরা শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষা দেন তা কিন্তু নয়। তারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেন। একজন আদর্শ শিক্ষকের কিছু কাজ ও দায়বদ্ধতা আছে। এ কাজ ও দায়বদ্ধতা সহকর্মীদের কাছে, সমাজের কাছে, দেশ ও জাতির কাছে, আগামি প্রজন্মের কাছে। একজন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শিক্ষকতার পেশা উত্তম পেশা হলেও এতোবছর পরেও বাংলাদেশের শিক্ষকদের প্রকৃত মর্যাদা আজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষকদের প্রাণের এক দফা এক দাবী, জাতীয়করণ। কিন্তু সে স্বপ্ন যে কবে সত্যি হবে, কবে আসবে শিক্ষকদের সেই সুদিন–
শিক্ষাঙ্গনসহ নানা জায়গায় শিক্ষকরা আজ অপমানিত হচ্ছেন! আসলে শিক্ষকসহ গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ নামক জিনিসগুলো আজ শুণ্যের কোঠায়।  মনে রাখতে হবে যে, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁদের যথাযথ সম্মান দিতে হবে।
আর এই দিবস উদযাপনের মধ্যদিয়ে সকল শিক্ষদের সেই সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হোক সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক –
তাজ মাহমুদ
সহকারি প্রধান শিক্ষক
মাইনীমুখ মডেল হাই স্কুল
লংগদু, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।