Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

০৬ নভেম্বর, ২০২২ ০৪:০০ অপরাহ্ণ

বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের পথিকৃৎ মেন্ডলাকে আটকে রাখা হয় যে কক্ষে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে বাংলায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যখন বিধবা বিবাহ প্রচলনের জন্য লড়ছেন, তখন আমেরিকা থেকে দাসপ্রথা বিলুপ্ত করার জন্য প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন জড়িয়ে পড়েছেন এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে। এই যুদ্ধ ছিল যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থক ও দাসপ্রথাবিরোধী উত্তরের রাজ্যগুলো (ইউনিয়ন) আর দাসপ্রথা বজায় রাখার সমর্থক দক্ষিণের কিছু রাজ্যের জোটের (কনফেডারেট স্টেটস) মধ্যে। ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ পর্যন্ত চার বছরব্যাপী চলা এই গৃহযুদ্ধ শেষ হয় আব্রাহাম লিংকনের ডাকসাইটে জেনারেল ইউলিসিস এস গ্রান্টের কাছে কনফেডারেটপন্থী জেনারেল রবার্ট লির পরাজয় ও আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে।

তবে উভয় পক্ষে ছয় লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটানো এই গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে দাসব্যবস্থার অবসান ঘটলেও বর্ণবাদের আদৌ অবসান ঘটেনি। জেনারেল লির আত্মসমর্পণের চার দিনের মাথায় আব্রাহাম লিংকন আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন বর্ণবাদী ভাইস প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসন। তিনি গৃহযুদ্ধের অনেক অর্জন নস্যাৎ করার চেষ্টা করেন কিন্তু কংগ্রেসের কারণে ব্যর্থ হন। কনফেডারেটপন্থী পরাজিত জেনারেলরা কিছুদিনের মধ্যেই ব্যবসা-বাণিজ্য করে আবার জেঁকে বসেন। এসব জানা ইতিহাস।

কিন্তু আমার মতো অনেকেই হয়তো জানতেন না যে দাসব্যবস্থা ও বর্ণবাদের জঙ্গি প্রতিমূর্তি, গৃহযুদ্ধের পরাজিত জেনারেল রবার্ট লির মূর্তি এখনো আছে যুক্তরাষ্ট্রে! পরাজিত কনফেডারেটপন্থীদের সম্মানে আছে স্মৃতিস্তম্ভ! দক্ষিণের ১০টি সেনাঘাঁটির নাম আছে দাসপ্রথা রক্ষার জন্য যুদ্ধ করা জেনারেলদের নামে! এসব মূর্তি বা স্মৃতিস্তম্ভগুলো আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের জয় ঘোষণা করে এসেছে।

কিন্তু দেরিতে হলেও দড়িতে টান পড়েছে। শ্বেতাঙ্গ পুলিশের পায়ের চাপে দম নিতে না পেরে মরে যাওয়া একজন কালো মানুষ সারা বিশ্বে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে অভূতপূর্ব দম সৃষ্টি করেছেন। বর্ণবাদের সব চিহ্ন মুছে দেওয়ার এই লড়াইয়ের মুখে নানা জায়গা থেকে বর্ণবাদের স্মারক অপসৃত হচ্ছে। বর্ণবাদী জেনারেল লির মূর্তি অপসারিত হয়ে গুদামঘরে ঢুকছে নয়তো বা নিলামে চড়ছে।

দুই.
পুরো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়া এই বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন সঠিকভাবেই বর্ণবাদের মূল হিসেবে ঔপনিবেশিকতাকে শনাক্ত করতে পেরেছে এবং ঔপনিবেশিক নায়কদের আক্রমণের লক্ষ্যস্থল করেছে। তাই দেখি দাস ব্যবসার জনক ও আমেরিকার আদিবাসীদের গণহত্যাকারী ক্রিস্টোফার কলম্বাসের একটি মূর্তির মাথা উড়ে গেছে! কঙ্গোয় লাখ লাখ মানুষ হত্যার জন্য দায়ী বেলজিয়ামের রাজা লিওপার্ডের মূর্তি আক্রান্ত হয়েছে। যাঁর আমলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য অস্ত যেত না, সেই রানি ভিক্টোরিয়ার মূর্তিও রক্ষা পায়নি। ভারতের ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের প্রধান নায়ক রবার্ট ক্লাইভ, অস্ট্রেলিয়া দখলকারী ক্যাপ্টেন জেমস কুক, ক্যালিফোর্নিয়ায় ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনকারী জলদস্যু ফ্রান্সিস ড্রেকের মতো বিতর্কিত ও কুখ্যাত ব্যক্তিদের মূর্তি অপসারণ করার দাবি উঠেছে।

তিন.
যেসব মূর্তি ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারস’ আন্দোলনকারীদের আক্রমণের মুখে পড়েছে, তাঁদের মধ্যে তিনজনের সঙ্গে আমাদের পরিচয় নিবিড়। তাঁদের প্রথমজন ভারতের জাতির পিতা মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধী। ওয়াশিংটনে গান্ধীজির মূর্তি আক্রান্ত হওয়ায় অনেকেই চোখ কপালে তুলেছেন! প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

গান্ধী দক্ষিণ আমেরিকায় থাকার সময় বর্ণবাদের শিকার হন এবং বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী নেতা হিসেবেই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকার জন্যই তিনি ভারতের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হন, রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে মহাত্মা উপাধি পান। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে যে দক্ষিণ আফ্রিকায় গান্ধী আদৌ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলন করেননি। তাঁর আন্দোলন ছিল ভারতীয়দের, মূলত ভারতীয় ব্যবসায়ী শ্রেণির প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে। কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের জুলুম-নির্যাতন ও বৈষম্যমূলক আচরণের তিনি কোনো প্রতিবাদ করেননি। প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি শ্বেতাঙ্গদের অনুরূপ ছিল।

বছর দুয়েক আগে আফ্রিকার দেশ ঘানার রাজধানী আক্রায় ইউনিভার্সিটি অব ঘানা থেকে গান্ধীজির মূর্তি সরিয়ে ফেলা হয় আন্দোলনের মুখে। এ সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘#GhandiMustFall’ নামে একটি আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হয়। তখন গান্ধীকে ‘বর্ণবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয় যে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকার সময় তিনি ভারতীয়দের আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের চেয়ে উন্নততর জাতি হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং তাঁর বিভিন্ন লেখায় আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের ‘বর্বর’, ‘অসভ্য’, ‘কাফ্রি’ বলে উল্লেখ করেছেন।

গত বছর ম্যানচেস্টারের শিক্ষার্থীরা গান্ধীর একটি মূর্তি স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মেতে ওঠেন। এ সময় তাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘#GhandiMustFall’ শেয়ার করেন।

                        যুক্তরাষ্ট্রে কৃষাঙ্গ ফ্লয়েড হত্যাকান্ডের ঘটনায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি: এএফপি

চার.
এই গান্ধীকে যিনি ‘হাফ নেকেড ফকির’ বলেছিলেন, সেই উইনস্টন চার্চিলের লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কয়ারে স্থাপিত বিশাল-উদর মূর্তিটিও আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। চার্চিল ব্রিটেনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী। একজন নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত সাহিত্যিক

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি