Loading..

প্রকাশনা

২১ নভেম্বর, ২০২২ ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

নারী পূরুষের সম্পর্কের রসায়ন

# নারী পুরুষের সম্পর্কের রসায়ন


প্রেম এবং বৈবাহিক সম্পর্ক এই দুটো সম্পর্কের ভেতর অনেকেই একটা কমন সমস্যার মুখোমুখি হন। আর তা হলো বিপরীত মানুষটার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।মানুষটাকে বোরিং লাগতে শুরু করে। কথা বলা লাগে অনেকটা জোর করে। অনেক কিছুই প্রাণ খুলে বলা যায়না, বলতে ইচ্ছে ও করেনা। 

যারা প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ থাকে, তারা দেখা করা, কথা বলা কমিয়ে দেয় এবং নতুন কারো সাথে বা পরিচিত বন্ধুদের সঙ্গ নিতে থাকে।


তবে, বিবাহিতদের জীবনটা তাদের থেকে আরেকটু জটিল বলে আমার মনে হয়, আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে। তারা চাইলেই যে কোনো কিছু করতে পারেনা। এমনকি মানুষটাকে যে ভালো লাগছেনা বিবাহিতদের তা গোপন করা লাগে। সবসময় বাইরের কাজ বা সাংসারিক কাজকর্মে ব্যস্ত, রাগ এবং হাসির একটা মেকিভাব ফুটিয়ে তোলা লাগে। আপাত দৃষ্টিতে তা স্বাভাবিক, তবে ভেতরে সবকিছু ওলট-পালট। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, এমনটা কেনো ঘটে?


আমার দৃষ্টিতে কারণটা হলো, যে কোনো সম্পর্কের শুরুতে আমরা বুঝতে পারিনা আমি কি একটা সম্পর্কে জড়ানোর জন্য পুরোপুরি মানসিকভাবে প্রস্তুুত কি না!প্রেমের ক্ষেত্রে আমরা হুট করেই কাউকে পছন্দ করে ফেলি।


অনেক সময় পরিবার এবং সমাজের চাপে বিয়ে করি এবং যে কোনো চাহিদা থেকে প্রেমে পড়ে যাই। অথচ এমন ও হতে পারতো ঐ সময় বা বয়সে আমরা একটা সম্পর্কের বোঝা বহন করার জন্য পুরোপুরি মানসিকভাবে প্রস্তুত না। আরেকটা কারণ হলো, আমরা অতি আবেগে নিজেদেরকে খুবই সস্তা আকারে পেশ করি। এটা একটা বড়ো মাপের ভুল। আপনার সঙ্গী যদি মনে করে থাকেন আপনি নেহাৎই তুচ্ছ ব্যক্তিত্বের একজন মানুষ যার সাথে জীবনের প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে থাকা যায়, তবে মনের তাগিদে না। সে আপনার সাথে যা তা ব্যবহার করবে। এর পেছনে কারণটা হলো আপনি তো আছেনই তার সব ধরনের প্রয়োজনে। এ বাক্যটা তার মাথাতে ঘুরবে। আর একটা বড়ো কারণ, আমরা সুনির্দিষ্ট কিছুর জন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়াই, কারো সৌন্দর্য বা গুণ থেকে। ফলাফল!  দ্রুতই ফিকে হতে থাকে আগ্রহ। কারণ একক কিছুর প্রতি দৃষ্টি ছিলো বিধায় দ্রুত তা শেষ হতে  শুরু করে। 

 

শুধুমাত্র বোরিং বা মতের অমিল হওয়ার কারণে যদি আপনি কোনো সম্পর্কের উপর থেকে আগ্রহ হারান কোথা ও না কোথা ও আপনি নৈতিকভাবে দোষী থাকবেন। আবার মনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে থাকলে আপনার নিজের উপর অবিচার করা হবে।


এক্ষেত্রে আমার অভিমত, সম্পর্কে আবদ্ধ থাকা মানুষটাকে নতুন করে আবিষ্কারের চেষ্টা করা। একজন মানুষের ভেতর মুগ্ধভাবে ডুবে থাকার অনেক কিছুই আছে।  শুধুমাত্র আপনি আগ্রহী না দেখেই তা প্রকাশ পাচ্ছে না। নানাভাবে তাকে চমৎকৃত করার চেষ্টা করুন। এতে আপনাকে ও সে চমৎকৃত করার চেষ্টা করবে। ফলাফল দুজনেরই দারুণ সময় কাটবে, রোমান্স বাড়বে। তারপর ও আপনি যদি সম্পর্কে হাঁপিয়ে ওঠেন একটু গ্যাপ নিন। এই গ্যাপটা প্রয়োজন কারণ, আপনি যখন নিজেকে নিজে সময় দেয়ার পর কামব্যাক করবেন সবকিছুই নতুন লাগবে।


এসময়টাতে আপনার সংগীটি আপনাকে ফিল করবে,  মিস করবে, এতে আবেগ ভালোবাসা বাড়বে বৈ কমবেনা। আর যদি দাম্পত্যে আপনাদের মধ্যে শরীরী চাওয়া পাওয়া থাকে তাহলে তো বিষয় টা আরো সহজ হয়ে গেলো। আমি মনে করি পৃথিবীতে কেউ কারো বিকল্প না, তাই কারো প্রতি আগ্রহ হারালে তার অভাবটা অন্য কাউকে দিয়ে পূরণ করা কঠিন কিছু নয়। মানুষের চাহিদা, রুচি সবসময় পরিবর্তনশীল। তবু আমি এটাকে নিরুৎসাহিত করবো এক অর্থে। নিজে ভালো কিছু ডিজার্ভ করেন বা করতেন  সবসময় এটা মাথায় না রাখাই ভালো।


নতুন করে একজন কাউকে বারবার প্রাপ্তির ভেতর আনন্দ আছে। সম্পর্কের মধ্যে সবসময় অভাব, অভিযোগ, গাম্ভীর্য আনার চেষ্টা যদি করেন তাহলে ফাটল আসবে। মনের ভেতর ও সম্পর্কে ছোটো থাকুন। 

সারল্যমাখা রোমান্টিকতায় পুরনো সম্পর্ককে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করুন। বিবাহিত জীবনের এক/ দুই যুগ আগের অর্থাৎ প্রথম জীবনের সব প্রিয় মূহুর্তগুলির কথা,  হাসি, আনন্দের কথা আলোচনা করুন। স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে দায়িত্ব, কর্তব্য, পাওয়া না পাওয়া,অভাব, অভিযোগ আসতেই পারে। যেহেতু সমাজ, সংসার আর সন্তানদের চোখে কেউই ছোটো হতে পারবেন না অতএব, নিজেরাই সুখে থাকার মন্ত্রটা আবিষ্কার করুন।


আমি মনে করি, নারী- পুরুষের প্রেমের বা দাম্পত্য সম্পর্ক একটা চারাগাছের মতো। তাকে যত্ন করে আগলে রেখে টিকিয়ে রাখতে পারলে একদিন তা বিশাল বৃক্ষ হবে। তখন সেটিকে আগলে রাখতে হবেনা প্রাকৃতিক নিয়মেই তা বাড়বে। আর এজন্য প্রয়োজন পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান, পরমত সহিষ্ণু হওয়া। দু'জন দুজনের জন্য একটু বাড়তি সময় বের করে নেয়া।

 

আর এতে যদি কাজ না হয় আর যদি কেউ কাউকে ছাড় দিতে এতোটুকু রাজি না হতে পারেন তাহলে বেটার দুটি পথ আলাদা করে ফেলা। কারণ সুদীর্ঘ কষ্টের পথ পাড়ি দেয়ার চেয়ে ভালো, পথ পরিবর্তন করে ফেলা।

আমরা মানুষ। এজন্যই আমাদের পক্ষে সব পজিটিভ চিন্তাটাই আগে আসা ভালো। সবার সুস্থ প্রেম আর দাম্পত্য সম্পর্ক আশা করতেই পারি যে যার অবস্থান থেকে। 


আনন্দে কাটুক প্রেম আর দাম্পত্য সম্পর্কগুলি।

রুমানা আফরোজ

সহকারী শিক্ষক

বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ কোঃ সপ্রাবিঃ

খুলনা সদর,খলনা।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি