Loading..

প্রকাশনা

২৯ নভেম্বর, ২০২২ ০৭:৪৪ অপরাহ্ণ

গল্পে গল্পে লাউ ডোগার কাহিনী।

লাউ ডোগার তাচ্ছিল্য  হাসি

✍️ পিংকি ঘোষ।

বর্ষার জলে নরম মাটি। ঘরের পেছনের এক চিলতে জমিটাতে কয়েকটা শুকনো দানা দিলাম ছড়িয়ে। দেখতে দেখতে তিরতির করে কুমড়ো ডোগা ছড়ালেও লাউটা বড় অভিমানী। সে যেন একটু বেশি আদর যত্ন চায়। আহ্লাদি মেয়ের মতো অভিমান চোখে তাকায়। নরম রোদ আর ঠেকনা দিয়ে দুবেলা উঁকি ঝুঁকি দিই। সেদিন তীব্র বৃষ্টিতে ওর ছোট্ট দেহটা জুজে উঠতে পারল না। বৃষ্টি থামার পর ছুটে যাই। দেখি মুখ গুঁজে পড়ে আছে মাটিতে। ওর গোড়ায় জমে থাকা অতিরিক্ত জল তাড়াতাড়ি ছেঁচে দিলাম। শুকনো মাটি জোগাড় করে উঁচু করে দিলাম গোড়া। নুইয়ে পড়া ডোগাটা আদর করে পাটের দড়ি দিয়ে জড়ালাম। প্রতিদিনই ওর বেড়ে ওঠা দেখি। সবুজ পাতা, আর লকলকে দেহে ঠিক যেন যৌবনের বহর লেগেছে। নজর ফেরাতে পারি না। নিজের মনেই হেসে উঠি। মাঝে কটা দিন ব্যস্ততার কারণে সেভাবে আর সময় দিতে পারলাম না। শ্রাবণের বাদলে ভেজা জামা কাপড় নিয়ে ঘর-বাহির করতে করতেই সময় যায়। সেদিন পাশের বাড়ির বৌদি হঠাৎ একবাটি কাঁঠাল দিয়ে গেলেন। কাঁঠাল দেখে আমার গা জ্বলে উঠল। ভাবলাম যখন এঁচোড় চেয়েছিলাম তখন আর দিল না। আর এখন ঢং করে কাঁঠাল ... তীব্র গন্ধে আমার ঘরবাড়ি ম ম করছে। কাঁঠালপ্রীতি না থাকলেও কাঁঠালের দানার প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। কাঠাল দানার ডাল, বাটা, চচ্চড়ি আহা।

আজ ছুটি। বেলায় রান্না চাপাব। হাতে অনেকটা সময়। গাছপালাগুলো কেমন আছে চাক্ষুষ করতে গেলাম। ওমা লাউডোগা পাটের দড়ি ছাড়িয়ে এখন আম গাছের ডালে নিজের সংসার বিস্তার করেছে। পুষ্ঠ সবুজ ডগাগুলো যেন হাতছানি দিয়ে আমায় ডাকছে। বর্ষার জলে পেছনের পাঁচিলটা শ্যাওলা ধরেছে। সাবধানে পা ফেলে চড়লাম আম ডালে। সন্তর্পনে কেটে নিলাম দু-একটা ডোগা।  গরম ভাতে কাঁঠাল দানা দিয়ে চচ্চড়িটা জমে যাবে--- ভাবতে ভাবতে অসাবধান হওয়ায় পা গেল ফসকে। আমি চিৎপটাং। দাঁত- মাড়ি ফেঁটে রক্তাক্ত। ডোগাগুলো ছিটকে পড়েছে আমার থেকে হাত খানেক দূরে। আমি যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছি। ঠিক সেই সময় অশ্রুসিক্ত চোখে দেখলাম আমার দিকে তাচ্ছিল্যের হাসি ছড়িয়ে দিচ্ছে সদ্যকাটা লকলকে আমার সাধের লাউ ডোগা।( সংগৃহীত)

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি