সহকারী অধ্যাপক
০১ ডিসেম্বর, ২০২২ ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ
আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত খেলাপি ঋণ ছাড়াল ১৭ হাজার কোটি টাকা=3
আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত
খেলাপি ঋণ ছাড়াল ১৭ হাজার কোটি টাকা
আজ ১ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব এইডস
দিবস। এ রোগ সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন করার জন্যই এ দিনটি পালন করা হয়।
ব্যাংকের
মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদেরও ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ
ব্যাংক।
তবুও এসব প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ না কমে উলটো বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এ
খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বর এই
তিন মাসেই বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। শুধু পরিমাণ নয়, শতাংশ হিসাবেও
বাড়ছে খেলাপি। গত জুনে এ খাতে খেলাপি ছিল ২২ দশমিক ৯৯ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে
হয়েছে ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। সবমিলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর
খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।
জানা
যায়, চলতি বছরও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা ঋণের কিস্তি আদায়ে শর্তসাপেক্ষে
ছাড় দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, শর্তসাপেক্ষে আর্থিক
প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের ঋণের অর্থ পরিশোধে
ছাড় দেওয়া যাবে। চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব কিস্তি প্রদেয়, সেগুলো
নির্ধারিত সময়ের শেষ কার্যদিবসের মধ্যে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ পরিশোধ করা হলে ওই
গ্রাহককে খেলাপি করা হবে না। ১ এপ্রিল পর্যন্ত যেসব ঋণ নিয়মিত রয়েছে কেবল সেসব
ঋণেই এ সুবিধা কার্যকর হবে। মূলত করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব, দেশের
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই ছাড় দেওয়া হয়। গত
বছরজুড়েও ঋণের কিস্তির মাত্র ২৫ শতাংশ পরিশোধে ঋণখেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ দেওয়া হয়
গ্রাহকদের। কিন্তু এই ছাড় দেওয়ার পরও এ খাতে খেলাপি ঋণ না কমে বাড়ছে।
সংশ্লিষ্টরা
বলেন, গত কয়েক বছরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। বিশেষ
করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারি ও ‘লুটপাট’ সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া
নানা অব্যবস্থাপনায় জড়িয়ে বেশ কয়েকটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আগে
থেকেই নাজুক। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও কর্মকর্তারা অনিয়ম, জালিয়াতি ও যোগসাজশের
মাধ্যমে নামে-বেনামে ঋণ দিয়েছেন, যা দীর্ঘদিনেও ফেরত আসছে না। সেসব ঋণই এখন
খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। এ তালিকায় আছে অন্তত ১০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যাদের বিতরণ
করা ঋণের ৩০ থেকে ৯৭ শতাংশই খেলাপি। এর মধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের আমানত
ফেরত দিতে পারছে না।
এনআরবি
গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফিন্যান্সের সাবেক এমডি পিকে হালদার নানা জালিয়াতির
মাধ্যমে অন্তত ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট
করেন। তার লোপাটের শিকার প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর্থিক খাতের গলার কাঁটা। এর মধ্যে
পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসকে প্রথমে অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলেও
পরবর্তী সময়ে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অপর প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস (ফাস) ফিন্যান্স
অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানির
(বিআইএফসি) আর্থিক অবস্থা এখন চরম নাজুক। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণ করা ঋণের
৭৬ থেকে ৯৭ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থাও
নাজুক। এর মধ্যে আছে ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফার্স্ট
ফিন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স ও উত্তরা ফিন্যান্স। এছাড়া আভিভা
ফিন্যান্স (সাবেক রিলায়েন্স ফিন্যান্স) ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার
ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স (আইআইডিএফসি) কোম্পানিরও খেলাপি ঋণ বাড়ছে।
বর্তমানে
দেশে ৩৪টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু আছে। এর মধ্যে তিনটি সরকারি,
১২টি দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় এবং বাকিগুলো দেশীয় ব্যক্তিমালিকানায় পরিচালিত।
বাংলাদেশ
ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আর্থিক
প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৭০ হাজার ৪১৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি
হয়ে গেছে ১৭ হাজার ৩২৭ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা এ খাতে বিতরণ করা ঋণের প্রায় ২৪ দশমিক
৬১ শতাংশ। খেলাপি ঋণের এই হারও এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। তিন মাস আগে গত জুনে ৬৯
হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বিতরণ করা ঋণের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল
১৫ হাজার ৯৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১
হাজার ৩৯০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে
আরও দেখা যায়, গত মার্চে এনবিএফআই-এর খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ১৪ হাজার ২৩২ কোটি টাকা
বা ২০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এ খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১৩ হাজার ১৬
কোটি টাকা।