Loading..

শিক্ষায় অগ্রযাত্রা

০৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৭:৫৪ অপরাহ্ণ

কম ওজনের নবজাতকের যত্ন: কম ওজনের নবজাতক খুব সহজেই রোগাক্রান্ত হতে পারে।

জন্মের সময় শিশুর ওজন যদি আড়াই কিলোগ্রামের কম হয়  তাহলে ধরে নেয়া হয় নবজাতক শিশুটি ওজনহীনতায় ভুগছেন যাকে বলা হয় Low Birth Weight Baby(LBW)।   যদি শিশুর ওজন যদি দেড় কিলোগ্রামেরও কম হয় তাহলে সেই নবজাতককে খুব কম ওজনের শিশু বা  Very Low Birth Weight Baby(VLBW)  এবং ৭৫০ গ্রামের কম ওজনের হলে তাকে চরম ওজনহীন শিশু বা Extreme Low Birth Weight Baby(ELBW)বলা হয়ে থাকে ।  সাধারণত প্রিম্যাচিউরড বেবি কম ওজনের হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক জন্ম নেয়া শিশু কম ওজনের হতে পারে।

যেসব কারণে শিশু কম ওজনের হয়ে থাকে:  

§  নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে অর্থাৎ গর্ভধারণের ৩৭ সপ্তাহ আগে জন্ম 

§  মায়ের অপুষ্টি

§  রক্তাল্পতা,

§   অল্প বয়সে সন্তান ধারণ,

§  একাধিক গর্ভধারণ (দু’টি অথবা তিনটি শিশু)

§   জরায়ুস্থ সংক্রমণ,

§  জরায়ুস্থ অস্বাভাবিকতা ,

§   ক্রোমোজোম অস্বাভাবিকতা,

§  উচ্চ রক্তচাপ,

§   টক্সিমিয়া এবং ম্যালেরিয়া

§  এছাড়াও সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থা ও শিক্ষাগত অবস্থান জড়িত

কম ওজনের নবজাতকের যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে:

§  ফুসফুসের গঠন ঠিকঠাক মত না হওয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা,

§  বিলিরুবিনের মাত্রা বেশী থাকায় জন্ডিস দেখা দেয়া,

§  অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা ,

§  রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা

কম ওজনের নবজাতকের যত্ন:

হাসপাতালে  কম ওজনের শিশুর যত্ন:

জন্মের পর কম ওজনের নবজাতকের সুস্থতার জন্য  প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা প্রয়োজন। কম ওজনের নবজাতকের ফুসফুসের গঠন ঠিকঠাক মত না হবার ফলে জন্মের পর এদের অনেকক্ষেত্রে শ্বাস কষ্ট দেখা দিতে পারে। হাসপাতালে এসময় ভেন্টিলেটরের সাহায্যে সাময়িক ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার ব্যবস্থা করতে হয়।

জন্মের পর বেশির ভাগ কম ওজনের  শিশুর বিলিরুবিনের মাত্রা বেশি থাকে।এই বিলিরুবিনের মাত্রাই জন্ডিসের নির্দেশক। শিশুদের এ ধরনের জন্ডিস ফটোথেরাপী অর্থাৎ আলোর নিচে রেখে  চিকিৎসা করা হয়।

লো-বার্থ ওয়েট বাচ্চাদের যথাযথ পুষ্টির জন্য নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার প্রয়োজন। এখানে শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমান পুষ্টি দিয়ে স্বাভাবিক ওজন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। শিশুকে ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড বা স্যালাইন লাগিয়ে নতুবা নাকের সাহায্যে প্রাথমিক ভাবে দুধ দেয়া হয়।  

বাসায় নিয়ে আসার পর যত্ন :

হাপাতালে যখন বাচ্চা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে এবং অন্যান্য শিশুর মত মায়ের বুকের দুধ খেতে শিখে এবং শিশুর ওজন বাড়তে থাকলে তখন তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। আলো বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় শিশুকে রাতে হবে।  ঘরের তাপমাত্রা যাতে স্বাভাবিক থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 

শিশুর শরীরের যত্ন:

কম ওজনের নবজাতক খুব সহজেই রোগাক্রান্ত হতে পারে। তাই এসব শিশুর ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন নিতে হয়। কম ওজনের বাচ্চারা হাইপোথারমিয়া  রোগে আক্রান্ত হয় খুব বেশী। সেজন্য শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে হবে।  সবসময় শিশুকে উষ্ণ পরিবেশে রাখতে হবে। তাপমাত্রা কমতে দেওয়া যাবে না। পরিষ্কার হাতে শিশুকে ধরতে হবে। শিশুর পরিধানের কাপড়ও পরিষ্কার রাখতে হবে। শ্বাস নিতে কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে মুখের ভেতরের লালা এবং নাকের সর্দি পরিষ্কার করে দিতে হবে।  শিশুকে পরিষ্কার তোয়ালে কুসুম কুসুম গরম জলে ভিজিয়ে এবং পরবর্তীতে তোয়ালে থেকে পানি ঝরিয়ে শিশুর সারা শরীর মুছে দিলে সে আরাম পাবে ।  ভিজে তোয়ালে দিয়ে মুছার পর অবশ্যই  শিশুর শরীর শুকনো কাপড় দিয়ে মুছিয়ে পরিষ্কার জামা কাপড় পড়িয়ে দিতে হবে ।

.  শিশুর পুষ্টি

কম ওজনের শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য অবশ্যই প্রয়োজন। কম ওজনের শিশুর যথাযথ বৃদ্ধির জন্য জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই।  সবধরনের পুষ্টিগুন মায়ের দুধে বিদ্যমান। এছাড়াও, মায়ের দুধের পাশাপাশি তার জন্য মাল্টি ভিটামিন ও মিনারেলেরও প্রয়োজন হতে পারে যা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুকে দেয়া যেতে পারে। 

.  শিশুকে অভ্যাগতদের থেকে দূরে রাখা:

যেহেতু কম ওজনের বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাই বাচ্চাকে প্রতিবার স্পর্শ করার আগে ভাল ভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে এবং যথা সম্ভব কম লোকজন বাচ্চার দেখভাল করার জন্য রাখা উচিত। ঘরে কোন অতিথি এলে শিশুকে তার থেকে দূরে রাখতে সচেষ্ট থাকতে হবে। অন্যথায় নানারকম সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

৬. কেএমসি পদ্ধতিতে যত্ন

কম ওজনের নবজাতকের পরিচর্যা করার একটি বিশেষ পদ্ধতি হচ্ছে, ‘ক্যাঙারু মায়ের যত্ন’ সংক্ষেপে যাকে বলে কেএমসি। কম ওজনের নবজাতকের বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও জটিলতা এড়াতে শিশুকে এ পদ্ধতির মাধ্যমে যে কাজগুলো করা হয়:

  • নবজাতককে উষ্ণ পরিবেশে রাখা।
  • শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো।
  • রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করা।

এর সঙ্গে উপরি পাওনা হলো মা  শিশুর নিবিড় মানসিক বন্ধন তৈরি হওয়া। এত শিশু নিজেকে নিরাপদ মনে করে যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ সহজতর হয়। কেএমসি পদ্ধতির মূল অংশ হচ্ছে

§  ত্বকে ত্বক স্পর্শ।

§  শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো।

সফল কেএমসির জন্য  দুটো কাজ সঠিকভাবে করতে হবে। তাহলে শিশুর ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং তার  শারীরিক ও মানসিক বিকাশও দ্রুত ঘটবে। এ পদ্ধতিতে শিশু যেহেতু মায়ের বুকে সারাক্ষণ নিবিড়ভাবে থাকে, সেজন্য তার নবজাতকের শরীর সবসময় উষ্ণ থাকে। ফলে নিম্ন তাপমাত্রা ঘটার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

.  শিশুর সম্মুখে ধুমপান  এলকোহল মুক্ত থাকা

মনে রাখবেন সিগারেটের ধোঁয়া  এবং এলকোহলের তীব্র গন্ধ নবজাতক শিশুর জন্য বিপদজনক। কম ওজনের নবজাতকের জন্য তা মৃত্যুর কারণও হতে পারে। শিশুর সামনে ধুমপান , মদ্যপান বা ড্রাগ জাতীয় কিছু গ্রহণ করা একদমই উচিত নয়। এতে শিশুর শ্বাসকষ্ট এবং কানে ও বুকে নানারকম সংক্রমণ  হতে পারে।

পরিশিষ্ট:

কম ওজনের শিশুদের বিশেষ যত্নে মা বাবাকে কিধরণের ভূমিকা নিতে হবে সে বিষয়ে আপনি কি জ্ঞাত? কিভাবে কম ওজনের শিশু স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে? আপনি যদি হন সচেতন বাবা - মা তবে এসব প্রশ্নের উত্তর জানা একান্তই জরুরি। শিশুদের শারীরিক অবস্থা ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তিত হয়।  মা বাবার আন্তরিক যত্নসার্বক্ষণিক মনিটরিং এ ধরনের শিশুকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। প্র্রয়োজন মত একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে  সর্বদা যোগাযোগ রক্ষা করে চললে কম ওজনের নবজাতকের সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়। 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি