Loading..

ম্যাগাজিন

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ ০৬:০১ পূর্বাহ্ণ

পলাশীর বিপর্যয়ের পর অন্যসব কিছুর সাথে সাহিত্যেও মুসলমানরা নির্বাসিত হয়

বল বীর-

বল উন্নত মম শির!

শির নেহারী' আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর!

বল বীর-

বল মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি'

চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি'

ভূলোক দ্যূলোক গোলোক ভেদিয়া

খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া,

উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!

মম ললাটে রুদ্র ভগবান জ্বলে রাজ-রাজটীকা দীপ্ত জয়শ্রীর!

কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত কবিতা "বিদ্রোহী" আজকের দিনে প্রকাশিত হয় ! কবিতাটির শতবর্ষ পার হলো । ১৯২২ সালের ৬ জানুয়ারি সাপ্তাহিক বিজলি পত্রিকায় কবিতাটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ।

কাজী নজরুল ইসলামের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ১৩৩১ সালের ১৮ আশ্বিনের শনিবারের চিঠি-তে সজনী কান্ত দাস কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার প্যারডি লেখে:

আমি ব্যাঙ

লম্বা আমার ঠ্যাং

ভৈরব রঙসে বরষা আসিলে

ডাকি যে গ্যাঙোর গ্যাঙ

আমি ব্যাঙ!

আমি সাপ,আমি ব্যাঙেরে গিলিয়া খাই,

আমি বুক দিয়া হাঁটি ইঁদুর ছুঁচোর গর্তে ঢুকিয়া যাই।

কবি গোলাম মোস্তফা ‘বিদ্রোহী’ কবিতার জবাবে লিখেছিলেন ‘নিয়ন্ত্রিত’ কবিতাটি। তিনি অবশ্য এখানে কটাক্ষ না করে সংযত হবার উপদেশ দিয়েছেন ।

ও গো বীর!

সংযত কর, সংহত কর ‘উন্নত তব শির।

বিদ্রোহী? শুনে হাসি পায়!

বাঁধন-কারার কাঁদন কাদিয়া বিদ্রোহী হতে সাধ যায়?

সে কি সাজে রে পাগল সাজে তোর?

পলাশীর বিপর্যয়ের পর অন্যসব কিছুর সাথে সাহিত্যেও মুসলমানরা নির্বাসিত হয় । উনিশ শতকের শেষ প্রান্তে এসে দুজন মুসলমান সাহিত্যিকের আবির্ভাব হয় তাদের একজন গদ্যসাহিত্যে মীর মোশাররফ হোসেন আর কাব্য বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ।

আবদুল মওদুদ-মধ্যবিত্ত সমাজের বিকাশ:সংস্কৃতির রূপান্তর গ্রন্থে লিখেছেন:

কাজী নজরুলের আবির্ভাব বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক বৈপ্লবিক যুগের সূচনা করলো । নজরুল ইসলাম আত্মপ্রত্যয়ের কবি । নজরুলের আগে বাংলা সাহিত্যের আসরে বহু কৃতিবিদ্য মুসলমান সাহিত্যিক ও কবির আবির্ভাব ঘটেছে । কিন্তু তাঁদের সে সংকোচ-ভীরু পদক্ষেপ ছিল পরগৃহে অনাহুত ভাবে অনধিকার প্রবেশের মতো । তার দরুন তাঁরা নিজেদের ভাষায়,উপমায়,অলঙ্কারে ও রচনারীতিতে মুসলমানী নিশানা এমনভাবে বাঁচিয়ে চলতেন,যেন সে আমলের সংস্কৃততনয়া বাংলা ভাষার ধারক ও বাহকগণ সামান্যতম আঘ্রাণেও তাঁদের মুসলমান হিসাবে চিনতে না পারেন । নজরুল ইসলাম মুসলমান লেখকদের এই সংকোচ ও প্রথাদাসত্ব থেকে মুক্তি দান করেছেন । তিনি এরকম অসংকোচে ও অবলীলাক্রমে তাঁর কবিতার ছত্রে ছত্রে আরবী-ফারসী শব্দের ব্যবহার করেছেন যে,তাঁর মুনশীয়ানায় অবাক হতে হয় ।

নজরুল ইসলাম আরবী-ফারসী শব্দ ব্যবহার করে কেবল বাংলা ভাষার সম্পদ ও সৌন্দর্যই বাড়িয়ে তোলেননি,মুসলমানদের যে বাংলা-সাহিত্যে একটা নিজস্ব অধিকার আছে,আপন বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্য প্রকাশের গৌরবজ্জ্বল ক্ষেত্র আছে,সেই দাবীই তিনি সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন । এই দিক দিয়ে বিবেচনা করলে নজরুল ইসলাম মুসলমান বাংলা সাহিত্যেসেবী ও কবিদের মুক্তিদাতা ও পথপ্রদর্শক ।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি