Loading..

খবর-দার

০৪ মার্চ, ২০২৩ ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

সফলতার গল্প

         করোনা মহামারীর পর বিদ্যালয় খোলা হলে  যখন দেখলাম শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার অবস্থা বেহালদশা, বিদ্যালয় বন্ধ থাকার সুবাদে বিদ্যালয়ের আশে পাশে গড়ে উঠে ১টি নুরানি মাদ্রাসা, ১টি হাফেজিয়া মদ্রাসা,  ১টি মহিলা হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও একটি কিন্ডারগার্টেন; তার উপর আরও আছে ৩টি সরকারি স্কুল তখন আমরা শিক্ষকরা এই অবস্থায় হতাশ না হয়ে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করি।

         ১. প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ড্রেস আপ হবে অত্যন্ত উন্নতমানের; সেই জন্য আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের শতভাগ স্কুল ড্রেস এর পাশাপাশি টাই, আইডি কার্ড, ক্যাপ ও একই রকম সুয়েটারের ব্যবস্থা করি।

        ২. দৈনিক সমাবেশকে আনন্দদায়ক করতে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার, সমাবেশে বাড়তি হিসেবে অর্থসহ কোরআন তেলোয়াত করা, একটি হাদিস বলা ও সাউন্ড সিস্টেমের তালে তালে গান গাইতে গাইতে শরীর চর্চা করার ব্যবস্থা করি।

         ৩. প্রতিটা বাড়িতে গিয়ে শিশু জরিপ ও হোমভিজিট করার পাশা পাশি বিদ্যালয়ে ভর্তির উপর জোর দেওয়া হয়।

          ৪. দুর্বল শিক্ষার্থীদের উপর বিশেষ নজর দেয়ার ব্যবস্থা করি।

          ৫. বিদ্যালয়কে শিশুদের আনন্দাদয়ক করা যাতে বিদ্যালয়ে আসতে মন চায় যেতে নয় সেই ব্যবস্থা করি।

          ৬. অত্যন্ত যত্নের সাথে উপবৃত্তির তালিকা তৈরি করা।

           উপরের কার্যক্রমগুলো যখন শুরু করি তখন ক্রমেই ভর্তির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এই বিদ্যালয়ের একজন ছাত্র যখন বিদ্যালয়ে আসতে থাকে অন্যেরা তখন তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। নিয়মিত মা সমাবেশ ও মোবাইলে অভিভাকদের সাথে যোগাযোগও লেখা পড়ার ক্ষেত্রে চমৎকার ভুমিকা রাখে। ক্লাশরুম ল্যাংগুয়েজ ব্যবহারের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা ইংরেজিতে কথা বলে। লেসন প্লান, উপকরণের মাধ্যম্য পাঠ দেওয়ার ফলে শিখনফল অর্জিত হয় আশাতীত। সরকার প্লেইং এক্সসোসোরিজ দেয়ার ফলে বিদ্যালয় হয় পার্ক। নাম মাত্র মডেল স্কুল যেখানে ঢাকা- চটগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি আসা যাওয়ার সময় পুরানো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কাঁপে; যেই বিদ্যালয়ে বৃটিশ আমলে তৈরি করা  ঝুঁকিপূর্ণ আধা পাকা ভবনে ঝড় তুফানের দিনে ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে নিয়ে শিক্ষক বসে থাকে সেই বিদ্যালয়ের সুনাম আজ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। যেখানে জেলা এম্বাসেডরগণ করোনায় বিশেষ অবদান ও অন লাইন পারফর্মেন্সের জন্য প্রতিনিয়ত সমাবেশ মিটিং আর সংবর্ধিত হচ্ছে আর সেখানে আমরা নৈমিত্তিক ছুটি নেয়াই বন্ধ করে দেই। দিন শেষে দেখলাম আমি বা আমরাই সফল কারণ ঝরে পরা হার রোধে উপজেলা পর্যায়ে ২০২২ সালে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হয় এই বিদ্যালয়টি অর্থাৎ ফাল্গুনকরা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আর আমি মোঃ আলমগীর হোসেন হলাম চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক। এইখানে শেষ নয় প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ২০২২ এ ১৩জন অংশগ্রহণ করে ৭জন পায় ট্যালেন্টপুল বৃত্তি আর ৬ জন পায় সাধারণ বৃত্তি। অথচ সংবর্ধিতরা আজ তাদের বিদ্যালয়ের ফলাফল বলতেই লজ্জা পাচ্ছে। আর হুজুররা শুক্রবারে জুমার নামাজে খুৎবায় বেহেস্তের টিকিট বিক্রি করার পরও তাদের মাদ্রাসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম।