প্রভাষক
০৫ জুলাই, ২০২৩ ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ
ক্যাবল বা তার মাধ্যম (Wired Cable Medium)
ধরন: সাধারণ শিক্ষা
শ্রেণি: একাদশ
বিষয়: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
অধ্যায়: পঞ্চম অধ্যায়
ক্যাবল বা তার মাধ্যম (Wired Cable Mediam)
ডেটা আদান-প্রদানের জন্য প্রেরক ও প্রাপকের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের প্রয়োজন হয়। এই সংযোগকে চ্যানেল বা মাধ্যম বলে। এই মাধ্যম দুই ধরণের হতে পারে। যেমন:
·
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল (Twisted Pair Cable)
·
কো-এক্সিয়েল ক্যাবল (Co-axial Cable)
·
অপটিক্যাল ফাইবার বা ফাইবার অপটিক ক্যাবল (Fiber Optic Cable)
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল :
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের মধ্য দিয়ে তড়িৎ সিগন্যাল ট্রান্সমিট করার জন্য দুটি পরিবাহী কপার বা তামার তারকে একই অক্ষে পরস্পর সমভাবে পেঁচিয়ে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল তৈরি করা হয়। পেঁচানো তার দুটিকে পৃথক রাখার জন্য এদের মাঝে অপরিবাহী পদার্থ হিসেবে প্ল্যাস্টিকের আস্তরণ ব্যবহার করা হয়। তারদুটির মধ্যে একটি তথ্য প্রেরণে ব্যবহৃত হয় এবং অন্যটি গ্রাউন্ড রেফারেন্স।এই ধরনের ক্যাবলে সাধারণত মোট ৪ জোড়া তার ব্যবহার করা হয়। ৪ জোড়া তারের প্রতি জোড়ায় একটি কমন (সাদা) রঙের তার এবং একটি ভিন্ন রঙের (কমলা, সবুজ, নীল, বাদামী) তার থাকে। কালার কোডিংএর জন্য প্রতি জোড়ায় একটি সাদা ও অন্য একটি ভিন্ন রঙের তার থাকে। ক্রশটক কমানোর জন্য চার জোড়া তারে মিটার প্রতি টুইস্টের সংখ্যা ভিন্নতা থাকে।
টুইস্টেড
পেয়ার ক্যাবল পেঁচানোর :
সকল ট্রান্সমিশন শব্দ, ইন্টারফারেন্স এবং ক্রসটক দ্বারা প্রভাবিত হয়। তড়িৎ চৌম্বকীয় প্রভাব(EMI) ও রেডিও তরঙ্গের প্রভাব(RFI) দূর করার জন্য প্রতি জোড়া তারে প্রতি ইঞ্চিতে ৩টি পূর্ণ টুইস্ট বা প্যাচ থাকে। যখন তারগুলো প্যাচানো হয় তখন নয়েজ সিগন্যালের কিছু অংশ ডেটা সিগন্যালের দিকে থাকে এবং অন্য অংশগুলো বিপরীত দিকে থাকে। এইভাবে বিভিন্ন প্যাচের কারণে বাহ্যিক তরঙ্গগুলো বাতিল হয়। রিসিভার তথ্য পুনরুদ্ধারের জন্য দুটি তারের ভোল্টেজের মধ্যে পার্থক্য গণনা করে। এইভাবে নয়েজের বিরুদ্ধে সহজেই ডেটা ট্রান্সমিশন করা যায়।RJ45 কানেক্টর দিয়ে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের কানেকশন দেওয়া হয়।
শিল্ডের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল দুই প্রকার। যথাঃ
এসটিপি (Shielded Twisted Pair-STP):
শিল্ডেড টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলে ডেটাকে নয়েজ থেকে সুরক্ষার জন্য প্রতি জোড়া তার এলুমিনিয়াম ফয়েল ও প্রটেকটিভ কপার শিল্ডিং দ্বারা আবৃত থাকে।
ব্যান্ডউইথ
: ১৬ Mbps তবে ৫০০ Mbps হতে পারে
ট্রান্সমিশন ডিসটেন্স : ১০০ মিটার
ইউটিপি (Unshielded Twisted Pair-UTP)
আনশিল্ডেড টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলে ডেটাকে নয়েজ থেকে সুরক্ষার জন্য প্রতি জোড়া তার এলুমিনিয়াম ফয়েল ও প্রটেকটিভ কপার শিল্ডিং দ্বারা আবৃত থাকে না।
ব্যান্ডউইথ : ১০ Mbps
ট্রান্সমিশন ডিসটেন্স : ১৫৫ মিটার (রিপিটার ছাড়া)
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের সুবিধাসমূহ:
১।
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল দামে খুবই সস্তা এবং ইনস্টল করাও সহজ।
২।
অ্যানালগ এবং ডিজিটাল উভয় ডেটা ট্রান্সমিশনে এ ক্যাবল ব্যবহৃত হয়।
৩।
কম দূরত্বে যোগাযোগ করার জন্য এই ক্যাবল অত্যাধিক ব্যবহৃত হয়।
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের অসুবিধাসমূহ:
১। এ ধরনের ক্যাবল ব্যবহার করে ১০০ মিটারের বেশি দূরত্বে ডেটা প্রেরণ করা কষ্টকর।
২। ট্রান্সমিশন লস অনেক বেশি হয়ে থাকে।
৩। তারের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধির সাথে ডেটা স্থানান্তরের হার হ্রাস পায়।
টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের ব্যবহার:
১। টেলিফোন লাইনে এই ক্যাবল ব্যবহৃত হয়।
২। LAN এর ক্ষেত্রে অধিক ব্যবহৃত হয়।
কো-এক্সিয়েল ক্যাবল :
দুটি তড়িৎ পরিবাহী ও দুটি তড়িৎ অপরিবাহী স্তরের সাহায্যে কো-এক্সিয়াল ক্যাবল তৈরি করা হয়। এই ক্যাবলে দুটি তড়িৎ পরিবাহী স্তর একই অক্ষ বরাবর থাকে বলে একে কো-এক্সিয়াল ক্যাবল বলা হয়। ভেতরের তড়িৎ পরিবাহী তারটি কপার ওয়্যার যার মধ্য দিয়ে তড়িৎ সিগন্যাল প্রবাহিত হয়। ভেতরের পরিবাহী ও বাইরের পরিবাহী তারকে পৃথক রাখার জন্য এদের মাঝখানে অন্তরক পদার্থ হিসেবে ফোমের ইন্সুলেশন ব্যবহার করা হয় এবং বাইরের পরিবাহী তারকে প্লাস্টিকের জ্যাকেট দ্বারা ডেকে রাখা হয়।
কো-এক্সিয়েল ক্যাবলের বিভিন্ন অংশ
কপার ওয়্যার: এর মধ্য দিয়ে ডেটা প্রবাহিত হয়।
ফোমের ইনসুলেশন: কপার ওয়্যার যাতে বেঁকে বা কুঁচকে না যায় সেজন্য ব্যবহৃত হয়।
কপার মেস: বাইরের তাপ, চাপ ও EMI থেকে কপার ওয়্যারকে রক্ষা করে যাতে নির্বিঘ্নে ডেটা চলাচল করতে পারে অর্থাৎ ইহা ভিতরের তারে প্রেরিত উপাত্ত সিগনালের ব্যাতিচার রোধ করে।
আউট সাইড ইনসুলেশন: তার যাতে বাহিরের আঘাতে নষ্ট না হয়ে যায় সেজন্য প্ল্যাস্টিকের জ্যাকেট ব্যবহৃত হয়।সাধারনত BNC বা BNC-T কানেক্টর দিয়ে এই ধরণের ক্যাবল কানেকশন দেওয়া হয়।
কো-এক্সিয়েল ক্যাবল দুই প্রকার। যথাঃ
থিননেট(thinnet):
পুরুত্ব
: ০.২৫ ইঞ্চি
ট্রান্সমিশন ডিসটেন্স
: ১৮৫ মিটার (রিপিটার ছাড়া)
ট্রান্সমিশন স্পীড
: ১০Mbps
থিকনেট(thicknet):
পুরুত্ব
: ০.৫ ইঞ্চি
ট্রান্সমিশন ডিসটেন্স
: 500 মিটার(রিপিটার ছাড়া)
ট্রান্সমিশন স্পীড
: ১০Mbps
কো-এক্সিয়াল ক্যাবেলের সুবিধাসমূহ:
১। এই ধরনের ক্যাবলের ট্রান্সমিশন লস অপেক্ষাকৃত কম হয়।
২। ডেটা স্থানান্তরের গতি বেশি।
৩। অ্যানালগ এবং ডিজিটাল উভয় ডেটা ট্রান্সমিশনে এ ক্যাবল ব্যবহৃত হয়।
৪। টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল অপেক্ষা এ ক্যাবলের মাধ্যমে অধিক দূরত্বে(1km) তথ্য পাঠানো যায়।
৫। এটি ফাইবার অপটিক ক্যাবল অপেক্ষা কম ব্যয়বহুল এবং সহজে বহনযোগ্য।
কো-এক্সিয়াল ক্যাবলের অসুবিধাসমূহ:
১। ডেটা ট্রান্সফার রেট নির্ভর করে তারের দৈর্ঘ্যের উপর।
২। কো-এক্সিয়াল ক্যাবল টুইস্টেড পেয়ার ক্যাবল অপেক্ষা কিছুটা ব্যয়বহুল।
কো-এক্সিয়াল
ক্যাবলের ব্যবহারঃ
·
টেলিভিশন নেটওয়ার্ক
·
ডিশ টিভি বা ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক
·
সিসি টিভি নেটওয়ার্ক
·
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে বহুল ব্যবহৃত হয়।
ফাইবার অপটিক ক্যাবল :
ফাইবার অপটিক ক্যাবল কতোগুলো অপটিক্যাল ফাইবারের সমন্বয়ে তৈরি। ফাইবার হ’ল ট্রান্সমিশন ক্যাবল প্রযুক্তির নতুনতম রূপ। ফাইবারগুলো এক ধরনের ডাই-ইলেকট্রিক (অন্তরক) পদার্থ বা সিলিকা বা মাল্টি কম্পোনেন্ট কাঁচ দ্বারা তৈরি, যা রাসায়নিকভাবে নিরপেক্ষ হয় এবং আলো পরিবহনে সক্ষম। অপটিক্যাল ফাইবারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি তড়িৎ সিগন্যালের পরিবর্তে আলোক বা লাইট সিগন্যাল ট্রান্সমিট করে। পৃথকভাবে প্রতিটি ফাইবার প্লাস্টিকের স্তর দ্বারা আবৃত থাকে এবং একটি প্রতিরক্ষামূলক টিউবে থাকে যা বাহ্যিক হস্তক্ষেপের জন্য অত্যন্ত প্রতিরোধী করে তোলে।
অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে আলোর পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে অতি দ্রুত ডেটা প্রেরণ করা যায়। অপটিক্যাল ফাইবার কাঁচের তন্তু হওয়ায় তড়িৎ চৌম্বক প্রভাব হতে মুক্ত। বর্তমানে যেসব অপটিক্যাল ফাইবার পাওয়া যায় তার ডেটা ট্রান্সমিশন হার ১০০ mbps থেকে ২ gbps।SC-কানেক্টর, ST-কানেক্টর, MT-RJ-কানেক্টর এর সাহায্যে ডিভাইসের সাথে কানেকশন দেওয়া হয়।
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের
বিভিন্ন অংশ:
কোর: ভিতরের ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ যা প্রধানত সিলিকা, প্লাস্টিক ও অন্যান্য উপাদানের মিশ্রনে তৈরি হয়। যার ব্যাস ৮-১০০ মাইক্রন হয়ে থাকে। কোরের মধ্য দিয়ে লাইট সিগন্যাল প্রবাহিত হয়। কোরের ক্ষেত্র যত বেশি হয় তত বেশি লাইট সিগন্যাল প্রবাহিত হয়।
ক্ল্যাডিং: ক্ল্যাডিং কাচের ঘনক স্তর হিসাবে পরিচিত। কোরকে আবদ্ধ করে রাখা বাইরের ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থ যা আলোর প্রতিফলন করতে পারে। ক্ল্যাডিং এর প্রধান কাজ হ’ল কোর ইন্টারফেসে নিম্ন প্রতিসরাঙ্ক সরবরাহ করা, যাতে কোরের প্রতিসরাঙ্ক ক্ল্যাডিংয়ের প্রতিসরাংকের তুলনায় বেশি হয়। ফলে কোরের মধ্য দিয়ে পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের মাধ্যমে লাইট সিগন্যাল ট্রান্সফার হয়।
বাফারঃ তন্তুকে বাইরের পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
জ্যাকেট: এক বা একাধিক তন্তুকে ক্যাবলের মধ্যে ধারণ করে।
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের প্রকারভেদঃ
কোরের গঠন অনুসারে ফাইবার অপটিক ক্যাবল দু ধরণের। যথাঃ
সিঙ্গেলমোড ফাইবার অপটিক ক্যাবলঃ এই ক্যাবলে একসাথে কেবল একটি আলোক সংকেত বা লাইট সিগন্যাল প্রেরণের পথ থাকে। কোরের ব্যাস ৮-১০ মাইক্রোন হয়ে থাকে। দীর্ঘ দূরত্বে ডেটা পাঠানোর ক্ষেত্রে উপযোগী। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও টেলিফোন কোম্পানিতে ব্যবহৃত হয়।
মাল্টিমোড ফাইবার অপটিক ক্যাবলঃ এই ক্যাবলে একসাথে একাধিক আলোক সংকেত বা লাইট সিগন্যাল প্রেরণের পথ থাকে। কোরের ব্যাস ৫০-১০০ মাইক্রোন হয়ে থাকে। সল্প দূরত্বে ডেটা পাঠানোর ক্ষেত্রে উপযোগী। লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কে ডেটা এবং অডিও/ভিডিও প্রেরণে ব্যবহৃত হয়।মাল্টিমোড ফাইবার অপটিক ক্যাবল আবার দুই প্রকার। যথাঃ
স্টেপ ইনডেক্স মাল্টিমোডঃ কোরের প্রতিসরাঙ্ক সর্বত্র সমান হয়।
গ্রেডেড ইনডেক্স মাল্টিমোডঃ কোরের প্রতিসরাঙ্ক কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে কমতে থাকে।
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের বৈশিষ্ট্য:
·
এটি ইলেক্ট্রিক্যাল বা তড়িৎ সিগন্যালের পরিবর্তে আলোক বা লাইট সিগন্যাল ট্রান্সমিট করে।
·
রাসায়নিক সুস্থিরতা বা নিষ্ক্রিয়তা।
·
এতে আলোকের পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলন পদ্ধতিতে ডেটা উৎস থেকে গন্তব্যে গমন করে।
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সুবিধা:
১। অধিক দূরত্বে উচ্চ গতিতে ডেটা ট্রান্সমিট করতে পারে।
২। ওজনে হালকা ও সহজে পরিবহনযোগ্য।
৩। শক্তির অপচয় কম।
৪। বিদ্যুৎ চৌম্বক প্রভাব(EMI) হতে মুক্ত।
৫। পরিবেশের তাপ-চাপ ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
৬। ডেটা সংরক্ষণের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সবচেয়ে বেশি।
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের অসুবিধা:
১। ফাইবার অপটিক ক্যাবলকে U আকারে বাঁকানো যায় না।
২। ফাইবার অপটিক ক্যাবল অত্যন্ত দামি।
৩। ফাইবার অপটিক ক্যাবল ইনস্টল করা অন্যান্য ক্যাবলের চেয়ে তুলনামূলক কঠিন।
ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ব্যবহার:
1.
নেটওয়ার্কের ব্যাকবোন হিসেবে ফাইবার অপটিক ক্যাবল অধিক ব্যবহৃত হয়।
2.
বর্তমানে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে আলোকসজ্জা, সেন্সর ও ছবি সম্পাদনের কাজ করা হয়।
3.
সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে এক দেশের সাথে অন্য দেশের বা এক মহাদেশের সাথে অন্য মহাদেশের সংযোগে ব্যবহৃত হয়।