
সহকারী শিক্ষক

২৫ জুলাই, ২০২৩ ০৭:৪৯ অপরাহ্ণ
সহকারী শিক্ষক
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব অনেক আগে থেকেই। প্রায় প্রতি বর্ষাতেই কমবেশি ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। এই শতাব্দীর শুরুতে ২০০০ সালে ডেঙ্গু জ্বর বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে এবং তা সবার নজরে আসে। মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা, আর দ্রুত কিছু মৃত্যু সাধারণ জনগণের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ডেঙ্গু জ্বর বলতে অনেকেই নিশ্চিত মৃত্যু মনে করতে থাকেন। শুরু হয় রক্ত এবং প্লাটিলেট দেয়া নিয়ে দৌড়াদৌড়ি আর এন্টিবডি পরীক্ষার হিড়িক।তবে একদিকে চিকিৎসকদের যেমন অভিজ্ঞতা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার দক্ষতা বেড়েছে, তেমনি রোগী এবং জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভীতিকর অবস্থারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় রক্তসঞ্চালন এবং প্লাটিলেটের ব্যবহার কমেছে। তবে জনমনে কিছুটা আতঙ্ক এবং ভুল ধারণা এখনো রয়ে গেছে, যা দূর করা দরকার।# ডেঙ্গু জ্বরে কি মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে?
* অনেকে এখনো মনে করেন, ডেঙ্গু জ্বর মাত্রই খুব মারাত্মক রোগ এবং ডেঙ্গু জ্বর হলেই প্রায়ই রোগী মারা যায়- এই ধারণা একেবারেই ভুল। সময়মতো চিকিৎসা করা হলে সাধারণ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত প্রায় ১০০ ভাগ রোগীই ভালো হয়ে যান। যদিও বলা হয় ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে মৃত্যুহার ৫ থেকে ১০ ভাগ, কিন্তু বাস্তবে, নিজ অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এই হার ১ ভাগেরও কম।মৃত্যুঝুঁকি তাদের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে যারা অবহেলা করে সময়মতো ডাক্তারের শরণাপন্ন হন না। তাই ডেঙ্গু নিয়ে অযথা ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।
# জ্বর কমে গেলে কি বিপদ কেটে গেল?
* ডেঙ্গুতে জ্বর সাধারণত ৫ থেকে ৬ দিন থাকে এবং তারপর জ্বর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। তবে কখনো কখনো ২ বা ৩ দিন পর আবার জ্বর আসতে পারে। জ্বর কমে গেলে বা ভালো হয়ে গেলে অনেক রোগী এমনকি অনেক ডাক্তারও মনে করেন, রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু জ্বরে মারাত্মক সমস্যা হওয়ার সময় আসলে এটাই। এ সময় প্লাটিলেট কাউন্ট কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাওয়ার পরবর্তী কিছুদিনকে তাই বলা হয় ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’। এ সময়টাতেই সবারই সচেতন থাকা এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। অন্তত রক্তের সিবিসি এবং প্লাটিলেট পরীক্ষা করা উচিত, কারণ এখন ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অনেক বেশি।# ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত মা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন কি?
* ডেঙ্গু জ্বর ভাইরাসবাহিত, মশার কামড়ের মাধ্যমে হয়ে থাকে। মায়ের বুকের দুধে এই ভাইরাস থাকে না। কাজেই আক্রান্ত অবস্থায় মা বাচ্চাকে তার বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।
# ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ? ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে একত্রে থাকা যাবে কি?
* ডেঙ্গু কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। কাজেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে এক বিছানায় শোয়া, একসঙ্গে থাকা খাওয়া বা রোগীর ব্যবহার্য কোনো জিনিস ব্যবহার করায় অন্যদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে সামাজিক মেলামেশায় কোনো বাধা নেই।
# ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু কি বাতাসে ছড়ায়?
* ডেঙ্গু জ্বর বাতাসে ছড়ায় না, শুধুমাত্র ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার কামড়ে যেকোনো ব্যক্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন।
# এডিস ছাড়া অন্য কোনো মশার কামড়ে কি ডেঙ্গু ছড়ায়?
* না, ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগীকে অন্য কোনো মশা কামড়ালে তার মুখে ভাইরাসটি কিছুক্ষণ থাকে, যদি ওই মশাটি সঙ্গে সঙ্গে অন্য কোনো ব্যক্তিকে কামড়ায় তাহলে ডেঙ্গু হতে পারে। এ ছাড়া অন্য কোনো মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়ায় না।
# ডেঙ্গু জ্বরের সময় কি অপারেশন করানো যাবে?
* একেবারে অপরিহার্য না হলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় অপারেশন না করানোই ভালো, এতে সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে অনিয়ন্ত্রণযোগ্য রক্তপাত, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। অনেক সময় রোগীর পেটের ব্যথা হতে পারে যা এপেন্ডিসাইটিস বলে শনাক্ত করে জরুরি অপারেশন করা হয়। কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে এ সময় এই অপারেশন না করাই ভালো।
# ডেঙ্গু জ্বরে কি কি পরীক্ষা কখন করা উচিত?
* সাধারণত বেশি টেস্ট করার প্রয়োজন হয় না। সিবিসি এবং প্লাটিলেট কাউন্ট করলেই যথেষ্ট। ১-২ দিনের জ্বরে ডেঙ্গু এনএস-১ এন্টিজেন এবং ৪ থেকে ৬ দিন পর এন্টিডেঙ্গু এন্টিবডি করা যেতে পারে। প্লাটিলেট কাউন্ট ৪ বা ৫ দিন পর কমতে শুরু করে, তাই জ্বর শুরুর ৪-৫ দিন পর রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। আবার অনেকেই দিনে দুই তিনবার, এমনকি একই সঙ্গে একাধিক ল্যাবরেটরি থেকে প্লাটিলেট কাউন্ট করে থাকেন, যা অপ্রয়োজনীয়। মনে রাখতে হবে, প্লাটিলেট কাউন্ট ৪ বা ৫ দিন পর থেকে কমতে শুরু করে, তাই জ্বর শুরুর ৪ বা ৫ দিন পর রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। এর আগে পরীক্ষা করলে তা স্বাভাবিক থাকে বিধায় রোগ নির্ণয়ে যেমন বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়, তেমনি অপ্রয়োজনে পয়সা নষ্ট হয়। দেখা যায়, বিভিন্ন ল্যাবরেটরি থেকে বিভিন্ন রকমের রিপোর্ট আসছে, এতে কোনো রিপোর্ট সঠিক তা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। ডাক্তার বা রোগী বিভ্রান্তিতে পড়েন। তাছাড়া এতে অযথা রোগীর অর্থের অপচয় ঘটে।