Loading..

মুজিব শতবর্ষ

০৪ আগস্ট, ২০২৩ ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ

১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় ফিরে আসার পর ১৯৪৯ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায়

১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় ফিরে আসার পর ১৯৪৯ সালে কারাগারে থাকা অবস্থায় পূর্ববাংলার প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক দল আওয়ামী মুসলিম লীগের (পরে ১৯৫৫ সালের কনভেনশনে সংগঠনের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেওয়া হয়) অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্ররাজনীতির সঙ্গেই সম্পৃক্ত ছিলেন। বলা বাহুল্য, ইতোমধ্যেই তিনি মুসলিম লীগ সরকারের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের গঠনের সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পক্ষে আন্দোলনে নেমে গ্রেপ্তার হন এবং জেলে অবস্থান করছিলেন। আওয়ামী মুসলিম লীগের রাজনীতিতে তিনি ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন এবং গণমানুষের সঙ্গে তার সংযোগ সুদৃঢ় হতে থাকে। কারণ তিনিও অন্তর্গতভাবে বাংলার গণমানুষের বিশেষ করে কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের মতো দরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং তাদের সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বেড়াতেন। কিন্তু ক্ষমতা তো পাকিস্তানি শাসকদের হাতে। কাজেই তিনি অন্য পথ ধরলেন। তিনি ভাবলেন, গণমানুষের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে না পারলে এবং অধিকার আদায়ের এ সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে তাদের সম্পৃক্ত করতে না পারলে কোনোদিনই প্রকৃতপক্ষে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। এ ধারণাটি তিনি আত্মস্থ করেছিলেন আরেক শ্রেষ্ঠ বাঙালি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে থেকে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘...কী করলে এদের মনের উদ্বোধন হয়, আপনাদের দায়িত্ব এরা আপনি নিতে পারে। আমরা যদি বাইরে থেকে সাহায্য করি তাতে এদের অনিষ্টই হবে। কী করলে এদের মধ্যে জীবন সঞ্চার হবে, এ প্রশ্নই তখন আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল।’ বঙ্গবন্ধুও সেই পথেই অগ্রসর হলেন। নির্যাতিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মনে নিজেদের ভালো করার, অধিকার আদায় করার স্পৃহা জাগিয়ে তুলতে কাজ শুরু করলেন, পাশাপাশি তাদের জীবনমান উন্নয়নের সামগ্রিক পরিকল্পনাও তৈরি করলেন। বাংলার নিপীড়িত কৃষক-শ্রমিক-দিনমজুরসহ সর্বস্তরের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে জাগিয়ে তোলার এবং তাদের পশ্চিম পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত করার প্রথম সুযোগ আসে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে। এ নির্বাচনের প্রচারণায় তিনি গোটা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল চষে বেড়ান এবং মুসলিম লীগ সরকারের প্রকৃত চেহারা তুলে ধরেন। বাংলার গণমানুষ তাদের প্রকৃত বন্ধুকে চিনতে ভুল করেনি। কারণ ২১ দফাভিত্তিক যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনী মেনিফেস্টো খুব সতর্কভাবে তৈরি করা হয় পূর্ববাংলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অনুকূলে। ২১ দফার ২, ৩, ৪, ৭, ও ৮ নং দফায় প্রত্যক্ষভাবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা উল্লেখ করা হয় এবং বাকি ধারাগুলোও এমনভাবে প্রণয়ন করা হয় যেন সেগুলোও পরোক্ষভাবে তাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ১৯৬৬ সালে প্রণীত ৬ দফা প্রণয়ন করা হয়। ৬ দফা ছিল শোষণ ও বৈষম্যমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা রক্ষাকবচ। ৬ দফায়ও তাদের বাঁচার দাবি হিসাবে প্রতিফলিত হয়। ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন?’ এ ঐতিহাসিক পোস্টারটি সেদিন প্রমাণ করেছিল বঙ্গবন্ধুর প্রিয় গণমানুষ তথা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অবস্থা কতটা সূচনীয় হয়ে উঠেছিল। ১৯৫৪ সালে ২১ দফার ভিত্তিতে যেমন পূর্ববাংলার গণমানুষ বিপুলভাবে সমর্থন দেয় তেমনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও বাংলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিপুলভাবে সাড়া দেয় ৬ দফার মর্ম উপলব্ধি করে।

আরো দেখুন