Loading..

মুজিব শতবর্ষ

০৪ আগস্ট, ২০২৩ ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ

কৃষির পুনর্গঠন ও সংস্কার

ক. কৃষির পুনর্গঠন ও সংস্কার : এই একটি ক্ষেত্রে যে কী পরিমাণ ক্ষতি সাধন হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় তার সঠিক পরিসংখ্যান দেওয়া দুরূহ। পাক হানাদার বাহিনী ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়, হালের গরু জবাই করে খায়, মজুত গোলার ফসল ও মাঠের ফসল পুড়িয়ে দেয়; সার নেই, বীজ নেই, সেচের পাম্প নেই। কলকারখানা বন্ধ, মেশিনপত্রসহ সব অবকাঠামো ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। কৃষক চাষে হাত দিতে পারছে না, শ্রমিক কাজে যেতে পারছে না, খাদ্যশস্যের ব্যাপক ঘাটতি, কলকারখানায় নিত্যপণ্যে উৎপাদন থেমে রয়েছে-আক্ষরিক অর্থেই কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি অর্থাৎ বিপুল সংখ্যক প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাথায় দিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর ছিল না সেদিন। বঙ্গবন্ধু দেশ গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করে একদিকে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের রক্ষাকবচ সংবিধান রচনার উদ্যোগ নিলেন, অন্যদিকে প্রথমেই নজর দিলেন কৃষি ও শিল্পকারখানা পুনর্গঠনে, যাতে দেশের বৃহৎ দরিদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্থবির জীবন ক্রমে সচল হতে পারে। কারণ, আজীবন তিনি রাজনীতি করেছেন এদের জন্যই। তার প্রথম লক্ষ্য ছিল দেশে প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন করা। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে না পারলে অন্যান্য খাতে উন্নয়ন সম্ভব নয়। সে জন্য প্রয়োজন কৃষি উপকরণ নিশ্চিত করা এবং কৃষির আধুনিকীকরণ। প্রথমেই তিনি স্বাধীনতা পূর্ববর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে গণমানুষের কাছে দেয়া অঙ্গীকারগুলো তিনি পূরণ করলেন : ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ, পরিবার প্রতি সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা পর্যন্ত জমির সিলিং নির্ধারণ, পাকিস্তানিদের করা ১০ লাখ সার্টিফিকেট মামলা খারিজ করলেন। তারপর সারা দেশে হ্রাসকৃত মূল্যে ৪০ হাজার লো-লিফট পাওয়ার পাম্প, ২৯০০ গভীর নলকূপ, ৩০০০ অগভীর নলকূপের ব্যবস্থা করলেন; সাধারণ বীজের পাশাপাশি অধিক ফলনশীল ধানবীজ, পাটবীজ, গমবীজ বিতরণ করা হলো; বিশ্ববাজারের চেয়ে অনেক কম মূল্যে সার সরবরাহ করা হলো; উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে দিলেন; কৃষকদের মধ্যে ১ লাখ হালের বলদ ও ৩০ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করা হলো; কৃষি গবেষণায় গুরুত্ব দিলেন; কৃষিবিষয়ক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনে উদ্যোগী হন, গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প চালুর ব্যবস্থা করলেন; খ্যদ্য মজুতের জন্য ১০০টি গুদাম নির্মাণ করলেন; কৃষককে তার কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে ‘বঙ্গবন্ধু পুরস্কার’ নামে একটি পুরস্কার প্রবর্তন করলেন। এ পর্যায়ে ২২ লাখ কৃষক পরিবারকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্বাসন করতে হয়েছিল, যাদের কোনো কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। কৃষকের প্রতি তিনি এতটাই মনোযোগী ছিলেন যে, স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পেতে কিংবা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে সহযোগিতা চাইতে যে দেশেই সফর করেছেন সেখানেই তিনি কৃষির আধুনিক উপকরণ পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সবচেয়ে বেশি।

আরো দেখুন