Loading..

মুজিব শতবর্ষ

০৪ আগস্ট, ২০২৩ ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অকৃত্রিম বন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান@

খ. কলকারখানা জাতীয়করণ: প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ কলকারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। পাকিস্তান আমলে পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পপতিরা পূর্ববাংলার মেহনতি দরিদ্র শ্রমিকদের নামমাত্র পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে নিত। সে ধারাবাহিকতা যাতে চলতে না পারে সে জন্য তিনি বৃহৎ ও মাঝারি মাত্রার শিল্পকারখানা (ব্যাংক বিমা) জাতীয়করণ করেন। যাতে শ্রমিক তার ন্যায্য মজুরি পায় এবং কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তা ছাড়া কৃষি খাতে উৎপাদিত শিল্প পণ্যের ব্যবহার যাতে নিশ্চিত হয় সেটাও বিবেচনায় ছিল। কৃষি উৎপাদন ও কলকারখানার উৎপাদন সমান্তরাল না হলে উন্নয়নের গতিধারা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। অবশ্য কলকারখানা, ব্যাংক-বিমা জাতীয়করণের পরিকল্পনা তিনি পাকিস্তান আমলেই করেছিলেন, সে লক্ষ্যে যখনই সুযোগ পেয়েছেন তিনি শিল্প প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠনগুলোর জাতীয়করণের দাবি তুলে ধরতেন। ৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনী মেনিফেস্টোতেও জাতীকরণের কর্মসূচি ছিল, ৬-দফাতে ছিল, ৭০ নির্বাচনে ছাত্রদের ১১ দফায়ও ছিল। কাজেই জাতীয়করণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে তিনি বিলম্ব করেননি।

যুগপৎ এ কর্মসূচির কারণে খুব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের উৎপাদন ব্যবস্থায় গতি সঞ্চারিত হয় এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার সুফল ভোগ করতে শুরু করে। ক্রমে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে, বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত হতে থাকে। উন্নত বীজ, আধুনিক যন্ত্রপাতি আমদানি ও ব্যবহারের ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, শ্রমিক নতুন উদ্যমে কাজ করে কলকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি করতে থাকে, পাশাপাশি তিনি বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসাসহ সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যখন আনুপাতিক একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন তখনই নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রায় সপরিবারে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আজীবন সংগ্রাম করে সোনার বাংলা গড়ার যে মাইলফলক তিনি গড়েছিলেন তার সুফল তিনি চোখে দেখে যেতে পারলেন না। ৭৫-এর ট্র্যাজেডির পর দেশে যে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য উৎপাদিত হয় তার সবটুকু অবদান ছিল বঙ্গবন্ধুর নিরলস পরিশ্রম ও যুগোপযোগী পদক্ষেপের ফসল।

আজকের বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। করোনার মতো মহামারি, বিশ্বব্যাপী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ জাতীয় সংকট, যুদ্ধ, ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষের কেউ অনাহারে থাকে না। বাংলাদেশ নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করেছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেগা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, অনেকই সমাপ্তির পথে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের আবদ্ধ গণ্ডি পেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে এগিয়ে চলছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ অচিরেই শক্তভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এ ধারাটি অব্যাহত রাখতে হলে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা দরকার, যা একমাত্র বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভব। বঙ্গবন্ধুর পরে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনি যে অবিকল্প নেতৃত্ব সেটা তিনি গত একযুগে শাসন ক্ষমতায় থেকে প্রমাণ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের শরীরে যে অজেয় অগ্রগামী প্রাণশক্তি সঞ্চার করতে পেরেছে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন তার দেশের মেহনতি মানুষ শুধু উন্নয়নের সুবিধা ভোগ করে আত্মতৃপ্তিতে না থেকে উন্নয়নের অংশীদার হবে সঞ্চালক ও প্রভাবক হিসাবে, সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। বাঙালির দুর্ভাগ্য যে, বঙ্গবন্ধুর হাতে তার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নটি সফল হতে দেওয়া হয়নি, যাপিত জীবনের বাঁকে বাঁকে এ দেশের গণমানুষকে সেই আক্ষেপ করতে হয়। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট পিতৃহন্তার মতো জঘন্য ঘটনার অবতারণা না হতো, তাহলে বাংলাদেশ অনেক আগেই উন্নয়ন-সূচকের সব ধাপগুলো অতিক্রম করে রূপে রূপে অপরূপা সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা অপরূপ উন্নত দেশে পরিণত হতে পারত।

লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অগ্রণী ব্যাংক

আরো দেখুন