Loading..

মুজিব শতবর্ষ

০৪ আগস্ট, ২০২৩ ১১:২১ পূর্বাহ্ণ

ইতিহাসের অনন্য নেতা শেখ মুজিবুর রহমান 4

ভয়-লোভহীন ব্যক্তিত্ব : বাংলার বড় বড় নেতার মধ্যে দ্বিচারিতা বাঙালির শোষণ মুক্তির পথকে দীর্ঘায়িত করেছে। কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা, ফারসি ভাষা শিক্ষা, ওই কায়দায় পাগড়ি পরা ইত্যাদি নানা চেষ্টায় বাঙালি নেতারাই ঔপনিবেশিক শাসনের ভিত্তিকে দৃঢ় করেছেন। বঙ্গীয় রেনেসাঁ পুরুষরা কেউই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির পূর্ণ প্রচেষ্টা চালাননি। মুক্তিযুদ্ধকে বলা হয় বাঙালির তৃতীয় জাগরণ। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তিই মুক্তিযুদ্ধের মূল ভিত্তি। বাঙালির এ মুক্তির পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। উল্লেখ্য, তখন বিশ্ব ছিল দু’ব্লকে বিভক্ত- সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী। উপনিবেশ ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলো স্বাধিকারের আন্দোলন শুরু করলে সমাজতান্ত্রিক ব্লক তাদের সহযোগিতা করে। এর পেছনে সঙ্গত কারণ ছিল স্বাধীনতাকামী রাষ্ট্রগুলোর সমাজতান্ত্রিক মনোভাবাপন্নতা। অপরদিকে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র তখন ভূমি দখলভিত্তিক প্রচলিত সাম্রাজ্যবাদের ধরন পাল্টে বাজার ও মস্তিষ্ক দখল করে সাম্রাজ্যবাদের এক অভিনব রূপ প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত। এ অবস্থায় বাংলাদেশের মতো একটি ক্ষুদ্র দেশের পক্ষে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ মোটেও সহজসাধ্য ছিল না।

এমন স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির মুক্তির হাল ধরেন শক্ত হাতে। বঙ্গবন্ধুকে একই জেলে বেশি দিন আটকে রাখতেও ভয় পেত শাসকগোষ্ঠী। তিনি যে কতটা নির্ভয় ও নির্লোভ ছিলেন তা একটি ঘটনা থেকেই স্পষ্ট হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন ও নেতৃত্ব দেয়ায় শেখ মুজিবসহ কয়েকজন ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। শেখ মুজিব ছাড়া সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তে মুচলেকা দিয়ে ছাত্রত্ব বহাল রাখেন। শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অন্যায় সিদ্ধান্তে মুচলেকা দিতে অস্বীকার করেন। ফলে ওই সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনের অবসান ঘটে। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তিনি বলে যান, ‘আমি আবার একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসবই, তবে হয়তো ছাত্র হিসেবে নয়।’ বাবা শেখ লুৎফর রহমানের পুত্রকে আইনজীবী বানানোর আশায় গুড়ে বালি পড়ে। তবু শেখ মুজিবের চিত্ত একবিন্দুও টলেনি। তিনি ব্যস্ত ছিলেন বাঙালির মুক্তিসংগ্রামকে সংগঠিত করতে, সঠিক পথে পরিচালিত করতে। মিথ্যা মামলা সাজিয়ে শেখ মুজিবকে হত্যার চেষ্টাও কম করা হয়নি। পাকিস্তানের কারাগারে আটকে রেখে কবর খোঁড়া হয়েছে- তবুও বিচলিত হননি শেখ মুজিব। বাঙালির মুক্তিই ছিল তার একমাত্র ধ্যান ও জ্ঞান।

আরো দেখুন