সহকারী শিক্ষক
২৮ আগস্ট, ২০২৩ ০৮:২৫ অপরাহ্ণ
কালার কোড সম্পর্কে
দুটি কালার মডেল: 'আরজিবি' ও 'সিএমওয়াইকে'
কল্পনা করুন আপনি নিজের বাসায় বা অফিসে বসে কাজ করছেন। তাকিয়ে আছেন কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে। নিজের নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি লোগো ডিজাইন করেছেন আপনি।
লোগো যাতে নিখুঁত হয়, সেজন্য আপনি ব্যবসার সঙ্গে মানানসই রঙগুলিই বেছে নিয়েছেন।
কিন্তু লোগোটি প্রিন্ট করার পর দেখলেন যে, এর রঙ সব বদলে গেছে। কম্পিউটারের পর্দায় আপনি যেসব রঙ দেখতে পাচ্ছিলেন, প্রিন্ট করার পর তা সম্পূর্ণ আলাদা দেখাচ্ছে।
এমনটা আপনার সঙ্গে কখনো হলে হতাশ হবেন নিশ্চয়ই। ভাববেন সমস্যাটা কোথায় হল?
আপনার এ প্রশ্নের উত্তরটি রঙের সাথে সম্পর্কিত। স্ক্রিনে আর কাগজে আমরা কীভাবে বিভিন্ন রঙ দেখি এবং আমাদের ডিভাইস কীভাবে কাজ করে, তার সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে।
বিশেষ করে, ‘আরজিবি’ (RGB) এবং ‘সিএমওয়াইকে’ (CMYK) নামের রঙ প্রদর্শনের দুটি মানদণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত আপনার প্রশ্নের উত্তর। ‘আরজিবি’ ও ‘সিএমওয়াইকে’ হল দুটি কালার মডেল এর নাম।
সহজ কথায়, ডিসপ্লে স্ক্রিনে রঙ প্রদর্শনের সময় ‘আরজিবি’ মডেল অনুসরণ করা হয়। এবং প্রিন্ট করা কাগজে রঙ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয় ‘সিএমওয়াইকে’ মডেল। এবং এ দুটি মডেলের কার্যক্রমের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
হয়ত এ দুটি মডেলের নাম আপনি আগেই শুনেছেন। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন এর মানে কী? কিংবা কেন এসব মডেল গুরুত্বপূর্ণ? যদি না ভেবে থাকেন, তাহলে আপনি একা নন। আমরা অনেকেই এ বিষয়টা খুব বেশি গুরুত্ব দিই না।
অথচ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ধরনের কাজের সঙ্গে এসব মডেলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
.
# আরজিবি ও সিএমওয়াইকে আসলে কী?
‘আরজিবি’ (RGB) হল রেড, গ্রিন, এবং ব্লু-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। লাল, সবুজ এবং নীল, এই তিনটি রঙই ইলেকট্রনিক ডিভাইসের পর্দায় ছবি, লেখা বা ভিডিও সহ অন্যান্য সবকিছু প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই রঙ তিনটির ওপর ভিত্তি করেই পর্দায় অন্যান্য রঙ ফুটে ওঠে।
আরজিবি নামের এই মডেলের সাহায্যে টিভি, স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের মত ইলেকট্রনিক ডিসপ্লেতে রঙের প্রদর্শন করা হয়। অর্থাৎ, বোঝাই যাচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে ব্যবহৃত হয় আরজিবি মডেল।
আরজিবি যেমন ডিসপ্লে স্ক্রিনে কোনো ছবির সফটকপির রঙ দেখাতে ব্যবহৃত হয়, তেমনি একই ছবির হার্ডকপি বা ছাপানো সংস্করণে ব্যবহৃত হয় ‘সিএমওয়াইকে’। রঙিন ছবি, কাগজ বা বইপত্র ছাপানোর জন্য সিএমওয়াইকে মডেল এর প্রয়োজন হয়।
আরজিবি’র মত ‘সিএমওয়াইকে’ (CMYK) নামটি দিয়েও একাধিক রঙ বোঝানো হয়। সিএমওয়াইকে নামের মধ্যে থাকা চারটি রঙের প্রথমটি হল ‘সায়ান’ (Cyan)। ‘সায়ান’ রঙটি দেখতে সবজে নীল বা নীলচে সবুজ ধরনের। একে অনেক সময় ‘পেস্ট নীল’ রঙও বলা হয়।
অন্য তিনটি রঙ হল ম্যাজেন্টা, হলুদ এবং কালো। ম্যাজেন্টা নামের সঙ্গে যারা পরিচিত নন, তারা এই রঙটিকে ‘রক্তবেগুনী-লাল’ বা ‘ফিকে লাল’ হিসেবে কল্পনা করতে পারেন।
.
# আরজিবি মডেলের সাহায্যে যেভাবে বিভিন্ন রঙ প্রদর্শন করা হয়
আপনি হয়ত ভাবছেন, আমরা তো শুধু লাল, সবুজ বা নীল রঙেই সবকিছু দেখি না। বরং এর বাইরে অন্য রঙও দেখতে পাই।
মূলত আরজিবি মডেলের সাহায্যে বিভিন্ন রঙ প্রদর্শন করা সম্ভব হয় দুটি রঙ মিশলে নতুন রঙ তৈরি হওয়ার কারণে। যেমন, লাল ও নীল মেশালে ম্যাজেন্টা রঙ তৈরি হয়। নীল ও সবুজ মিশলে তৈরি হয় সায়ান। আবার লাল আর সবুজ মিলে হয় হলুদ রঙ।
একসাথে লাল, সবুজ ও নীল রঙ তিনটিকে মেশালে তৈরি হবে সাদা রঙ। এবং যখন কোনো রঙই থাকবে না, তখন পর্দায় কালো রঙ দেখাবে।
আরজিবি’কে অনেক সময় ‘সংযোজন নির্ভর’ বা ‘অ্যাডিটিভ’ মডেল বলা হয়। কারণ এই মডেলে রঙের মাত্রা বা গভীরতা উজ্জ্বল করার জন্য দুটি রঙ সংযোজন বা একত্র করার দিকে জোর দেয়া হয়। অন্যদিকে সিএমওয়াইকে মডেলে ঠিক এর উল্টোটা করা হয়।
এ বিষয়ে লেখার পরবর্তী অংশে আরো কিছুটা আলোকপাত করা হবে।
যাহোক, সংযোজনের এই বৈশিষ্ট্য থাকার ফলেই ইলেকট্রনিক ডিভাইসের পর্দায় বা সফট কপিতে প্রদর্শন করার জন্য আদর্শ একটি মডেল হল আরজিবি।
.
# ডিভাইসের পর্দায় যেভাবে কাজ করে আরজিবি মডেল
ডিজিটাল ছবি প্রদর্শনের জন্য আরজিবি রঙের মডেল ব্যবহার করা হয়। আর এই মডেল ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এর সাহায্যে অনেক ধরনের রঙ দেখানো যায়।
আমাদের কম্পিউটার স্ক্রিন বা ডিজিটাল মনিটর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য পিক্সেল এর সমন্বয়ে গঠিত। মূলত এসব পিক্সেল এর কারণেই আমরা পর্দায় চিত্র দেখতে পাই।
ছোট ছোট এসব পিক্সেলের প্রতিটির মধ্যেই রয়েছে তিনটি আলোর ইউনিট। আর এই ইউনিট তিনটি হল লাল, সবুজ ও নীল, যাকে সংক্ষেপে আরজিবি বলা হয়। এবং আগেই যেমনটা বলা হয়েছে, এই তিনটি রঙ দ্বারাই আরজিবি মডেল গঠিত।
আরজিবি মডেল ব্যবহার করা সহজ। এবং এর সাহায্যে ব্যবহারকারীরা রঙ সংক্রান্ত ডেটার সঙ্গে অন্যান্য ডেটা নিয়েও কাজ করতে পারেন।
বিশেষত ওয়েব ডিজাইনের মত কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় আরজিবি মডেল। তবে ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইসে আরজিবি রঙের মান আলাদা থাকতে পারে। ফলে একই ফাইল অন্য ডিভাইসের পর্দায় দেখার সময় একই রঙের সামান্য ভিন্ন শেড দেখা যায়।
কম্পিউটারের ভাষায় আরজিবি মডেল অনুসারে রঙের নাম বোঝাতে বিশেষ সংকেত ব্যবহৃত হয়। একে অনেক সময় ‘হেক্স কোড’ও বলা হয়। এসব সংকেত শুরু হয় হ্যাশ চিহ্ন (#) দিয়ে এবং এর পর ইংরেজি সংখ্যা জিরো থেকে নাইন (0-9) এবং ইংরেজি বর্ণ a থেকে f পর্যন্ত সাজিয়ে বিভিন্ন রঙ নির্দেশ করা হয়।
যেমন, সাদা রঙের হেক্স কোড হল #ffffff এবং কালো রঙের কোড হল #000000।
আমাদের কম্পিউটারে ব্যবহৃত সব ধরনের অ্যাপ্লিকেশন কাজ করে আরজিবি মডেলের ওপর ভিত্তি করে। মাইক্রোসফ্ট ওয়ার্ড, এক্সেল বা পাওয়ারপয়েন্ট থেকে শুরু করে ফটোশপ বা ব্রাউজার, সবকিছুই আরজিবি মডেলের ওপর নির্ভরশীল।
এলসিডি ও এলইডি স্ক্রিন, টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে সহ আধুনিক প্রায় সকল ডিভাইসের পর্দায় ব্যবহৃত হয় আরজিবি মডেল।
আবার ক্যামেরা বা স্ক্যানার যখন বাস্তব কোনো দৃশ্য বা কাগজে ছাপানো কোনো ছবির সফট কপি তৈরি করে, তখনও এসব ডিভাইস আরজিবি মডেল অনুসারে রঙ প্রদর্শন করে।
.
# আমরা যেভাবে আরজিবি মডেলের মাধ্যমে প্রদর্শিত আলো দেখি
আরজিবি নাম থেকেই বোঝা যায় যে, ডিজিটাল পর্দায় ছবি দেখার জন্য আমাদের লাল, সবুজ এবং নীল রঙের প্রয়োজন হয়।
কিন্তু এক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন আসে। কেন “আরবিওয়াই” (RBY) নয়? অর্থাৎ লাল, নীল এবং হলুদ কেন নয়?
যেহেতু লাল, নীল এবং হলুদ হল প্রধান তিনটি রঙ। এবং এই রঙ তিনটির সাহায্যেই যেকোনো সাধারণ রঙ তৈরি করা যায়।
উত্তরটা হল রঙ ও আলোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। লাল, নীল ও হলুদ তিনটি প্রধান রঙ হলেও লাল, সবুজ এবং নীল হল তিনটি প্রধান আলো।
যেহেতু ডিজিটাল ডিভাইসের পর্দা থেকে আসা আলোর মাধ্যমেই আমরা রঙ দেখি, তাই এক্ষেত্রে রঙের পরিবর্তে আলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
অর্থাৎ, লাল, সবুজ এবং নীল ব্যবহার করার অন্যতম কারণ হল ডিজিটাল ডিভাইসের পর্দা কাজ করে পিক্সেলের মাধ্যমে। এবং আগেই যেমনটা বলা হয়েছে, প্রতিটা পিক্সেল-এ লাল, সবুজ এবং নীল অংশ থাকে, যার সাহায্যে পর্দায় রঙিন চিত্র ফুটে ওঠে।
মোটকথা, যেকোনো ডিজিটাল ডিসপ্লে থেকেই আলো নির্গত হয়। এবং এই আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে বলেই আমরা পর্দায় চিত্র দেখতে পাই।
আলোর নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য থাকে। এবং কিছু তরঙ্গদৈর্ঘ্য আমাদের চোখকে অন্যগুলির চেয়ে বেশি উদ্দীপ্ত করে।
আবার বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কারণে মস্তিষ্ক থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া আসে। এর ফলেই আমাদের মস্তিষ্ক এসব তরঙ্গদৈর্ঘ্যগুলি রঙ হিসেবে চিহ্নিত করে।
পর্দা থেকে নির্গত বিভিন্ন আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য মস্তিষ্কের বিভিন্ন রিসেপ্টরকে উদ্দীপ্ত করে। তবে মস্তিষ্ক উদ্দীপ্ত হওয়ার আগে এসব তরঙ্গদৈর্ঘ্য আমাদের চোখে এসে পড়ে। মানুষের চোখে মূলত ৩টি রঙের প্রতি সংবেদনশীল বিশেষ কোষ রয়েছে, যাকে ‘কালার কোন’ বলা হয়।
এবং এই তিনটি রঙই হল লাল, সবুজ এবং নীল। মানুষের চোখের কালার কোন-এ কোনো তরঙ্গদৈর্ঘ্য এসে পৌঁছালে সেটা সংকেত হিসেবে মস্তিষ্কের বিভিন্ন রিসেপ্টরকে উদ্দীপ্ত করে এবং এভাবেই আমাদের মস্তিষ্ক লক্ষ লক্ষ রঙ আলাদা করতে পারে।
সব মিলিয়ে আমরা একটি কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে মোট ১৬ মিলিয়নেরও বেশি রঙ দেখতে পাই।
কেন ১৬ মিলিয়নেরও বেশি রঙ দেখি আমরা? এর কারণ হল রঙের গভীরতা বা কালার ডেপথ।
কোনো ডিভাইসের বিভিন্ন রঙের গভীরতা প্রদর্শনের ক্ষমতার মাধ্যমেই নির্ধারিত হয় সেই ডিভাইসের পর্দা থেকে আমরা কতগুলি রঙ দেখতে পাব। ডিভাইসের এই ক্ষমতাকে বিট দিয়ে পরিমাপ করা হয়।
২-বিট রঙের গভীরতার মানে হল, এসব ডিভাইসের পর্দায় কেবল দুটি রঙ দেখা যায়: কালো এবং সাদা। একেবারে প্রথমদিকের সাদাকালো টেলিভিশনের পর্দা নির্মিত হত এই প্রযুক্তিতে।
তবে সাদা এবং কালো রঙের বিভিন্ন শেড দেখা সম্ভব হয় ১৬-বিট রঙের গভীরতার মাধ্যমে। তবে এখন আর ডিজিটাল ছবির জন্য ১৬-বিটের প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয় না।
বর্তমানে ডিসপ্লে নির্মাণে ২৪-বিট রঙের গভীরতা ব্যবহার করা হয়। কারণ এর মাধ্যমে তিনটি রঙ, লাল, সবুজ এবং নীল এর প্রতিটি রঙের ২৫৬টি মান বা সংস্করণ পাওয়া যায়। এবং এর মধ্যে প্রতিটি রঙের মান আরেকটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন রঙ গঠন করে।
অর্থাৎ, ডিজিটাল পর্দায় মানুষের চোখ মোট ১৬,৭৭৭,২১৬টি রঙ দেখতে পারে। সংখ্যাটা হিসাব করা হয়েছে লাল, সবুজ এবং নীলের প্রতিটির মান একসঙ্গে গুণ করার মাধ্যমে (২৫৬ x ২৫৬ x ২৫৬)।
.
# আরজিবি মডেল ইতিহাসে কখন আবিষ্কৃত হয় এবং কে আবিষ্কার করেন?
কম্পিউটার সফটওয়্যারের সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় আরজিবি মডেলকে নতুন আবিষ্কার বলে মনে হতে পারে। তবে ১৮০০ সালের শুরুর দশক থেকেই এ বিষয়ে গবেষণা করা হচ্ছে।
থমাস ইয়ং, জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল এবং হেরমান ভন হেলমহোল্টজকে আরজিবি মডেল-এর অগ্রদূত হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
তবে হরেক রকম রঙের ভিড়ে এই তিনটি রঙের অসাধারণ বিশেষত্ব আবিষ্কারের আগে রঙের মৌলিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছিলেন নিউটন। ১৬৭০ থেকে ১৬৭৫ সালের মধ্যে আইজ্যাক নিউটন আমাদের চোখ এবং রঙের মধ্যে যে সংযোগ রয়েছে, তা বের করেছিলেন।
১৮০২ সালে থমাস ইয়ং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, আমাদের চোখ লাল, সবুজ এবং নীল, এই তিনটি রঙের প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল।
১৮৫০ সালে হের্মান হেলমহোল্টজ একটি পরীক্ষা চালান। যেখানে তিনি অংশগ্রহণকারীদেরকে পৃথক নমুনা থেকে পাওয়া একক-তরঙ্গদৈর্ঘের আলোর বিভিন্ন উৎস ভালো করে দেখতে এবং সেগুলির মধ্যে তুলনা করতে বলেন।
পরীক্ষার ফলাফল থেকে তিনি দেখতে পান যে, তিনটি প্রাথমিক রঙের আলো রয়েছে। এসব আলো থেকেই আমরা বিভিন্ন রঙ দেখতে পারি। আর প্রাথমিক যে তিনটি রঙের আলো লক্ষ্য করেছিলেন তিনি, সেগুলি হল লাল, সবুজ এবং নীল।
থমাস ইয়ং আবিষ্কৃত তিনটি প্রাথমিক রঙের ধারণাই রঙ সম্পর্কিত আধুনিক তত্ত্বের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৮৬০-এর দশকে জন ম্যাক্সওয়েলও এই তিনটি রঙ নিয়ে কাজ করেন।
এছাড়া ১৯২০ থেকে ১৯৩০ এর দশকে পদার্থবিজ্ঞানীরা মানুষের চোখের ভেতরের নানা ধরনের কার্যাবলী বুঝতে পারেন। এরপরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, লাল, সবুজ এবং নীলই হল আলোর প্রাথমিক রঙ। এবং এই তিনটি রঙের আলোর সাহায্যেই আমরা অন্যান্য রঙ দেখতে পাই।
রঙিন টিভি আসার আগ পর্যন্ত সাদা-কালো টেলিভিশনের প্রচলন ছিল। কেননা তখন শুধুমাত্র ২-বিট রঙের গভীরতা নিয়ে কাজ করতে পারে এমন পর্দা ও পিক্সেল নির্মাণের প্রযুক্তিই আবিষ্কৃত হয়েছিল। আগেই যেমনটা বলা হয়েছে, ২-বিট রঙের গভীরতা দিয়ে মাত্র দুটি রঙই পাওয়া যায়।
তবে ১৯২৮ সালে এই চিত্র বদলে যায়। স্কটল্যান্ডের জন লগি বেয়ার্ড প্রথমবারের মতো আরজিবি টিভি প্রদর্শন করেন, যাতে সাদা ও কালো ছাড়াও আরো অনেক রঙ দেখা যেত। বর্তমান সময়ে প্রচলিত রঙিন স্ক্রিন আজকের এ পর্যায়ে আনার পেছনে শুরুরদিকে যারা অবদান রেখেছেন, জন লগি বেয়ার্ড তাদের মধ্যে অন্যতম।
তবে মোটের ওপর আরজিবি লাইট সিস্টেম তৈরির জন্যে নির্দিষ্ট কোনো একজনকে কৃতিত্ব দেয়া যায় না। কারণ এই উদ্ভাবনের পেছনে প্রতিভাবান অনেক বিজ্ঞানীর অবদান রয়েছে।
.
# ‘আরজিবি’ ও ‘সিএমওয়াইকে’ এর মধ্যে পার্থক্য
সিআরটি বা ক্যাথোড রে টিউব, ডিজিটাল ক্যামেরা কিংবা এলসিডি ডিসপ্লের মত প্রচলিত অনেক ডিভাইসে ব্যবহৃত হয় আরজিবি মডেল। অন্যদিকে রঙিন চিত্র, কাগজ, ব্রোশিউর ইত্যাদি প্রিন্ট করা বা ছাপার জন্যে সিএমওয়াইকে মডেল ব্যবহৃত হয়।
মূলত মুদ্রিত বা প্রিন্ট করার পর যেসব রঙ দেখা যাবে, সেসব রঙ নির্ধারণের কাজ করা হয় সিএমওয়াইকে মডেল দিয়ে।
সিএমওয়াইকে (CMYK) মডেলের মৌলিক চারটি রঙ হল সায়ান, ম্যাজেন্টা, হলুদ এবং কালো।
এদিকে আরজিবি মডেলের পদ্ধতি রঙ বা আলোর সংযোজনের ওপর নির্ভর করে কাজ করে। ফলে একে ‘সংযোজন নির্ভর’ বা ‘অ্যাডিটিভ’ মডেল বলা হয়।
অন্যদিকে সিএমওয়াইকে রঙের বিয়োজনের বা বাদ দেয়ার মাধ্যমে কাজ করে।
‘সংযোজন নির্ভর’ বলতে বোঝায় যখন তিনটি রঙ একসাথে মেশে তখন আরজিবি স্ক্রিনে সাদা আলো তৈরি হয়। আবার যখন কোনো রঙই মিশ্রিত হয় না, তখন কালো রঙ দেখা যায়।
অন্যদিকে, বিয়োজনের ওপর নির্ভর করে কাজ করে সিএমওয়াইকে। সিএমওয়াইকে মডেলের মৌলিক রঙ চারটি একসাথে মেশানো হলে খুব গাঢ় বাদামী রঙ তৈরি হয়।
তবে সিএমওয়াইকে মডেলের সায়ান, ম্যাজেন্টা বা হলুদ কালি মিশিয়ে কিন্তু কালো রঙ উৎপন্ন করা যায় না। এ কারণে এই মডেলের মধ্য আলাদাভাবে কালো কালিও রয়েছে।
এদিকে আরজিবি মডেল যেহেতু আলোর ওপর নির্ভর করে, তাই আলোর অনুপস্থিতিতেই সেখানে কালো রঙ তৈরি হয়।
সিএমওয়াইকে মডেলে যখন কোনো রঙই মেশানো বা ছাপানো হয় না, তখন সাদা রঙ আসে। প্রিন্টিংয়ের জন্যে ব্যবহৃত কাগজ সাধারণত সাদা থাকে। ফলে কাগজের যে অংশে কোনো রঙ ছাপানো হয় না, সে অংশ সাদাই থাকে।
মোটকথা, আরজিবি মডেল প্রিন্টিং এর জন্য খুব একটা উপযুক্ত নয়। তবে ওয়েব বা ডিভাইস নির্ভর কাজের জন্য এটি আদর্শ। আর প্রিন্টিং এর জন্য আদর্শ হল সিএমওয়াইকে মডেল।
লেখার প্রথমে লোগো প্রিন্টিংয়ের ব্যাপারে কাল্পনিক সমস্যার কথা বলা হয়েছিল, সে সমস্যার সমাধান এই দুই রঙের মডেলের পার্থক্যের ওপরেই নির্ভর করে।
ওয়েব বা সফটকপি ফর্মে থাকা আরজিবি মডেলের ছবি প্রিন্ট করার জন্য আগে সিএমওয়াইকে মডেলে কনভার্ট করে নিতে হয়। তা না হলে ছবিটি ম্লান এবং কম রঙিন দেখায়।
এমনিতেও স্ক্রিনে যতটা রঙিন ছবি দেখা যায়, কাগজে তত রঙ ফুটিয়ে তোলা যায় না। কেননা আরজিবির তুলনায় সিএমওয়াইকে মডেল দিয়ে অনেক কম রঙ দেখানো যায়।
এ কারণে আরজিবি মডেলকে অনেক সময় ‘ট্রুকালার ইমেজ’ (truecolor image) বলা হয়।
তাই আরজিবি ছবি প্রিন্ট করার পরে কেমন দেখাবে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রথমে আরজিবি ছবিটি সিএমওয়াইকে ফরম্যাটে রূপান্তর করতে হবে। কারণ সিএমওয়াইকে হল প্রিন্টিং এর জন্য তৈরি কালার মডেল।
কোনো ছবি বা ফাইল আরজিবি থেকে সিএমওয়াইকে’তে রূপান্তর করার অনেক ধরনের উপায় রয়েছে। অনলাইনেই এই রূপান্তরের অসংখ্য ওয়েবসাইট আছে। সেসব ওয়েবসাইটে গিয়ে সহজেই আরজিবি ফাইল আপলোড করে সেটার সিএমওয়াইকে সংস্করণ ডাউনলোড করা যায়।
অ্যাপল ডিভাইসে এই রূপান্তরের কাজ করার জন্য কার্যকর একটি সফটওয়্যারের নাম ‘প্রোক্রিয়েট’ (Procreate)।
উইন্ডোজ কম্পিউটারে বড় পরিসরে ও সহজে এই কাজ করার জন্য ছবি এডিটিং সংক্রান্ত অনেক ওপেন সোর্স সফটওয়্যার আছে। এমন একটি জনপ্রিয় সফটওয়্যারের উদাহরণ হল ‘গিম্প’ (GIMP)। এছাড়াও অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর বা অ্যাডোবি ফটোশপের মত প্রচলিত অনেক এডিটিং সফটওয়্যার দিয়েই এই কাজ করা যায়।
সৌঃ সি বি