Loading..

মুজিব শতবর্ষ

২৯ আগস্ট, ২০২৩ ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ

মীনা আজকাল 'মিম জেনারেশন' এর হাতে পড়ে ট্রলের অংশ হয়ে গেছে...
"আমি বাবা মায়ের শত আদরের মেয়ে,
আমি বড় হই, সকলের ভালোবাসা নিয়ে...
আমার দু'চোখে অনেক স্বপ্ন থাকে,
আমি পড়ালেখা শিখতে চাই...!
যদি চার দেয়ালের মাঝে কাটে সারাজীবন,
তাহলে থাকবো শুধু বোঝা হয়ে...
শিক্ষা আমায় মুক্তি দেবে, মুক্তি দেবে...!"
গানের এই কথাগুলো পড়বার সময়'ই নব্বই দশকে জন্ম নেয়া প্রতিটি ছেলে-মেয়ের কানে অটোম্যাটিক্যালি বেজে ওঠে থিম সং'টার মিউজিক এবং গায়িকার কন্ঠ... যদি সত্যিকারে কেউ সমাজে, শিক্ষায়, প্রগতিতে নোবেলের দাবিদার হয়ে থাকেন, সেটা ছিলো মীনার সৃষ্টিকারী টিম। রাম মোহন মারা গেলেন ক'দিন আগেই... জীবিত আছেন আমাদের দেশের মোস্তফা মনোয়ার।
'মীনা' কার্টুন এই দেশের শিশুদের জন্য শুধুমাত্র একটা কার্টুন ছিলো না, ইউনিসেফ এর তৈরী এই কার্টুন বাংলাদেশের একসময়কার প্রতিটা শিশুর জন্য ছিলো বলতে গেলে একরকম লার্নিং স্কুল। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মীনা নিজে চরিত্রগুলো নিয়ে সাফল্যের সাথে দ্যুতি ছড়িয়েছে বছরের পর বছর।
প্রতিটা এপিসোডেই অসম্ভব সুন্দরভাবে ঘটনা প্রবাহর মাধ্যমে সামাজিক মেসেজ দেয়ার ক্ষেত্রে মীনার চেয়ে সফল কোন অনুষ্ঠান নেই... শহরে বড় হওয়া একজন মেয়ে হয়তো মীনার ইমপেক্টটা সরাসরি ধরতে পারবে না... কিন্তু ২০০০ সালের আগে স্কুল শুরু করা গ্রামের মেয়েটা জানে, তার জীবনে মীনা গুরুত্ব।
মীনা শিখিয়েছে একটা মেয়ের জন্য স্কুল, শিক্ষা কতোটা জরুরী... বাল্যবিবাহের ভয়ংকর রূপ, যৌতুকের প্রতিবাদ, স্বাস্থ্যসেবা ও হাইজিনের গুরুত্ব, বেড়ে ওঠার বয়সে ছেলে সন্তান এবং মেয়ে সন্তানের পারিবারিকভাবে পুষ্টিগত তারতম্যের শিকার হওয়া, ডায়রিয়ায় জরুরীভাবে করণীয় কাজসমূহ, নবজাতক শিশুর যত্ন, বন্যায় শিশুকে কিভাবে নিরাপদ রাখতে হবে, কন্যাসন্তান জন্ম দেয়া কেনো অভিশাপ নয়... সবকিছু!
প্রতিটা এপিসোড শুধু শিশুদের নয়, শিখিয়েছে বাবা-মা'দেরকেও। আমার ছেলেবেলা কেটেছে গ্রামে। গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে জীবনের শুরুর একটা পাঠ আমি পেয়েছি। স্কুলে প্রতি তিনমাস অন্তর অন্তর ইউনিসেফের একটা টিম এসে প্রজেক্টর লাগাতো... ছাত্রছাত্রীরা সবাই বড় একটা ক্লাসরুমে মীনা দেখতো।
গ্রামে টিভি তখনো আরাধ্য... স্কুলে প্রত্যন্ত পাহাড়ি পথ ধরে দুই-তিনঘন্টা হেঁটেও অনেকে পড়তে আসতো। তারা মীনা দেখতে পেতো শুধু সেই সময়টায়... সবাই রুদ্ধশ্বাসে দেখছে মীনার এডভেঞ্চার। মীনা কার্বুরেটর চালু করে ট্রাক্টর বাঁচালে সবাই তালি দিচ্ছে, মিঠুকে পাঠিয়ে 'বারবার পাতলা খাবার' এর সংবাদ পাঠিয়ে রাণীকে বাঁচালে সবাই তালি দিচ্ছে, সাইকেল চালিয়ে টাকা নিয়ে ফেরত এসে লালিকে দোকানদারের হাত থেকে বাঁচালে সবাই তালি দিচ্ছে... তিন এর নামতা শিখে মুরগী চোরকে ধরে ফেললে সবাই তালি দিচ্ছে... ইভটিজিং এর কারণে দীপুকে জব্দ করার পর সবাই তালি দিচ্ছে... সেইসব ঘোরলাগা দুপুর... কি নিষ্পাপ সুন্দর!
মীনা আজকাল 'মিম জেনারেশন' এর হাতে পড়ে ট্রলের অংশ হয়ে গেছে... তারা মীনা'কে নিয়ে ট্রল করে, হাসে। তাদের কিছুই যায় আসে না।

কিন্তু যে মেয়েটা মীনার কারণে সমস্ত বাঁধা ডিঙিয়ে হাইস্কুল পর্যন্ত পড়তে পেরেছে, যে মেয়েটা মীনার কারণে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেয়েছে... সে জানে, একটা সময়ে মীনা কতোটা অমূল্য ছিলো তার জন্য...!May be an illustration of child

আরো দেখুন