![img](https://teachers.gov.bd/shared/profile_pictures/2024/01/17/cgwXGjmuIu2HFCbnMTxsVbHJjB9YW0qp1JC8xMIC.jpg)
সহকারী অধ্যাপক
![](https://teachers.gov.bd/shared/contents/2023/August/30/publication/image_443310_1693332052.jpg)
৩০ আগস্ট, ২০২৩ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
সহকারী অধ্যাপক
বাংলাদেশে গড় আয়ু কমেছে ছয় বছর আট মাস
বায়ুদূষণে বাংলাদেশে বছরে মানুষের গড় আয়ু ছয় বছর আট মাস কমে গেছে। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে
দূষিত বায়ুর দেশ বাংলাদেশ। ১৯৯৮ সালের তুলনায় বায়ুদূষণ ৬৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে ২০২০
ও ২০২১ সালের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে প্রকাশিত বায়ুদূষণবিষয়ক এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বের কোন দেশের অধিবাসীদের গড় আয়ু কী পরিমাণ কমছে, সেই হিসাব
ধরে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণ বিশ্ববাসীর জন্য সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য
সমস্যা হয়ে উঠেছে। বিশ্বের ছয়টি দেশে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। দেশগুলোর
মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, নাইজেরিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। সামগ্রিকভাবে
দূষিত বায়ু মানুষের আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে। ধূমপানে মৃত্যুর চেয়ে তিনগুণ, সড়ক দুর্ঘটনার
মৃত্যুর তুলনায় পাঁচগুণ মানুষ বায়ুদূষণে মারা যাচ্ছে।
বায়ুদূষণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানুষের গড় আয়ু কী পরিমাণে কমছে, তা
প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। বায়ুর মান অনুযায়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের আয়ু
এক বছর থেকে ছয় বছর কমে যাচ্ছে। গত এক যুগে বিশ্বে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চীন সবচেয়ে
বেশি সফলতা দেখিয়েছে। দূষণ রোধে তাদের নেওয়া পদক্ষেপগুলো দেশটির বায়ুর মান ৪২
শতাংশ বেশি উন্নতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৪৮ লাখ মানুষ সারা বছর দূষিত
বায়ুর মধ্যে বসবাস করছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মান,
বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা ৫ মাইক্রোগ্রামের চেয়ে বেশি। তবে
দেশের একেক এলাকার বায়ুর অবস্থা একেক রকম। বড় শহরগুলোর তুলনায় গ্রামের বায়ুর মান ভালো।
বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্মল বায়ুর শহর সিলেটেও বায়ুদূষণ আন্তর্জাতিক মানের ১০ গুণ।
সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর হলো গাজীপুর। রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে কাছের শিল্প এলাকা
গাজীপুরে মানুষের আয়ু আট বছর তিন মাস কমে গেছে। আর বাংলাদেশে বছরে গড় আয়ু কমেছে ছয়
বছর আট মাস।
ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোয় ৭ কোটি ৪৭ লাখ মানুষ বসবাস করে। এসব
শহরের অধিবাসীদের গড় আয়ু সাত বছর ছয় মাস কমে যাচ্ছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
গাইডলাইন অনুসরণ করে বায়ুর মান উন্নত করলে গড় আয়ু বাড়ানো যেতে পারে। ঢাকায় বায়ুর
মান উন্নত করে গড় আয়ু আট বছর এক মাস বাড়ানো সম্ভব আর চট্টগ্রামে ছয় বছর নয় মাসের
সঙ্গে পুরো দেশের গড় আয়ু বাড়তে পারে পাঁচ বছর আট মাস।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বায়ুর মান বিষয়ে নির্ভরযোগ্য ও সময়মতো তথ্য
সরবরাহের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এসব তথ্য যাতে দূষিত বায়ু
থেকে রক্ষা পেতে নাগরিকরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে, তা-ও নিশ্চিত করার ব্যাপারে
জোর দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে বায়ুর মানবিষয়ক তথ্য পুরোপুরি উš§ুক্ত নয় উল্লেখ করে
বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত তথ্য পুরোপুরি উš§ুক্ত এবং সময়মতো হওয়া উচিত, যাতে তা
সাধারণ নাগরিকরা ব্যবহার করতে পারেন।
প্রতিবেদনে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের
অধ্যাপক মিখাইন গ্রিনস্টোন বলেন, বিশ্বের গণমাধ্যমগুলো রাজনৈতিক সংবাদকে বেশি
গুরুত্ব দেয়। কিন্তু জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করলে বায়ুদূষণসংক্রান্ত সংবাদ
প্রতিদিন প্রকাশ করা উচিত। কারণ, অনেক দেশে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রাথমিক অবকাঠামো
গড়ে তোলা হয়নি। এক্ষেত্রে আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলো বিশ্বের মোট দূষিত বায়ুর ৯২
দশমিক ৭ শতাংশ নির্গত করে। এশিয়ার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং আফ্রিকার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ
রাষ্ট্র তার জনগণের জন্য বায়ুর মানবিষয়ক নির্ভরযোগ্য তথ্য সঠিক সময়ে সরবরাহ করে
থাকে।
একই সঙ্গে এশিয়ার ৩৫ দশমিক ৬ এবং আফ্রিকার ৪ দশমিক ৯ শতাংশ দেশে
নিজেদের বায়ুর মানমাত্রা আছে। একই সঙ্গে বায়ুর মান নিয়ন্ত্রণে কোনো বৈশ্বিক তহবিল
নেই। কিন্তু এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা বিষয়ে বৈশ্বিক তহবিল রয়েছে। এসব
তহবিল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বছরে ৪০০ কোটি ডলার সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে পুরো
আফ্রিকা মহাদেশ বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বছরে মাত্র তিন লাখ ডলার পেয়েছে। ওই অর্থের
জোগান আসছে মূলত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে। ওই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের একটি
পরিবারের বার্ষিক ব্যয়ের সমান। আর এশিয়ার দেশগুলোয় যাচ্ছে ১৪ লাখ ডলার। আর ক্লিন
এয়ার ফান্ড থেকে চীন, ভারত, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা মিলে ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার
নিচ্ছে।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ার কোয়ালিটি লাইভ ইনডেক্স কর্মসূচির
পরিচালক ক্রিস্টিনা হ্যাসেনকর্ফ বলেন, বাতাসকে নির্মল ও দূষণমুক্ত করতে হলে নাগরিক
সমাজ ও সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ বাড়াতে হবে। এজন্য
আমাদের পর্যাপ্ত অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে কঙ্গো, রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি এবং দক্ষিণ
আমেরিকার গুয়াতেমালা, বলিভিয়া ও পেরুর বায়ুর মান সবচেয়ে খারাপ। তবে যুক্তরাষ্ট্র
নানা উদ্যোগের মাধ্যমে বায়ুর মানের উন্নতি করেছে। দেশটি ১৯৭০ সালের তুলনায় বায়ুর
মান ৬৫ শতাংশ উন্নতি করেছে। তবে বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা এক
বছর চার মাস বেশি বাঁচে। এর কারণ, দেশটি নির্মল বায়ু আইন করেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ওই
আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো গড়ে তুলেছে।
বায়ুর মানের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো অবস্থায় আছে ইউরোপের দেশগুলো।
এখানকার অধিবাসীরা ১৯৯৮ সালের তুলনায় ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ ভালো বায়ুর মধ্যে বসবাস
করছে। এখানকার বেশির ভাগ দেশ এয়ার কোয়ালিটি ফ্রেমওয়ার্ক ডিরেক্টিভ তৈরি করেছে। ওই
আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে
এখনো সেখানকার ৯৮ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ ডব্লিউএইচও-এর মানমাত্রার চেয়ে খারাপ বায়ুর
মধ্যে বাস করে। তবে তারা ২০৩০ সালের মধ্যে বায়ুর মান ওই মানমাত্রায় পৌঁছানোর
পরিকল্পনা নিয়েছে।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চীনের সাফল্য : চীনের উদাহরণ টেনে প্রতিবেদনে
বলা হয়, দেশটি বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এ ক্ষেত্রে তারা উল্লেখযোগ্য
সাফল্য পেয়েছে। তারা ২০১৩ সালের তুলনায় ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ বায়ুদূষণ কমিয়েছে। এতে
তাদের নাগরিকদের গড় আয়ু দুই বছর দুই মাস বেড়েছে। তবে এখনো চীনে বায়ুর মান
ডব্লিউএইচও-এর বায়ুমানের তুলনায় ছয়গুণ বেশি। একই সঙ্গে তাদের গড় আয়ু আড়াই বছর কমে
যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ বাতাস মানমাত্রার চেয়ে খারাপ
বা দূষিত।