সিনিয়র শিক্ষক
৩০ আগস্ট, ২০২৩ ০৫:৫২ অপরাহ্ণ
রাস্তায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের রেখার অর্থ
আসুন রাস্তায় ব্যবহৃত
বিভিন্ন ধরনের রেখার অর্থ জেনে নি
রাস্তায় চলাচলের
সময় অধিকাংশ চালকই নিয়মনীতির ওপর খেয়াল রাখেন না। এর ফলে প্রায় প্রতিদিনই সড়ক
দুর্ঘটনায় বেশকিছু প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। জানা যায়, গত বছর দেশে ৪
হাজার ৯শ’ ৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৩শ’ ৯৭ জন নিহত ও ১৬ হাজার ১শ’ ৯৩ জন আহত
হয়েছেন। এই দুর্ঘটনাগুলোর নানা কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সঠিক নিয়ম মেনে রাস্তায়
গাড়ি না চালানো। হয়ত সঠিক নিয়মগুলো অনেকের জানাও নেই।
আপনি জানেন কি
রাস্তায় সাদা লাইন বা রেখা, হলুদ রেখাসহ যাবতীয় সংকেতগুলো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংকেত বহন করে? লক্ষ্য করলে দেখবেন
কিছু রেখায় কোন কাটা নেই। আবার কিছু রেখা মাঝে মাঝে কাটা
বা ভাঙ্গা রয়েছে। এসব জেনে ও মেনে গাড়ি চালালেও অনেক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া
যাবে। আজকের লেখায় রাস্তায় ব্যবহৃত রেখাগুলোর কাজ বা কি অর্থ প্রকাশ করে সে
সম্পর্কে জানাচ্ছি-
সাদা রেখা :
সাধারণত রাস্তার
দু’পাশে ও মাঝে সোজা সাদা রেখা দেখা যায়। এছাড়াও ব্যস্ত রাস্তা অর্থাৎ যেখানে
দ্রুতগতিতে যানবাহন চলাচল করে, রাস্তার মোড়, সেতুর উপরও এই সাদা
রেখা থাকে। এই রেখায় কোন কাটা কাটা বা ফাঁকা থাকে না। এটি নির্দেশ করে যে, এমন রেখা চালক কখনই
অতিক্রম করতে পারবেন না। রাস্তার মাঝে থাকলে ওভারটেক ও U-টার্ন নিতে পারবেন
না। তবে যান্ত্রিক সমস্যা হলে, গতি কমানোর প্রয়োজন বা
সঙ্কটকালীন অবস্থায় চালক সাদা রেখা অতিক্রম করতে পারবেন।
ভাঙ্গা বা কাটা
সাদা রেখা :
রাস্তায় সাধারণত
দু’ধরনের সাদা রেখা দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে এক ধরনের রেখা ভাঙ্গা বা কাটা কাটা
থাকে। এ ধরনের রেখা নির্দেশ করে যে, চালক চাইলে লেন
পরিবর্তন করতে পারবেন। এছাড়াও ওভারটেক, U-টার্নও নিতে
পারবেন। তবে এসব ক্ষেত্রে রাস্তা ফাঁকা ও নিরাপদ আছে কিনা লক্ষ্য রাখতে হবে। লেন
পরিবর্তন করার সময় অবশ্যই টার্নিং লাইট জ্বালিয়ে পিছনের যানবাহনকে সংকেত দিতে হবে।
হলুদ রেখা :
যদি কোন রাস্তায়
হলুদ রেখা দেখা যায় তবে চালক চাইলে ওভারটেক করতে পারবেন। কিন্তু কখনই কাটাবিহীন
হলুদ রেখা অতিক্রম করে ওভারটেক করতে পারবেন না।
দুটি হলুদ রেখা :
সাধারণত ব্যস্ত
রাস্তার মাঝে দুটি হলুদ রেখা দেখা যায়। যার মাঝে কোন ফাঁকা বা কাটা থাকে না।
এমতাবস্থায় সেখানে কোনক্রমেরই ওভারটেক করা যাবে না।
কাটা হলুদ রেখা :
সাধারণত কাটা হলুদ
রেখা চালক চাইলে ওভারটেক করতে পারবেন।
হলুদ ও কাটা হলুদ
রেখা একত্রে :
অনেক সময় রাস্তায়
হলুদ রেখার সাথে ফাঁকা বা কাটা কাটা হলুদ রেখার দেখা মিলতে পারে। এক্ষেত্রে চালক
যদি কাটা রেখার লেন দিয়ে গাড়ি চালান তিনি ওভারটেক করতে পারবেন। অপরদিকে কাটাবিহীন
রেখার লেনে যিনি থাকবেন তিনি ওভারটেক করতে পারবেন না।
জেব্রা ক্রসিং :
রাস্তায় পথচারীদের
পারাপারের জন্য যে সাদাকালো ডোরাকাটা রেখা দেখা যায় তাই হচ্ছে জেব্রা ক্রসিং।
জেব্রার শরীরের সাথে মিল থাকায় এরূপ নামকরণ করা হয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে
জেব্রা ক্রসিংয়ের ওখানেও সবগুলো একই নয়। কোনখানে সামনে কাটা কাটা দাগ থাকে আবার
কোন কোন স্থানের জেব্রা ক্রসিংয়ের উভয়পাশে আবদ্ধ করা রেখা থাকে।
সাধারণত সামনে কাটা
কাটা ছোট রেখাযুক্ত জেব্রা ক্রসিংয়ে গাড়ির গতি কমাতে হয় না। জেব্রা ক্রসিংয়ে পা না
রাখা পর্যন্ত চালক তার গাড়ির গতি কমাতে বাধ্য নন। পথচারী পা রাখার পর চালক গাড়ির
গতি কমিয়ে পথচারীকে পারাপারের সুযোগ দিবেন। এজন্য গাড়ির গতি-প্রকৃতি বুঝে পথচারী
জেব্রা ক্রসিংয়ে পা রেখে আগন্তুক গাড়িকে সংকেত দিবেন। চালক সেই সংকেতে সাড়া দিলে
জেব্রা ক্রসিংয়ের রেখার উপর দিয়ে পথচারী চলাচল করবেন।
ক্রসিংয়ের রেখা
ব্যতিত আশপাশে পা রাখলে বা আশপাশ দিয়ে অতিক্রম করতে চাইলে তা জেব্রা ক্রসিংয়ের
নিয়মের মধ্যে পড়বে না। অর্থাৎ পথচারীকে জেব্রা ক্রসিংয়ের রেখার উপর দিয়েই যেতে হবে।
জেব্রা ক্রসিংয়ের
সামনে যদি আবদ্ধ রেখা থাকে তবে পথচারীর পারাপারের সময় সেই আবদ্ধ রেখা বরাবর চালক
গাড়িটি দাঁড় করিয়ে রাখবেন। অতপর পথচারী যাওয়ার সময় যখন জেব্রা ক্রসিং ফাঁকা হবে
সাথে সাথেই চালাতে পারবেন। অর্থাৎ পথচারীকে পুরো রাস্তা অতিক্রম করা পর্যন্ত
চালককে অপেক্ষা করতে হবে না। জেব্রা ক্রসিং একাকী ব্যবহার না করে একাধিক পথচারী
একত্রিত হয়ে সংকেত প্রদান করাই উত্তম।
স্পিড ব্রেকার :
সাধারণত রাস্তায়
বিভিন্ন ধরনের স্পিড ব্রেকার দেখা যায়। ব্যস্ত বাজার, স্কুল-কলেজ বা কোন
প্রতিষ্ঠানের কাছে, অতিরিক্ত গাড়ি পার্কিং এলাকায় স্পিড ব্রেকার দেওয়া থাকে। এগুলো
বিভিন্ন আকার ও বিভিন্ন গঠনের হলেও সবগুলোর উদ্দেশ্য প্রায় একই। আর তা হল গাড়ির
গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা।
সাধারণত রাস্তায়
বিভিন্ন ধরনের সাংকেতিক চিহ্ন ও রেখা দেখা যায়। এসব রেখাগুলোর মাঝে সামান্য
ভিন্নতা থাকলেও তার দ্বারা রেখার উদ্দেশ্য ভিন্ন হতে পারে। সুতরাং রাস্তায় গাড়ি
চালানোর পূর্বে রাস্তায় ব্যবহৃত বিভিন্ন নির্দেশনাগুলো জানা উচিত। তাহলে সড়ক
দুর্ঘটনা সহজেই এড়িয়ে চলা যাবে।
তথ্যসূত্র :
মোটরসাইকেল ভ্যালি ডট কম, ড্রাইভিং টেস্টস.কো.এনজেড।