শিক্ষকতা ও আমার কথা

শিক্ষকতা ও আমার কথা
মো:জহিরুল
ইসলাম
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে আমি যোগদান
করি ২৭/০৫/২০১২ তারিখে। মাস্টার্সের শুরুর দিকে আবেদন করি এবং মাস্টার্সের রেজাল্টের
আগেই চাকুরিতে যোগদান করি। বন্ধু, বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন তখন সেটাকে অনেকেই ভালোভাবে
দেখেননি । নানা রকম অসুবিধা কিংবা অর্থনৈতিক কারণে তখন অনেকেই পেশাটাকে পছন্দ করতো
না। বর্তমান সময়ে এই ধারণার পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে করি।আমার প্রথম যোগদানকৃত বিদ্যালয়,
কালামকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল আমার বাড়ী থেকে প্রায় ১৫ কিমি. দূরে। সেখানে
আমি ৫ বছর কাটিয়ে আমার পাশের গ্রামের স্কুল আশাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
বদলি হয়ে আসি। যাই হোক নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে ১১ বছর শেষে ১২ বছরে পা রাখলাম। এই ১১
বছরে রয়েছে কিছু কষ্টের স্মৃতি এবং কিছু আনন্দের স্মৃতি। যেগুলো থেকে আমি উৎসাহ পেয়ে
থাকি। নানান মানুষের সাথে মিশে, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শেষে, দেশ বিদেশের প্রাথমিক শিক্ষা
ব্যবস্থা অধ্যয়ন করে আমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা প্রকাশ করতে পেরে আমি আনন্দিত।
কোন সন্দেহ নেই, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। মানসম্মত
শিক্ষা ব্যতীত কোন জাতি উন্নতি করতে পারে না। সেই শিক্ষার ভিত্তি হলো, প্রাথমিক শিক্ষা
। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা ব্যতীত প্রকৃত শিক্ষা অর্জন সুদূর পরাহত। তৃণমূল পর্যায়ে
চাকরি করার সুবাদে প্রাথমিক শিক্ষার অনেক সমস্যাই আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রাথমিক
শিক্ষা বিভাগ যত পরিকল্পনা, কর্মসূচী নিয়ে থাকে সবই বিদ্যালয়, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী
কেন্দ্রিক। শ্রদ্ধেয় বিদায়ী মহাপরিচালক ফসিউল্লাহ স্যার এক অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে
বলেছেন “মূল কাজ আপনাদেরই। আমরা আপনাদের যোগালী মাত্র ।" তাই বলা যায়, বিদ্যালয়ই
হলো প্রাথমিক শিক্ষার প্রাণ। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পথে আমার দেখা অন্যতম
সমস্যা গুলি হচ্ছে-
১. দারিদ্র
২. শিক্ষক স্বল্পতা:
৩. শিক্ষক অসন্তোষ:
৪. শিক্ষকদের মধ্যে কোন্দল,
৫. মানসম্মত শিক্ষকের স্বল্পতা:
৬. অভিভাবকদের অসচেতনতা;
৭. বরাদ্দের অপ্রতুলতা ৮. অনুন্নত অবকাঠামো;
৯. মনিটরিংয়ের অভাব;
১০. ক্যাচমেন্টের মধ্যে অনুমোদন বিহীন বিদ্যালয় কিংবা
প্রতিষ্ঠান স্থাপন;
১১. নেতিবাচক ধারণা ১২. ম্যানেজিং কমিটির নিষ্ক্রিয়তা
।।
উল্লেখিত সমস্যাগুলি তৃণমূলে প্রাথমিক শিক্ষার প্রধান
সমস্যা বলে আমি মনে করি। তবে আশার কথা হলো, মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে সরকার
বিভিন্ন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। যার ফলে বিদ্যালয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষায়
প্রযুক্তির ব্যবহার, শিক্ষক স্বল্পতা দূর, প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে। ঝরে পড়া
অনেকাংশেই কমেছে। বিদ্যালয়মুখী হচ্ছে শিশুরা। উপবৃত্তির ফলে দরিদ্র শিক্ষার্থীরা লাভবান
হচ্ছে। গত এক দশকে সরকারের আন্তরিকতায় বিদ্যালয়গুলোতেও দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। তারপরও
শিক্ষার মানে বিরাট ঘাটতি রয়ে গেছে। ২০১৯ সালের বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়, তৃতীয়
শ্রেণির ৩৫% শিক্ষার্থীই বাংলা পড়তে পারে । যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক।
আশা করি, কর্তৃপক্ষ তৃণমূলে বিরাজমান সমস্যাসমূহ চিহ্নিত
করে যথাযথ পদক্ষেপ নিবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য নিশ্চিত হবে
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা । প্রত্যেক শিক্ষার্থী গড়ে
উঠতে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে।
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা হোক আন্তর্জাতিক
মানের। অফুরন্ত "শুভ কামনা" প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের জন্য ।

মতামত দিন


মোঃ মেরাজুল ইসলাম
✍️ সম্মানিত, বাতায়ন প্রেমীশিক্ষক-শিক্ষিকা , অ্যাম্বাসেডর , সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা , প্রেডাগোজি রেটার আমার সালাম রইল। রেটিং সহ আমি আপনাদের সাথে আছি। আমার বাতায়ন বাড়িতে আপনাদের আমন্ত্রণ রইলো। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন , নিজে সুস্থ্ থাকবেন, প্রিয়জনকে নিরাপদ রাখবেন।

সাম্প্রতিক মন্তব্য