সহকারী শিক্ষক
০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৮:২৯ অপরাহ্ণ
শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আপনার ভূমিকা
শিশু নির্যাতনের ধরন ও লক্ষণ সম্পর্কে এর আগের লেখায় আলোচনা করা হয়েছে। এই লেখায় থাকছে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে আপনার ভূমিকা বা করণীয় কী, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
শিশু নির্যাতন রোধে আপনার প্রথম এবং প্রধান কাজ হবে নিজে আগে জানা যে, কী উপায়ে আপনার শিশুকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে পারবেন। একইসাথে আপনার পরিবারের অন্য সদস্যদেরও বিস্তারিতভাবে জানাতে হবে শিশু নির্যাতন সম্পর্কে এবং সাথে সাথে তাদেরকেও বোঝাতে হবে প্রতিরোধের উপায়গুলো। আর যদি শিশুর মধ্যে নির্যাতিত হবার কোনো লক্ষণ পেয়ে থাকেন, তবে দেরি না করে তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। যত দ্রুত আপনি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন, আপনার সন্তানের জন্য ততই তা মঙ্গলজনক হবে।
শারীরিক নির্যাতন প্রতিরোধ
শিশুরা ভুল করবে এবং ভুল থেকেই শিখবে। একজন সচেতন বাবা-মা বা অভিভাবক হিসেবে আপনাকেই শিশুর এই ভুল আচরণ বা কাজকে সঠিক আচরণে রূপান্তর করতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কী করে শিশুকে ভুল আর সঠিকের পার্থক্য বোঝাবেন? গায়ে হাত তুলবেন, নাকি ধমকে ভয় দেখিয়ে সন্তানকে ভালো-খারাপ শেখাবেন? মনে রাখবেন, এই মেরে অথবা ভয় দেখিয়ে ভালো মন্দ শেখানোর প্রক্রিয়াতে হয়তো আপনার সন্তান আপনার কাছেই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আসুন শিশুর উপর শারীরিক নির্যাতন রোধে কী হওয়া উচিত আপনার ভূমিকা, সে সম্পর্কে জেনে নেই।
আপনার হুট করে রেগে যাওয়ার অভ্যাস কমান
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুরা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় বাবা-মা বা অভিভাবকের বদরাগী স্বভাবের জন্য। শিশুর লালন পালন সুস্থ ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে হলে আপনাকে এই বদরাগী স্বভাব বদলাতে হবে।
আপনার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো শিশুর থেকে দূরে রাখুন
নিজের ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যাগুলো আপনার শিশুর প্রাত্যহিক আর দশটা সমস্যার সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না। পারিবারিক যেকোনো সমস্যা, যেটা আপনার ছোট্ট সোনামণির পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়, এমন সব বিষয় থেকে শিশুকে দূরে রাখুন।
শিশুর কাছে ভালো শ্রোতা হয়ে উঠুন
শিশুরা এটা-ওটার বায়না করবেই, এক্ষেত্রে আপনি যদি শিশুর এসব চাহিদা পূরণ করতে অপারগ হন বা আপনার সন্তান যদি অনেক বেশি বায়না করা স্বভাবের হয়, সেক্ষেত্রে আপনি রাগারাগি করে বা মেরে বোঝানোর চেষ্টা না করে, তাকে আদর করে বুঝিয়ে বলুন। যেকোনো সময়েই আপনার শিশুর কথা গুরুত্ব সহকারে শুনুন।
নেশাগ্রস্থ অবস্থায় শিশুর থেকে দূরে থাকুন
যদি বাবা-মা অথবা অভিভাবক অ্যালকোহলিক হয়, সেক্ষেত্রে শিশুর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার মাত্রা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার এই বদভ্যাস ত্যাগ করুন; আর যত দিন তা ছাড়তে পারছেন না, তত দিন মদ্যপ অবস্থায় শিশুর থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করুন।
শিশুকে ঘরের বাইরে যাওয়ার সুযোগ দিন
প্রতিটি শিশুর সঠিক শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো বাইরের জগতের সাথে সংস্পর্শ থাকা। বাচ্চাকে ঘরে আটকে না রেখে তাকে বাইরে যাওয়ার পর্যাপ্ত সুযোগ দিন, অন্য বাচ্চাদের সাথে মেলামেশার সুযোগ করে দিন। এ উপায়ে শিশুর শারীরিক নির্যাতন অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ
শিশুর উপর যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে বাবা-মা বা অভিভাবকের সচেতনতার চেয়ে বড় প্রতিরোধক আর কিছু নেই। দেখে নিন শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধের কিছু উপায়।
শিশুদের বুঝিয়ে বলুন শরীরে কিছু অঙ্গ নিতান্তই ব্যক্তিগত
আপনার শিশুকে বুঝিয়ে বলুন, শরীরের কিছু অঙ্গ একান্তই ব্যক্তিগত, সবাই সেগুলো দেখতে বা ছুঁতে পারে না। বাচ্চাকে ছোট থেকেই তাদের শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে জানতে শেখান। যেমন- বাবা-মায়ের সামনে বাচ্চা পোশাক ছাড়া অবস্থায় থাকতে পারে, কিন্তু বাইরের কারো সামনে অবশ্যই পোশাক পরা অবস্থায় থাকতে হয়। শুধুমাত্র বাবা-মা কাপড় বদলে দেওয়া বা গোসল করিয়ে দেওয়া ও বাথরুম ব্যবহারের সময় পোশাক খুলে দিতে পারেন, এটি স্বাভাবিক।
আপনার শিশুকে শরীরের সীমানা সম্পর্কে বলুন
বাচ্চাকে শেখান, তার শরীরের কোন কোন অংশে অন্য কেউ স্পর্শ করতে পারে না এবং অন্য কেউ আপনার সন্তানকে তাদের শরীরের কোন অংশগুলোতে স্পর্শ করতে বলতে পারেন না। অনেকেই প্রথমটি সন্তানকে শিখিয়ে দিলেও, দ্বিতীয়টি সম্পর্কে বলার প্রয়োজন মনে করেন না। ফলে শিশুর উপর যৌন নির্যাতন অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় না। কারণ শিশুকে যৌন নির্যাতনের অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবে অপরাধী বাচ্চাদের দিয়ে নিজের শরীরের ব্যক্তিগত অংশে স্পর্শ করার পন্থা অবলম্বন করে।
শিশুকে বলুন শরীর সম্পর্কীয় গোপনীয়তা ঠিক নয়
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীরা শিশুদের বোঝায় যে, সে বাচ্চার সাথে যা করছে সেটি আসলে একধরনের গোপন খেলা, আর কাউকে এই গোপন খেলার কথা বলা যাবে না। এর ফলে হয়তো আপনার অজান্তেই দীর্ঘদিন আপনার সন্তান যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে চলে। বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলুন, এগুলো মোটেই খেলা নয়, আর যারা এই ধরনের খেলার কথা গোপন রাখতে বলে, তারা খারাপ মানুষ। তাই যা-ই ঘটুক বা যে-ই বলুক না কেন, এই ধরনের কিছু ঘটলে আপনার সন্তান যেন সেটা কখনো গোপন না রাখে, সে ব্যাপারে তাকে বুঝিয়ে বলুন।