Loading..

ম্যাগাজিন

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা কার্যক্রম বিস্তার ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা

বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃত। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার জন্য বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষাঅর্জনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন এবং প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বে সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাক্ষরতার কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশের বর্তমান সাক্ষরতার হার ৭৬.% ফলে প্রায় ২৩.% জনগোষ্ঠী এখনো নিরক্ষর, যারা কখনও বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি বা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনে নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরজ্ঞান কর্মমুখী প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা অত্যন্ত জরুরি।

মূলত দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করার জন্য তাৎক্ষণিক উপার্জনের উদ্দেশ্যে শৈশব থেকে কর্মে নিয়োজিত হয়। যার ফলশ্রুতিতে তারা আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় ভর্তি হয় না বা হলেও ঝরে পড়ে এবং তারা নিরক্ষর জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়। সকল নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় এনে শিক্ষিত করা সম্ভব নয় বিধায় তাদের বয়স, যোগ্যতা চাহিদার ভিত্তিতে স্থায়ী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এসকল নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে সাক্ষর করতে না পারলে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়।শিক্ষার সুযোগবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরজ্ঞানদান, জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, কারিগরি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকায়ন, দক্ষ মানবসম্পদে পরিণতকরণ, আত্ম-কর্মসংস্থানের যোগ্যতা সৃষ্টিকরণ এবং বিদ্যালয় বহির্ভূত ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষার বিকল্প সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেউপানুষ্ঠানিক শিক্ষা আইন, ২০১৪ প্রণীত হয়েছে। আইন অনুযায়ী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ধারায় উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা (-১৪ বছর) এবং উপানুষ্ঠানিক বয়স্ক জীবনব্যাপী শিক্ষা (১৫+ বছর) প্রদান করতে হবে। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ নিরক্ষর ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর বয়স শিক্ষা বিষয়কে ভিত্তি করে বয়স্ক উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা রয়েছে। এজন্য দেশে প্রাথমিক শিক্ষার ন্যায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা/বয়স্ক শিক্ষা এবং অব্যাহত জীবনব্যাপী শিক্ষা চর্চার একটি স্থায়ী পদ্ধতি থাকা দরকার।

আমরা বিশ্বাস করি, আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মাধমে সকল ঝরে পড়া শিশু নিরক্ষর যুব বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতা জ্ঞান প্রদান করতে হবে এবং জীবিকা অর্জনের মতো দক্ষ কারিগরি শিক্ষার আওতায় আনতে হবে। তাহলে দেশ আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে তাদের যোগ্যতা দক্ষতা দেখাতে পারবে। শ্রমের মজুরি বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে জীবন মানেরও উন্নতি হবে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার ওপর যথাযথ গুরুত্ব না দিতে পারলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শ্রমজীবী শিশু এবং বস্তি, হাওর বা পাহাড়ি এলাকার শিশু অর্থাৎ সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা বিভিন্ন অসামাজিক কর্ম যেমন- চুরি, ছিনতাই, মাদকাসক্ত ইত্যাদিতে জড়িয়ে পড়বে। সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের সমাজ, দেশ তথা জাতীয় উন্নয়নের প্রয়োজনেই বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া এবং ১৫+ বয়সী নিরক্ষরদের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার আওতায় এনে তাদেরকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় সাক্ষরজ্ঞান দান জীবিকায়ন দক্ষতা প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। তাহলে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে সমাজে অধিকতর কার্যকরভাবে মিকা রেখে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে।

বিগত জুন/২০২২- উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা) সমাপ্ত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬৪ জেলার ২৪৮টি উপজেলায় ১৫-৪৫ বছর বয়সের ৪৪.৬০ লক্ষ নিরক্ষরকে সাক্ষর করা হয়েছে। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-) এর সাব-কম্পোনেন্ট . এর আওতায় -১৪ বছর বয়সের বিদ্যালয় বহির্ভূত ১০ লক্ষ শিশুকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা পদ্ধতিতে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্নকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পিইডিপি- থেকে আগত লক্ষ বিদ্যালয়বহির্ভূত শিশুকে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান কার্যক্রম সমাপ্ত হয়েছে। অবশিষ্ট লাখের মধ্যে পর্যন্ত ৮০২৫৩৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে এবং ২৫,৭১২টি শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে জুন ২০২৩ পর্যন্ত ৩য় গ্রেড সম্পন্ন করেছে। এখন মাঠ পর্যায়ে পাঠদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী নীতিমালার আলোকে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয়সহ অন্য কর্মকর্তাগণের আন্তরিক সহযোগিতায় এবং যুগোপযোগী দিক নির্দেশনায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর ভবিষ্যৎ কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলমান আছে। ব্যুরোর জনবল কাঠামো শক্তিশালীকরণ, ব্যুরোর সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ সক্ষমতার আলোকে নিয়মিত কার্যক্রম গ্রহণ বাস্তবায়ন, ইত্যাদি বিষয় কর্ম-পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ের জনবল কাঠামো সৃষ্টি করা হয়েছে, এখন জনবল নিয়োগের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা যায় উপজেলা পর্যায়ে জনবল পদায়ন করা গেলে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এসডিজি- এর যে সকল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব হবে। পর্যন্ত উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে প্রকল্প আকারে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হলেও নিয়মিত কার্যক্রম (ঙঢ়বৎধঃরড়হধষ ধপঃরারঃরবং) গ্রহণ করা হয়নি। তাই ব্যুরোর নিজস্ব সাংগঠনিক সক্ষমতার সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে নিয়মিত কার্যক্রম (ঙঢ়বৎধঃরহধষ ধপঃরারবং) গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর ফলে সুবিধাবঞ্চিত ঝরেপড়া শিশু নিরক্ষর যুব বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে সাক্ষরতা, মৌলিক শিক্ষা (প্রাথমিক শিক্ষা সমমানের শিক্ষা), বাজার চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে শিক্ষার্থীদের ট্রেড ভিত্তিক জীবিকায়ন দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে, আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের সুযোগ পাবে, পাশাপাশি জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হবে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে পরিণত করা সম্ভবপর হবে।

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম বিস্তারের মাধ্যমে সাক্ষরতার হার শতভাগে উন্নীত করে বাংলাদেশ একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ সার্থকভাবে মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন করবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং বাংলাদেশ ২০৪১ সালের পূর্বেই উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে।

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের সঙ্গে জড়িত প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ। এছাড়া ইউনেস্কো ঢাকা, দাতা সংস্থাসমূহ, বেসরকারি সংস্থাসমূহের সার্বিক সহযোগিতায় নতুন মাত্রা পেয়েছে। বর্তমান সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত ব্যক্ত করছি।

আরো দেখুন