ম্যাগাজিন

‘বঙ্গবন্ধু চর’ সাগরের বুকে জেগে ওঠা নয়নাভিরাম

MD MAINUL ISLAM ১৮ সেপ্টেম্বর,২০২৩ ৪০ বার দেখা হয়েছে লাইক কমেন্ট ৫.০০ রেটিং ( )

সাগরের বুকে জেগে ওঠা নয়নাভিরাম

বঙ্গবন্ধু চর

 

বঙ্গবন্ধু চরে ম্যানগ্রোভ বনের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মাতে শুরু করেছে। সম্প্রতি সুন্দরবনের নীলকমল অভয়ারণ্যের পাশে বঙ্গবন্ধু চরে

বঙ্গোপসাগরের বুকে এক অন্য ভুবন, যার চারদিকে অথই জলরাশি আর ঢেউয়ের খেলা। মাঝখানে যেন এক টুকরা ভূমি। মূলত এটি দ্বীপ। তবে এটির নামবঙ্গবন্ধু চর প্রাকৃতিকভাবে চরটির একপাশে গড়ে উঠছে শ্বাসমূলীয় বন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেনা-অচেনা বাহারি পাখির কলতানে মুখর থাকে। চরের বালুতে অগণিত লাল কাঁকড়ার বিচরণ। নয়নাভিরাম নীল দিগন্তের মধ্যেবঙ্গবন্ধু চরএক অপরূপ সৌন্দর্যের হাতছানি।

সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের নীলকমল অভয়ারণ্য থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে গভীর সাগরে জেগে উঠেছে চরটি। সেখানে জোয়ারভাটায় সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা নানা প্রজাতির ফল থেকে বৃক্ষরাজি জন্মাতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে চরটির অর্ধেক এলাকাজুড়ে শ্বাসমূলীয় বৃক্ষের বন গড়ে উঠেছে। সাগর বুকে জেগে ওঠা চরটির আয়তন প্রায় আট বর্গকিলোমিটার। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই মিটার।

বন বিভাগ জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ ভক্ত মালেক ফরাজী নামের এক মৎস্যশিকারি ১৯৯২ সালে দুজন জেলেকে নিয়ে চরে আসেন। পরবর্তী সময়ে তিনি চরটির নামকরণ করেনবঙ্গবন্ধু চর সেই সঙ্গে টাঙিয়ে দেন একটি সাইন বোর্ডও। সেই থেকেই নতুন চরটিবঙ্গবন্ধু চরনামে পরিচিত।

 

সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা বিভিন্ন গাছের ফল বঙ্গবন্ধু চরের বালুতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু চরে গিয়ে দেখা যায়, চরের ওপর দল বেঁধে হাজার হাজার কাঁকড়া যেন লালগালিচা পেতে রেখেছে অতিথিদের জন্য। কাছে যেতেই গর্তে ঢুকে যায় কাঁকড়ার দল। চরে আটকে আছে সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা বিভিন্ন গাছের ফল। কোনো কোনো ফল থেকে জন্ম নিচ্ছে গাছের চারা। চরের পূর্ব পাশে গড়ে উঠছে সবুজ, শ্যামল বিস্তীর্ণ শ্বাসমূলীয় বন। বালু চরের ওপর কাশফুলের বাগান। এখানে এলে যে কেউ প্রকৃতির প্রেমে মুগ্ধ হবেন।

বঙ্গবন্ধু চরে যাওয়ার সময় নীলকমল ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন সুন্দরবনের শেষ সীমানা রেখে ট্রলারে কিছু দূরে যাওয়ার পরই সাগরের জলের রং অনেকটা পাল্টে গিয়ে নীলাভ আকার ধারণ করে। তবে পুরোপুরি নীল নয়। কাছাকাছি গেলে দেখা যায়, চরের ওপর ডানা ঝাঁপটা মেলে উড়ছে নানা প্রজাতির পাখি। করছে কলরব। পাখিরা কখনো উড়তে উড়তে সমুদ্রের গভীর সমুদ্রের দিকে চলে যায়। সুন্দরবনের নীলকমল ফরেস্ট স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু চরে ট্রলারে যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।

আগে জেলে সম্প্রদায়ের বাইরে চরটি সম্পর্কে তেমন একটা জানা-শোনা ছিল না। এখন দ্বীপ চরটি সম্পর্কে মানুষ জানতে পারছে। প্রায় ১৩ বছর আগে চরটি বন বিভাগের দৃষ্টিগোচর হয়। এর পর থেকেই সেখানে নিয়মিত তদারক করে যাচ্ছে বন বিভাগ।

 

 

বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠা প্রায় আট বর্গকিলোমিটার আয়তনেরবঙ্গবন্ধু চর ১০ সেপ্টেম্বর সুন্দরবনের নীলকমল অভয়ারণ্যের

সুন্দরবনের নীলকমল অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সময়ে মাছ ধরতে জেলেরা ট্রলার নিয়ে চরে গেলে ধীরে ধীরে জেলেদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু চরটি পরিচিতি পেতে থাকে। তবে আগে জেলে সম্প্রদায়ের বাইরে চরটি সম্পর্কে তেমন একটা জানা-শোনা ছিল না। এখন দ্বীপ চরটি সম্পর্কে মানুষ জানতে পারছে। প্রায় ১৩ বছর আগে চরটি বন বিভাগের দৃষ্টিগোচর হয়। এর পর থেকেই সেখানে নিয়মিত তদারক করে যাচ্ছে বন বিভাগ।

জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চরে একাধিক বাঘবসতি গড়ে তুলেছে। আমরা চরে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছি। শুধু তা নয়, বঙ্গবন্ধু চরে বিপন্ন প্রজাতির পাখি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বন্য পশুপাখি বিচরণ করতে দেখা গেছে। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু চরে ম্যানগ্রোভ বনের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ জন্মাতে শুরু করেছে। কারণে চরটি সংরক্ষণ সঠিক ব্যবস্থাপনায় রাখলে চর হয়ে উঠতে পারে আরেক সুন্দরবন।

বঙ্গবন্ধু চরে একাধিক বাঘবসতি গড়ে তুলেছে। আমরা চরে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছি। শুধু তা নয়, বঙ্গবন্ধু চরে বিপন্ন প্রজাতির পাখি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের বন্য পশুপাখি বিচরণ করতে দেখা গেছে।

 

সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা বিভিন্ন গাছের ফল চরের বালুতে পড়ে

বন বিভাগ স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে ২৯ সদস্যের একটি দল ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু চরে এসে টানা ১৬ দিন অবস্থান করে গবেষণা চালায়। তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে, চরটির আকৃতি কিছুটা অর্ধচন্দ্রাকৃতির। চরটির স্থায়ী পরিধি দশমিক ৮৪ বর্গ কিলোমিটার। বেশ কিছু সামুদ্রিক পাখি চরে বসতি গড়েছে। চরের চারপাশে প্রায় কিলোমিটার দীর্ঘ চোরাবালিমুক্ত নিরাপদ সৈকত রয়েছে। সৈকতে জঙ্গল লাল কাঁকড়ার আবাস আছে। চরটিতে হরিণসহ ৭০টি জীববৈচিত্র্যের সন্ধান পাওয়া গেছে।

সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক জেড এম হাসানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গবন্ধু চরের পাশে বন বিভাগের নীলকমল ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন সুন্দরবনের অভয়ারণ্য রয়েছে। চরটাও অভয়ারণ্যেরই অংশ। হরিণ শূকরের বেশ কয়েকটি পালও রয়েছে। ফলে বাঘ সেখানে বসতি গড়তে শুরু করেছে। ছাড়া চরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সমুদ্রসৈকতে ইরাবতী ডলফিনের বিশাল দল প্রায়ই ঘুরে বেড়ায়। যেহেতু এটা (বঙ্গবন্ধু চর) প্রাকৃতিক বন, তাই এটা সংরক্ষণ করাও তাঁদের কাজ। সেখানে যাতে বন্য প্রাণী নির্বিঘ্নে বসতি গড়তে পারে, সে জন্য তাঁরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

 

মতামত দিন
সাম্প্রতিক মন্তব্য
মোঃ মেরাজুল ইসলাম
২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০১:১৫ অপরাহ্ণ

✍️ সম্মানিত, বাতায়ন প্রেমীশিক্ষক-শিক্ষিকা , অ্যাম্বাসেডর , সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা , প্রেডাগোজি রেটার আমার সালাম রইল। রেটিং সহ আমি আপনাদের সাথে আছি। আমার বাতায়ন বাড়িতে আপনাদের আমন্ত্রণ রইলো। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন , নিজে সুস্থ্ থাকবেন, প্রিয়জনকে নিরাপদ রাখবেন।


গোলাম ফারুক
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৩:২১ অপরাহ্ণ

Best Wishes


ফিরোজ আহমেদ
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১০:২৭ অপরাহ্ণ

Best wishes for you with like, comment and full rating.