সিনিয়র শিক্ষক
১৮ নভেম্বর, ২০২৩ ০২:৫১ অপরাহ্ণ
হরতাল-অবরোধে ক্ষতির মুখে দুই কোটি শিক্ষার্থী
হরতাল-অবরোধে ক্ষতির মুখে দুই কোটি শিক্ষার্থী
শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ-হরতালে ক্ষতির
মুখে পড়েছে শিক্ষার্থীদের জীবন। অবরোধ-হরতালের প্রভাব পড়েছে সরকারি ও বেসরকারি
প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের প্রায় দুই কোটি শিক্ষার্থীর ওপর। সবচেয়ে বেশি
সমস্যায় পড়েছে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা।
শুধু পরীক্ষা নয়, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সারা দেশের
স্কুলগুলোতে নতুন বই পাঠানো হয়। হরতাল-অবরোধের কারণে এসব কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত
হচ্ছে। সহিংসতার আতঙ্কে স্কুলে কমে গেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।
করোনার কারণে দেড় বছর বন্ধ ছিল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই দশা
থেকে মুক্তি পেয়েই অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন, অটো
পাস এবং সবশেষ সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। তবে করোনার প্রভাবে
শিক্ষার্থীদের মাঝে শিখন ঘাটতি দেখা দিয়েছিল মারাত্মক আকারে।
সেই প্রভাব কাটিয়ে উঠে আগামী বছর পূর্ণ সিলেবাসে ও পূর্ণ নম্বরে
ফিরছে পাবলিক পরীক্ষা। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর
হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির কারণে আবার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত
হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নভেম্বরের মধ্যে
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
পরীক্ষা গ্রহণ ও মূল্যায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। হরতাল-অবরোধে বছর শেষে
বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের
অভিভাবকরা। এখন পর্যন্ত বড় ধরনের সমস্যা না হলেও পরবর্তী কর্মসূচিগুলো সহিংস হতে
পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সে কারণে বার্ষিক পরীক্ষা বা মূল্যায়ন ‘অসম্পূর্ণ’
রেখেই শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে হতে পারে বলে আশঙ্কা শিক্ষা-সংশ্লিষ্টদের।
নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়ন
৫ নভেম্বর শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছিল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে তা পিছিয়ে ৯ নভেম্বর থেকে শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। নতুন
শিক্ষাক্রম চালু হওয়া শ্রেণিগুলোতে ৯ নভেম্বর শুরু হয়েছে মূল্যায়ন। এখন দ্বিতীয়
পর্যায়ের মূল্যায়ন চলছে।
১৯ নভেম্বর তৃতীয় ও শেষ পর্যায়ের মূল্যায়ন শুরু হবে। চলবে ৩০
নভেম্বর পর্যন্ত। এদিকে বার্ষিক পরীক্ষাও শুরু হয়েছে নভেম্বরের শুরুতে। চলতি মাসের
মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষাও শেষ করতে হবে। অন্যদিকে, কিন্ডারগার্টেনগুলোতে
এখনো ক্লাস চলছে। তবে উপস্থিতি কম। আগামী ২২ নভেম্বর কিন্ডারগার্টেনগুলোতে পরীক্ষা
শুরু হতে পারে।
মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) এবিএম আলীনূর রহমান
বলেন,
‘মাউশির নির্দেশে স্কুল খোলা রাখছি। এখন পরীক্ষার সময়। কোনো পরীক্ষা
পেছায়নি। বরং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়ন পরীক্ষা শনিবার বন্ধের দিনে নিতে
হচ্ছে। তার পরও রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে উদ্বেগ তো আছেই।’
অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ‘রাজনৈতিক
দলগুলো শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে না। তাদের কর্মসূচির কারণে
শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন। সে কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর আরও সহনশীল
হওয়া প্রয়োজন।’
কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য
পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেনে এখনো
পরীক্ষা শুরু হয়নি। ক্লাস চললেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। আগামী ২২ নভেম্বর থেকে
পরীক্ষা শুরু হতে পারে। হরতাল-অবরোধের কারণে অভিভাবকদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ
করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় শুক্র ও শনিবারও পরীক্ষা হতে পারে।’
হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি নবীন প্রজন্মের অপূরণীয় ক্ষতি করছে বলে
মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘রাজনীতির
মূল লক্ষ্য আমাদের প্রজন্মের অধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি,
এখন হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচির কারণে চাকরির পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন, ক্লাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে
একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারছে না। শুধু তাই নয়, সে
মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হচ্ছে। কারণ তার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার অংশ ছিল এই
মূল্যায়ন।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ
গোলাম ফারুক বলেন, ‘দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন শিক্ষাক্রম শুরু
হয়েছে। সবার কাছে নতুন হওয়ায় অনেকে তা বুঝে উঠতে পারছেন না। স্কুলে স্কুলে
মূল্যায়ন হচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অবশ্যই তা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। আমাদের
লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে
আমাদের একদিনও অপচয় করা যাবে না। প্রতিটি দিন, ঘণ্টা,
মিনিট আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে
স্কুলে আসতে চায়। ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে চায়। নতুন কারিকুলামের আলোকে মূল্যায়নে
অংশ নিতে চায়। সেজন্য শিক্ষার্থীরা স্কুলে স্কুলে মানববন্ধনও করেছে। বিএনপিকে বলব,
বিদেশে পালিয়ে থাকা ব্যক্তির নির্দেশে দেশ ধ্বংসের কর্মসূচি না দিয়ে
শিক্ষার্থীদের কথা ভাবুন, দেশের কথা ভাবুন।’
শিক্ষাবার্তা ডট
কম/এএইচএম/১৮/১১/২০২৩