Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

১৫ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪ ০৬:২৪ অপরাহ্ণ

ঈদে মিলাদুন্নবী

দরুদ ও সালামের মাস মাহে রবিউল আউয়াল মাস। মুসলমানরা বছরজুড়ে অপেক্ষা করে থাকে মিলাদুন্নবীর মাস, রবিউল আউয়াল মাস কখন আসবে। ঈদে মিলাদুন্নবীর মাস মাহে রবিউল আউয়াল বছর ঘুরে আবারো সমাগত। রবিউল নূর মাস পবিত্র একটি মাস। সারাবিশ্বে এ পবিত্র মাসে আনন্দের আমেজ বয়ে চলে। মানবতার কল্যাণ তথা দুনিয়া ও পরকালে মুক্তির পথনির্দেশনার জন্য আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য নবী ও রাসূল পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। নবী-রাসূলগণের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন মানবতার মুক্তির দিশারী প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নবী রাসূল প্রেরণের ক্রমধারায় শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আর্বিভাব ছিল একটি বিস্ময়কর ব্যাপার। আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবীব কে এ পবিত্র মাস রবিউল নূর মাসে অন্ধকার কে আলোকিত করার জন্য বিশ্বভুবনে পাঠিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভ আগমনের দিন কেবল মুসলমান নয়, আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিজগতের সকলের জন্য আনন্দ ও রহমতের দিন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন- ‘আমি আপনাকে জগতসমূহের রহমত করে প্রেরণ করেছি।’ পবিত্র কোরআনের অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- ‘হে নবী! আমি আপনাকে সব মানুষের জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।’ [সুরা-৩৪ সাবা, আয়াত: ২৮] এ আনন্দ মাস ও দিনকে কেন্দ্র করে সারাবিশ্বে নবীজির আগমনের শুকরিয়া আদায়ে এবং আনন্দ-খুশিতে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করে থাকেন সারা বিশ্বের মুসলমানগণ। সারাবিশ্বে অত্যন্ত ভক্তি ও মর্যাদার সাথে রবিউল আউয়াল মাসে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেন। এটি একটি শরীয়তসম্মত এবং পূর্ণময় আমল, যা কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। বিভিন্ন রাষ্টের মধ্যে সরকারি ভাবেও উদযাপন করে থাকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:)।

ঈদে মিলাদুন্নবী’ শব্দটি যৌগিক শব্দ। যা তিনটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। ১. ঈদ, ২. মিলাদ ও ৩. নবী। প্রথমত, ঈদ শব্দটি আরবি৷ এর শাব্দিক অর্থ হলো- আনন্দ, খুশি, উৎসব ইত্যাদি। মুফতি আমীনূল ইহসান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন- ‘কোন মর্যাদাবান ব্যক্তিকে স্মরণের দিন বা সমবেত হওয়ার দিনকে ঈদের দিন বলা হয়।’ দ্বিতীয় শব্দ হলো মিলাদ৷ মিলাদ শব্দটি আরবি। এর শাব্দিক অর্থ হলো- জন্মদিন বা জন্মকাল ইত্যাদি। তৃতীয় শব্দ হলো নবী। এখানে নবী বলতে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং ঈদে মিলাদুন্নবীর অর্থ হলো- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমন উপলক্ষে আনন্দ উদযাপন করা।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন উপলক্ষে আনন্দিত ও খুশি হওয়া এবং এ মর্যাদাপূর্ণ নিয়ামতের জন্য সৎকাজ ও ইবাদত বন্দেগি করার মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করাকে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে। ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা বৈধ ও শরীয়ত সম্মত। এটি পালন করা উত্তম। যা পবিত্র কোরআনুল কারীম ও হাদিস শরীফের মাধ্যমে প্রমাণ পায়। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন মাজীদে নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার জন্য বলেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদের কে স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ প্রত্যেক মানুষের ওপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা অপরিহার্য। শুকরিয়া আদায় করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়। যেমন:- নিয়ামতের বর্ণনা দেওয়া, ঈদ পালন করা ইত্যাদি। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ করেছিলেন যে, তাদের জন্য আসমান থেকে যেন খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা অবতীর্ণ করেন। তা যদি অবতীর্ণ করা হয় সেদিনের নিয়ামত হিসেবে ঈদের দিন পালন করবেন হযরত ঈসা আলাইহি সালাম ও তাঁর অনুসারিরা। মহান রাব্বুল আলামিন রবিবারে তা অবতীর্ণ করেন। রবিবারে অবতীর্ণ করার কারণে আজও রবিবারকে ঈদের দিন হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা ঈসা আলাইহি সালামের ঈদের দিন উদযাপন কে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং রবিবার ঈদের দিন উদযাপন না করার কোন প্রকার নিষেধ করেননি। অতএব বুঝা যাই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের জন্য এবং নিয়ামত পাবার দিনকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করা বৈধ। নিঃসন্দেহে ঈদের দিন হিসেবে মানা এবং পালন করা শরীয়তসম্মত।

বিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া কে স্মরণ করে সেটার ওপর তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। তা তাদের সঞ্চয়কৃত সমস্ত ধন-সম্পদ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর৷’ আরেকটি আয়াতের মধ্যে বলা হয়েছে- ‘হে হাবীব! আপনি বলুন, আল্লাহর দয়া এবং রহমতকে উপলক্ষ করে তারা যেন আনন্দ উদযাপন করে এবং তা হবে তাদের সমস্ত ধন-দৌলত অপেক্ষা শ্রেয়। [সূরা ইউনুস, আয়াত-৫৮] বিশিষ্ট তাবেয়ী হাসান বসরী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঈদে মিলাদুন্নবী প্রসঙ্গে বলেন- ‘আমার মন চায়, যদি আমার কাছে উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকত, তাহলে আমি সবগুলো মিলাদুন্নবী পালনে খরচ করতাম। হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ঈদে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে বলেন- ‘যে ব্যক্তি মিলাদুন্নবী মাহফিলে উপস্হিত হয়েছে এবং তার যথাযথ সম্মান করেছে তার ঈমান সফল হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ববাসীর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত। তিনি সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল। তার পরে আর কোন নবী পৃথিবীতে আগমন করবেন না। তিনি পৃথিবীতে এসে আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ বা অন্ধকার যুগ থেকে আলোকিত করেছেন বিশ্বকে৷ তিনি পৃথিবীতে এসে সারাবিশ্বে ইসলাম প্রচার করেছেন। সারাবিশ্বে মসজিদ বানিয়েছেন। সারাবিশ্বের আজানের ধ্বনিতে মুখরিত করেছেন। মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এনেছেন মিরাজ রজনীতে। পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। ইসলামের জান্ডায় মুখরিত করেছেন সারাবিশ্বকে। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পাবার কারণে খুশি উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। রবিউল আউয়াল মাসে প্রিয় নবীর পৃথিবীতে আগমনের কারণে সেই খুশিতে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা হয়। মিলাদুন্নবী কে কেন্দ্র করে খুশি উদযাপন করাই হলো ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)। যা পালন করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ তায়ালায় বলেছেন। এ পবিত্র মাস রবিউল আউয়াল মাসে সবচেয়ে বড় ওযীফা হচ্ছে দৈনিক দরুদ শরীফ পাঠ করা। এছাড়াও নফল রোযা রাখা এবং বেশি বেশি নফল নামায আদায় করা যাই৷ পবিত্র কোরআনুল কারীম এবং হাদীস শরীফের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ পাই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম উপলক্ষে ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উদযাপন করা শুধু বৈধ নয় বরং তা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ এবং উত্তম কাজ। এটি পালন করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত।https://www.apandesh.com/religion/news/11228

আরো দেখুন