Loading..

নেতৃত্বের গল্প

২১ এপ্রিল, ২০২৪ ০৩:৪৪ অপরাহ্ণ

বিদ্যালয়ে আমার বিভিন্ন কার্যক্রম

আমার বিদ্যালয়ের নাম -মাশরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুড়িচং, কুমিল্লা। আমি এই বিদ্যালয়ে বদলী হয়ে আসি ২০১৯ সালের ২৮ শে মার্চ।আমি এই বিদ্যালয়ে আসার পর অনেক নেতিবাচক কথা শুনি বিদ্যালয়টি সম্পর্কে ও কর্মরত শিক্ষকদের নামে। শিশু জরিপ ও হোম ভিজিট করতে গেলে অভিভাবকরা নানা অভিযোগ করেন বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের সম্পর্কে। মনে মনে একটি চ্যালেঞ্জ নেই এই বিদ্যালয়ে যখন এসেই পড়েছি বিদ্যালয়টিকে কিভাবে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারি , পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করতে পারি , আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারি এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারি। মাঝখানে বাধা পড়ল( কোভিড -১৯ ) করোনা ভাইরাস।এর কারণে আমার কার্যক্রমে কিছুটা বাধা পড়ল।২০২২ সাল থেকে আবার পুরোদমে কাজ শুরু করে দেই। আসলে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকবৃন্দের মন মানসিকতা ও চিন্তাধারা এক না হলে কাজ করা একটু কঠিন হয়ে পড়ে। তারপর ও আমার বিদ্যালয়ে বদলী হয়ে আসা ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে একজন পুরুষ সহকারী শিক্ষক আসেন। তিনি ও খুব ইতিবাচক সাড়া প্রদান করে আমার কাজকে আরও সহজ করে দিয়েছেন। আমার পাশে এসে আমার কাজে সহযোগিতা প্রদান করেছেন আমার বিদ্যালয়ের তিন সহকারী শিক্ষক।বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও পিটিএ কমিটির সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় প্রথমে বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকায় উঠান বৈঠক করে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তির সংখ্যা বৃদ্ধি করার বিষয়ে মা ও অভিভাবকদের বুঝিয়ে বলি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের ভর্তি করানোর পজিটিভ দিকগুলো তুলে ধরি। শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া উচিত। শিশু জরিপ করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মা ও অভিভাবকদের বুঝিয়ে বলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কেন সন্কতান ভর্তি করাবেন। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ শিক্ষক দিয়ে আনন্দদায়ক পরিবেশে শিক্ষার্থীদের সহজবোধ্য পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।পাঠ্যবইয়ের কোনো চাপ নেই এবং শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া হয় না। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ক্যাচমেন্ট এলাকায় ভর্তির লিফলেট বিতরণ করা হয়।ভর্তি ব্যানার , লিফলেট ও ঢোল পিটিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য প্রত্যেক বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্কুলে ভর্তির জন্য অভিভাবকদের উৎসাহিত করা হয়। শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্মের ও নতুনত্ব আনি ২০২৪ সালে। ইউনিফর্মের সাথে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নতুন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে টাই উপহার দেওয়া হয়েছে।শহর থেকে ইউনিফর্মের কাপড় নিয়ে দেই যেন কালারের কোনো সমস্যা না হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট শিক্ষার্থী হওয়া একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহর রহমতে শতভাগ শিক্ষার্থী ফুল ইউনিফর্ম বানিয়ে জানুয়ারি মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ করতে পেরেছে।যাদের আর্থিক সমস্যা আছে তাদের নিজ অর্থায়নে ইউনিফর্মের কাপড় কিনে দিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে এই বছর শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৯ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৮৬ হয়েছে।বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে স্কুল ডায়রি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে "পাড়া বন্ধু" দল গঠন করে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করেছি। শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে পাঠদান কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের রিডিং পড়ার জন্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে।এই রিডিং প্রতিযোগিতার জন্য শিক্ষার্থীদের আলাদা শীট দেওয়া হয় এবং গল্পের বই দেওয়া হয়। তাছাড়া বিদ্যালয়ে  বনভোজন ,ক্লাস পার্টি ও শিক্ষার্থীদের দিয়ে ক্ষুদে বক্তা হিসেবে তৈরি করতে উৎসাহিত করা হয়।সব মিলিয়ে বিদ্যালয়টি এখন একটি আনন্দময় শিখনক্ষেত্র হিসেবে এলাকার সব মানুষের চোখে একটি আদর্শ বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।