Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

০১ মে, ২০২৪ ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ

প্রকুতির নীরব ভাষা

প্রকৃতির নীরব ভাষা:-
মানুষের মনের চেতনা অনুযায়ী তার দেহ গঠিত হয়েছে। মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের মতো দেখতে বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, ঔষধি উদ্ভিদের ফুল পৃথিবীতে উৎপাদিত হচ্ছে। শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গের সুস্থতার জন্য ঐ সাদৃশ্য দেখে খাদ্য-পথ্য- ঔষধি উদ্ভিদকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ সুস্থ হয়।
যেমন-
১. অন্ত্রনালী: পেটের অন্ত্রনালীর মত দেখতে আঁদা, বরবটি, তেতুল, সীম, বানরলাঠি, সাজনা, মটরশুটি, অড়হর, কূচ মাছ মাছ,গবাদিপশুর ভূরি। এগুলো খেলে অন্ত্রনালী যথাযথ ভাবে কাজ করে।
২.পাকস্থলী: পাকস্থলীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ভেষজগুলো হচ্ছে লাউ, পেপে, আম, চালকুমড়া, প্রাণির পাকস্থলী। এগুলো খেলে পাকস্থলীর গোলযোগ সেরে যায়।
৩. হৃদপিণ্ড:- টমেটোতে হৃদপিণ্ডের মতো চারটি প্রকোষ্ঠ এবং হৃদপিণ্ডের রংয়ের মতো লাল রং বিদ্যমান। সেজন্য এটি হৃদরোগ নিরাময়ে সহযোগী। হৃদপিণ্ডের অনুরুপ অন্যান্য ভেষজগুলো হলো স্ট্রবেরী, রসুন, কালো আঙ্গুর, শরিফা, কাজুবাদাম, হার্ট নাট ইত্যাদি।
৪. চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ এন্টিব্রেস্ট ক্যন্সার উপাদান পেয়েছেন কমলা, ফুলকপি, বাধাকপি,ডালিম, আতা, কদবেল, ব্রকলি, নোনি, জাম্বুরা, বিলাতি গাব ও মাকালফলে। স্তনের সাথে এগুলোর সাদৃশ্য প্রকৃতির সেই নীরব ভাষারই ইঙ্গিত দেয়।
৫. কিডনি: কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায় শিম বীজ, কিডনি শিম, কস্তরীলতা বীজ, ঋষি মাশরুম ইত্যাদি। এগুলো দেখতে কিডনি মতো।
৬. প্যানক্রিয়াস: প্যানক্রিয়াসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ভেষজ হলো করলা, গুরমার বুটি, স্টেভিয়া পাতা, নিমপাতা, বনধনিয়া, যজ্ঞ ডুমুর ইত্যাদি। শরীরের গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রন ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রনে এগুলো কার্যকর।
৭. কান: মানুষের কানের সাথে সাদৃশ্যহেতু কানদুলি, ঋষি মাশরুম, ওয়েষ্টার মাশরুম, ঝিনুকের খোসা, শামুক। এসব দিয়ে কানের সুস্থতা বজায়ের ঔষধ তৈরি করা হয়।
৮. কলা, লবঙ্গ, জিনসেং, শিমুল মূল, মূলা, গাজর, শশা, লিঙ্গ মাশরুম ও বচ পুরুষাঙ্গের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ এগুলো পুরুষাঙ্গের সমস্যা নিরসনে কাচ করে।
৯. অণ্ডকোষের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে শরিফা, খোরমা খেজুর, কালোজাম, কাঠালবীজ, কিসমিস, অশ্বগন্ধা, লিচু, আলকুশী বীজ, সফেদা ইত্যাদির। অণ্ডকোষের সমস্যা নিরসনে এগুলো উপকারী।
১০. তেমনিভাবে অপরাজিতা ফুল, গম, যব,এলাচি, নীলোৎপল, ছোলা, মেথি, জৈন, বটগাছের পাতা ইত্যাদির সাথে স্ত্রী জননাঙ্গের মিল থাকায় জননতন্ত্রের সুস্থতার জন্য এগুলো খুবই উপকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
১১. মস্তিস্ক: সুপারির গঠন মস্তিস্কের মত। কাঁচা সুপারি ভিজিয়ে খেলে মস্তিস্কের পরিচালনা শক্তি বাড়ে। মস্তিষ্কের ডিজাইনের মতো দেখতে অনুরুপ আরো ভেষজগুলো হচ্ছে- আখরোট, নারিকেল, জায়ফল, তাল, বাদাম, প্রাণির মগজ, রুদ্রাক্ষ, থানকুনি ও জিংগোবইলোবার পাতা।
১২. চুল: চুলের সাথে সাদৃশ্য আছে নারিকেল, তালের আঁশ, পিঁয়াজ, রসুন, জাফরান, ভুট্রার চুল, কাকরোল, স্পিরুলিনা, কালোকেশী গাছ, স্বর্ণলতা, বটের ঝুরি ও জটামাংসীর। চুলপড়া রোধসহ চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে তাই এসব ব্যবহার করা হয়।
১৩. ত্বক: ত্বকের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে কমলার খোসা, দারুচিনি, কাঁচা হলুদ, শসা, ডালিম, ঘৃতকুমারি, ছোলা, শিমুলগাছের কাটা, চন্দন ইত্যাদি।
১৪. গর্ভফুল: গর্ভফুলের সাথে আনারসের সাদৃশ্য রয়েছে। প্রসবপরবর্তী গর্ভফুল ফেলতে কাঁচা আনারস কার্যকর। তবে আনারস গর্ভবতী মহিলাদের সেবন নিষেধ। এতে গর্ভপাত হয়ে যায়।
অলটারনেটিভ চিকিৎসার সিক্রেট: আমি ইউনানী, আয়ুর্বেদ এবং হোমিও বিষয়ে কোর্স করতে গিয়ে অলটারনেটিভ চিকিৎসার মূল সিক্রেট হিসেবে এই সাদৃশ্য বিধানটি উপলব্ধি করতে পেরেছি। সহজ ভাষায় এটি শেয়ার করলাম। প্রাকৃতিক মেডিসিন তৈরিতে এগুলোই বিবেচনা করা হয়। পরিশেষে আরেকটি সাদৃশ্য থিওরি শেয়ার করছি। তা হলো আপনি যে এলাকার বাসিন্দা, সে এলাকায় সিজনাল ফল ও সবজি খাবেন। যে সিজনে যে ফল বা সবজি পাওয়া যায়, ওই সিজনে ওই ফল বা সবজি ওই সিজনাল রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।
পরিশেষে প্রাসঙ্গিক একটি টিপস জানিয়ে লেখা শেষ করছি। আপনি যদি ঠান্ডা প্রকৃতির মানুষ হন; তাহলে পিচ্ছিল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলবেন। এতে কোল্ড এলার্জিজনিত সমস্যা, হাঁপানি এসবে আক্রান্ত হবেন না। আর আপনি গরম প্রকৃতির মানুষ হলে ঠান্ডা খাদ্য পথ্য খাবেন, তাহলে আপনি ব্যালেন্স ফিল করবেন ।