![img](https://teachers.gov.bd/shared/profile_pictures/2024/March/01/170931101465e20426666e8_thumb.webp)
প্রধান শিক্ষক
![](https://teachers.gov.bd/shared/content_image/2024/June/28/1719592661667ee6d5a5b9b.webp)
২৮ জুন, ২০২৪ ১০:৩৭ অপরাহ্ণ
প্রধান শিক্ষক
ধরন: সাধারণ শিক্ষা
শ্রেণি: পঞ্চম
বিষয়: আমার বাংলা বই
অধ্যায়: তৃতীয় অধ্যায়
ভূমিকা : বাংলাদেশের দক্ষিণে রয়েছে প্রকৃতির অপার সম্ভার সুন্দরবন। সমুদ্রের কোলঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই বিশাল বন। এটি পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এখানে যেমন রয়েছে প্রচুর গাছপালা, তেমনি রয়েছে নানা প্রাণী ও জীবজন্তু।
অবস্থান : সুন্দরবনের ৬২ শতাংশ বাংলাদেশের খুলনা জেলায় এবং ৩৮ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত। বর্তমানে এ বনভূমির আয়তন ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার।
সুন্দরবনের মাটি : বাংলাদেশের অভ্যন্তরের তুলনায় সুন্দরবনের মাটি একটু আলাদা ধরনের। জোয়ার-ভাটার কারণে এখানকার পানিতে জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা বেশি।এখানকার মাটি পলিযুক্ত দোঁ-আশ।
সুন্দরবনের তাপমাত্রা : এ বনের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩১ ডিগ্রি এবং সর্বনিম্ন ২১ ডিগ্রি।
সুন্দরবনের উদ্ভিদ ফুল : সুন্দরবনের উদ্ভিদ ফুল বৈচিত্র্যময়। এখানে রয়েছে সুন্দরী, গরান, গেওয়া, কেওড়া, ওড়া, পশুর, ধুন্দল, বাইন প্রভৃতি।এ ছাড়া সুন্দরবনের প্রায় সবখানেই জন্মে গোলপাতা।
সুন্দরবনের প্রাণী : বিচিত্র সব প্রাণীর বাস সুন্দরবনে। এ বনে প্রায় ৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫০ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩২০ প্রজাতির পাখি, ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং ৪০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার : সুন্দরবনের প্রাণীদের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবী বিখ্যাত। বাংলাদেশের নামের সঙ্গে এ বাঘের নাম জড়িয়ে আছে।সুন্দরবনের এ বাঘ দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি আবার ভয়ংকরও। এর চালচলনও রাজার মতো। সুন্দরবনের ভেজা স্যাঁতসেঁতে গোলপাতার বনে এই বাঘ ঘুরে বেড়ায়, শিকার করে জীবজন্তু, সুযোগ পেলে মানুষও খায়। রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও একসময় সুন্দরবনে ছিল চিতাবাঘ ও ওলবাঘ। এখন আর এসব বাঘ দেখা যায় না। প্রাণীবিদরা বলেছেন, সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। এ বাঘকে বিলুপ্তির হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে হবে।
সুন্দরবনের অন্যান্য প্রাণী : সুন্দরবনে বাঘ ছাড়াও আছে নানা রকমের হরিণ। কোনোটার বড় বড় শিং, কোনোটার গায়ে ফোটা ফোটা সাদা দাগ। এদের বলে চিত্রা হরিণ। একসময় সুন্দরবনে প্রচুর গণ্ডার, হাতি আর বুনো শুয়োরও ছিল। এখন এসব প্রাণী আর নেই। তবে দেশের রাঙামাটি আর বান্দরবানের জঙ্গলে হাতি দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া রয়েছে বানর, বনবিড়াল, শজারু ও উদ।
সুন্দরবনের পাখি : এ বনের পাখির মধ্যে রয়েছে বক, সারস, হাড়গিলা, কাদাখোঁচা, লেনজা ও হট্টিটি। সমুদ্র উপকূলে দেখা যায় গাঙচিল, জলকবুতর, টার্ন। এ ছাড়া এই বনে চিল, ইগল, মাছরাঙা, কাঠঠোকরা, ভগীরথ, পেঁচা, মধুপায়ী, হাঁড়িচাচা ও শকুন রয়েছে। একসময়ে সুন্দরবনে শকুন প্রচুর দেখা যেত; কিন্তু এখন এটি বিলুপ্তপ্রায় পাখি।
জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ : যেকোনো দেশের জন্যই জীবজন্তু পশুপাখি এক অমূল্য সম্পদ। দেশের জলবায়ু ও আবহাওয়া গাছপালা, বৃক্ষলতা ইত্যাদি প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলেই সে দেশের প্রাণিকুল জীবন ধারণ করে থাকে। একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে পৃথিবীতে অপ্রয়োজনীয় প্রাণী বা বৃক্ষলতা বলতে কিছুই নেই। যেমন—শকুন পাখি মানুষের পক্ষে যা ক্ষতিকর, সেসব আবর্জনা খেয়ে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখে।
উপসংহার : প্রাণী, বৃক্ষলতা সব কিছুই প্রকৃতির দান। তাকে ধ্বংস করতে নেই। ধ্বংস করলে প্রকৃতিতে নেমে আসে খরা, বন্যা, ঝড় ইত্যাদির মতো নানা বিপর্যয়। প্রকৃতিতে যদি বিপর্যয় ঘটে, তবে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা পশুপাখি ও জীবজন্তুর জীবনও বিপন্ন হয়। সুন্দরবনের অনেক প্রাণী প্রাকৃতিক পরিবর্তন ও বিপর্যয়ের ফলে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেসব প্রাণী আছে, তাদের বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে হবে। কারণ সুন্দরবনের সব প্রাণী আমাদের জাতীয় সম্পদ।