Loading..

প্রকাশনা

২৫ ফেব্রুয়ারি , ২০১৪ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সততার পুরষ্কার
ক্লাসে কিছু ছাত্র থাকে যারা- যেমন বুদ্ধিমান তেমনি জ্ঞানী। আবার কিছু ছাত্র আছে যাদের স্মৃতি শক্তি একেবারে দুর্বল এবং অনেক পড়াশুনার পরও কিছুই মনে রাখতে পারে না। তাদের মূল সমস্যা হলো বুদ্ধি বা কৌশলের অভাব। তারা যদি সঠিক নিয়মে অর্থাৎ বুদ্ধি খাটিয়ে পড়াশুনা করতো তাহলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। শুধু স্কুলেই নয়,আমাদের সমাজের পরতে পরতে বুদ্ধিমান ও বুদ্ধিহীন এই দুই শ্রেণীর মানুষ দেখা যায়। বুদ্ধিমানরা যেমন জীবনে সাফল্য ও সম্মান লাভ করে তেমনি বুদ্ধিহীনরা পদে পদে বিপদে পড়ে। তো রংধনু আসরে আজ আমরা এক বুদ্ধিমান ও সৎ লোকের গল্প প্রচার করেছি। অনেক দিন আগের কথা। এক বাদশাহর দরবারে আব্দুল করিম নামে এক চাকর কাজ করতো। বাদশাহ তাকে খুব বিশ্বাস করতো এবং ভাল বাসতো। তার প্রতি বাদশাহর আন্তরিকতা দেখে দরবারের অন্যান্য চাকরা হিংসা করতে লাগলো। একবার দরবারের সকল চাকর-বাকর মিলে বাদশাহর কাছে আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে নালিশ করলো। তাদের একজন বললো, জাঁহাপনা, আমরা জানতে পেরেছি যে, আব্দুল করিম আপনার বাজার সদাই করে প্রতিদিনই কিছু কিছু পয়সা বাঁচিয়ে রাখে এবং নিজে সেগুলো আত্মসাৎ করে। আপনাকে ধোঁকা দেয়ার জন্য সে সব সময় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে বলে। আব্দুল করিমের বিরুদ্ধের চাকরদের অভিযোগ শোনার পর বাদশাহ বললেন, 'ঠিক আছে, এখন থেকে আমি তার প্রতি খুব কড়া নজর রাখবো-যাতে সে আর আমাকে ধোঁকা দিতে না পারে।' বাদশাহর কথা শুনে চাকররা মনে মনে খুশী হয়ে দরবার ত্যাগ করলো। এর কয়েকদিন পরের কথা। বাদশাহ জানতে পারলেন, শহরে এক লোক এসেছে, যে আংটির ওপর নাম লিখে দেয়। বাদশাহ তার আংটির ওপর নাম লিখানোর ইচ্ছা করলেন। তিনি এক চাকরকে ডেকে বললেন, ঐ লিপিকারের কাছ থেকে জেনে এসো তো, সে নাম লিখতে অক্ষর প্রতি কত করে নেয়? চাকর গিয়ে লিপিকারের কাছ থেকে জেনে এসে বাদশাহকে জানালো যে, সে আংটির ওপর নাম লিখতে অক্ষর প্রতি পঞ্চাশ পয়সা করে নেয়। এবার বাদশাহ বললেন, যাও আব্দুল করিমকে পাঠিয়ে দাও। বাদশাহর তলব পেয়ে আব্দুল করিম এসে হাজির হলো। বাদশাহ তাকে বললেন, 'শহরের অমুক স্থানে একজন লিপিকার এসেছে। আমি তার কাছ থেকে আংটিতে আমার নাম লেখাতে চাই। তুমি এক্ষুনি তার কাছ থেকে আরবীতে আমার নাম 'হাসান' লিখে নিয়ে এসো।' এই বলে বাদশাহ তাকে এক টাকা পঞ্চাশ পয়সা এবং তার আংটিটি দিয়ে দিলেন। বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো যে, বাদশাহ কেন এক টাকা পঞ্চাশ পয়সা দিলেন ? বাদশাহর নাম হাসান লিখতে আরবীতে তিনটি অক্ষর অর্থাৎ হা,সীন ও নুন লাগে। অক্ষর প্রতি পঞ্চাশ পয়সা করে নিলে খরচ আসে, এক টাকা পঞ্চাশ পয়সা অর্থাৎ দেড় টাকা। টাকা নিয়ে আব্দুল করিম নাম লেখাতে চলে গেলো এবং কিছুক্ষণ পর আংটির ওপর বাদশাহর না 'হাসান' লিখিয়ে নিয়ে এলো এবং বাদশাহকে আংটির সাথে পঞ্চাশ পয়সা ফেরত দিলো। পয়সা ফেরত পেয়ে বাদশাহ খুবই আশ্চর্য হলেন! তিনি মনে মনে ভাবলেন, 'আমি তো তাকে হিসাব করে পয়সা দিয়েছি,তাহলে সে পঞ্চাশ পয়সা বাঁচালো কি করে ? আর বাঁচিয়েছিলো ভাল কথা কিন্তু আমাকে তা ফেরত না দিলে তো আমার বুঝার কোন উপায় ছিলো না। তাহলে দরবারের চাকররা যে অভিযোগ করেছে তা নিশ্চয়ই সত্য নয়।' এসব ভাবনা-চিন্তার পর বাদশাহ আব্দুল করিমকে লক্ষ্য করে বললেন, আচ্ছা তুমি বলোতো, লিপিকার প্রতি হরফ প্রতি কত পয়সা নিয়ে থাকে ? আব্দুল করিম জবাব দিলেঅ, সে হরফ প্রতি পঞ্চাশ পয়সা নিয়ে থাকে। বাদশাহ বললেন, তুমি ঠিকই বলেছো। কারণ, তোমাকে পাঠানোর আগে আমি অন্য একজনকে পাঠিয়ে জেনেছি যে, লিপিকার অক্ষর প্রতি পঞ্চাশ পয়সা নেয়। তাই আমি তোমাকে হিসাব করে এক টাকা পঞ্চাশ পয়সা দিয়েছি। তারপরও তুমি পয়সা বাঁচালে কি করে? আব্দুল করিম এবার মুচকি হেসে বললো, জাঁহাপনা, আপনি যখন পয়সা বাঁচানোর রহস্য জানতে চাইছেন তবে বলছি, আমি ঐ লিপিকারের কাছে গিয়ে হাসান লেখার পরিবর্তে 'খস' লিখতে বললাম। আরবীতে 'খস' লিখতে দরকার হয়,'খা' আর 'সীন' এই দুটি অক্ষর। আমার কথামতো লিপিকার যখন 'হা' ও 'সীন' লিখলো এবং 'হা' এর উপর ফোঁটা দিতে শুরু করলো তখন আমি তাকে বললাম, ভাই ফোটাটা 'হা'এর উপর না দিয়ে 'সীন'-এর পেটের মধ্যে রেখে দিন। সে তাই করলো। ফলে এখন হাসান লেখা হয়ে গেলো! এরপর আমি তাকে দুই অক্ষরের জন্য এক টাকা দিয়ে চলে এলাম। এভাবেই আমি পঞ্চাশ পয়সা বাঁচিয়েছি। বাদশাহ অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে আব্দুল করিমের কথা শুনলেন। তার অদ্ভূত বুদ্ধির কাহিনী শুনে তিনি খুবই মুগ্ধ হলেন। দরবারে সবাইকে ডেকে তিনি আব্দুল করিমের বুদ্ধি ও সততার কাহিনী শোনালেন। এ ঘটনা শুনে যারা আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল তারা খুবই লজ্জিত হলো। বাদশাহ নিজ আসন থেকে উঠে আব্দুল করিমকে বুকে টেনে নিলেন । সেদিন থেকে আব্দুল করিমের মর্যাদা অনেকে বেড়ে গেল।

আরো দেখুন