Loading..

প্রকাশনা

০৭ মার্চ, ২০১৪ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

উৎপাদনের গুরুত্ব বা ভূমিকা
প্রকৃত প্রদত্ত সকল সম্পদ সরাসরি ভোগ বা ব্যবহার করা যায় না। তাই এগুলোকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার জন্য আকার, আকৃতি ও রূপ পরিবর্তন করা হয়। একে উৎপাদন বলে। উৎপাদনের গতি ও বৈচিত্র্য বিশ্বসভ্যতাকে দিয়েছে প্রগতি। একটি কারবার প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে বা কোন দেশের অর্থনীতিতে উৎপাদনের গুরুত্ব বা ভূমিকা অপরিসীম। ১। উপযোগ সৃষ্টি ঃ- উৎপাদনের মাধ্যমে পন্যের সময়গত, স্থানগত, রূপগত ও স্বত্বগত উপযোগ সৃষ্টি হয়। দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও মানুষের কল্যানের সাথে এ সকল উপযোগ সরাসরিভাবে সম্পর্কিত। ২। চাহিদা পূরন ঃ- উৎপাদনের মাধ্যমে পন্যের আকার, আকৃতি, রূপ পরিবর্তন করে চাহিদা পূরনের উপযোগী করে তোলা হয়। আর উপযোগ সৃষ্টি করতে না পারলে মানুষের চাহিদা কোন ক্রমেই যথাযথ ভাবে পূরন করা সম্ভব হতো না। ৩। আয়ের উৎস ঃ- একটি প্রতিষ্ঠানের আয়ের উৎস হচ্ছে তার পন্য বা সেবা। উৎপাদন ব্যবস্থা না থাকলে পন্য বা সেবা বিক্রয় করা সম্ভব হতো না। উৎপাদনের পরিমান যত বৃদ্ধি পায় বিক্রয় তত বেশি হয়। বিক্রয় বৃদ্ধির সাথে সাথে সঙ্গতকারনে মুনাফার পরিমান বৃদ্ধি পায়। তাই উৎপাদন কৃষক, শ্রমিক, উকিল, ডাক্তার, প্রভৃতি সকল মানুষের আয় বাড়াতে সাহায্য করে। ৪। প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রক্ষা ঃ- কোন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনই সমাজে বা অর্থনীতিতে টিকতে পারে না, যদি সংগঠন সামাজিক কোন প্রয়োজন মিটাতে সক্ষম হয়। সমাজের প্রয়োজন মেটাতে পারে পন্য বা সেবা। প্রতিষ্ঠান এ পন্য বা সেবা তৈরি করে উৎপাদন ব্যবস্থার মাধ্যমে। উৎপাদনই প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রক্ষা করে। ৫। অভাব মোচন করে ঃ- মানুষ সর্বদাই তার অভাব মোচনে সচেষ্ট। উৎপাদনের মাধ্যমে মানুষের অভাব মোচনের জন্য পন্য ও সেবা তৈরি হয়। উৎপাদন ব্যবস্থা না থাকলে মানুষের অভাবের পরিতৃপ্তি ঘটতো না। উৎপাদন ব্যবস্থা না থাকলে মানুষ আদিম যুগে থেকে যেত। ৬। সম্পদের ব্যবহার ঃ- প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ও সবোর্চ্চ সদ্ব্যব্যবহারের উপর একটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নির্ভর করে। বিশ্ব সম্পদের ব্যবহার একমাত্র উৎপাদন ব্যবস্থার মাধ্যমেই সম্ভব। রূপান্তর প্রক্রিয়া না থাকলে প্রাকৃতিক অবস্থায় ব্যবহার করা ছাড়া আর কোনভাবে সম্পদের ব্যবহার করা যেত না। এতে সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়। ৭। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ঃ- উৎপাদন ব্যবস্থার কারনেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্ম। আর এ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমান মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। সমাজের বিভিন্ন পেশার লোকজন পন্যদ্রব্য ও সেবাকর্মের উৎপাদনের সাথে জড়িত। এতে মানুষের জীবিকার সংস্থান হয় এবং বেকার সমস্যা দূর হয়। ৮। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করে ঃ- বিচিত্র ও একাধিক পন্যের ভোগের উপরই মানুষের জীবন যাত্রার মান নির্ভর করে। উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হাজার হাজার রকমের পন্য উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদন বাড়লে মানুষের আয় বাড়ে। আয় বাড়লে মানুষের ভোগ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এতে জীবন যাত্রার মান উন্নতি হয়। ৯। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঃ- কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উৎপাদনের গুরুত্ব অপরিসীম। দ্রব্য সামগ্রী ও সেবার উৎপাদন বৃদ্ধি মাধ্যমে বিক্রয় বৃদ্ধি করা যায়। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে মানুষের আয় ও জীবন যাত্রার মান, দেশের মোট সম্পদ ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। ১০। মানব কল্যান ঃ- পন্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে একটি দেশ অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে মানুষের নতুন নতুন পন্য ভোগের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের পন্য উৎপাদন করা হয়। যা মানব কল্যানে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১১। উদ্ভাবনের মাধ্যম ঃ- উৎপাদন হচ্ছে মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রকাশ মাধ্যম। মানুষ তার সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনার মাধ্যমে দ্রব্য উৎপাদন করে যা পরবর্তীতে মানুষের অভাব মোচন ব্যবহৃত হয়। নতুন নতুন পন্য ও সেবা ভোগের প্রতি মানুষের প্রবল আকর্ষন থাকে। উৎপাদন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নতুন পন্য উদ্ভাবন করে মানুষের বৈচিত্রময় অভাব পূরন করা যায়। ১২। ব্যবসা সম্প্রসারন ঃ- আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ও গতিশীল উৎপাদন ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষের প্রত্যাশা অনুসারে নতুন ও উন্নতমানের পন্যসামগ্রী উৎপাদন করা সম্ভব হয়। ফলে এ সকল পন্য ভোগ সকল শ্রেনীর ভোক্তারা উৎসাহী হয়। কেবল দেশে নয় বিদেশেও এ ধরনের পন্যের চাহিদা থাকায় পন্যের বাজার সহজেই সম্প্রসারন করা সম্ভব হয়। এত ব্যবসায় কর্মকান্ড সম্প্রসারিত হয়। ১৩। নিয়মিত পন্য ভোগ ঃ- প্রতিনিয়ত পন্য উৎপাদন করে ভোক্তাদের নিকট সরবরাহ করা হয়। ধারাবাহিকভাবে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হলে ভোক্তাদের পন্য পেতে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হয় না। এতে ভোক্তারা নিয়মিত পন্য ক্রয় ও ভোগ করতে পারে। ১৪। মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস ঃ- উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে দ্রব্য সামগ্রীর যোগান বৃদ্ধি পায়। এর ফলে পন্যের মূল্য কম হয় বলে ভোক্তারা প্রয়োজনীয় পন্য স্বাচ্ছন্দে ক্রয় করতে পারে যা মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস করে। উপরের আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, সুষ্ঠ উৎপাদন ব্যবস্থা ছাড়া ব্যবসায়ের অস্তিত্ব ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব না্। উৎপাদনই আধুনিক সভ্যতার রুপকার। উৎপাদনের দ্বারা দেশের আমদানি-রপ্তানি বানিজ্য বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। দেশের মানুষের কর্মসংস্থান, জীবন যাত্রারমান, মাথাপিছু আয়, জাতীয় আয় প্রভৃতির উন্নয়নের বিষয়ে উৎপাদনের গুরুত্ব বা ভূমিকা অপরিসীম।

আরো দেখুন