Loading..

প্রকাশনা

১১ এপ্রিল, ২০১৪ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা গরু-মহিষের গাড়ি লাঙ্গল ঢেঁকি হুক্কা পালকি বিলীন হয়ে যাচ্ছে
কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলায় প্রতিবছর বাংলা বর্ষবরণকে ঘিরে পান্তা খাওয়াসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হলেও গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের গাড়ি, কাঠের লাঙ্গল, ঢেঁকি, হুক্কা ও পালকি কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে ঐহিত্যবাহী গ্রামীণ ব খেলাধুলা। বাংলা নববর্ষ এলেই এদেশের মানুষ নিজেদের বাঙালি প্রমাণ করার জন্য গ্রামীণ জীবনের নানা অনুসঙ্গ নিয়ে মেতে ওঠেন। এত কিছুর পরও গ্রামবাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রধান প্রধান উপাদানগুলোর ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গ্রাম-বাংলার ওইসব ঐতিহ্যবাহী জিনিসের মধ্যে গরু-মহিষের গাড়ি, কাঠের লাঙ্গল, ঢেঁকি, পালকি ও হুক্কাসহ গ্রামীণ জীবনযাপনে ব্যবহৃত অতি পরিচিত গৃহস্থালী সামগ্রীর অনেক কিছুই বিলীন হতে চলেছে। নিকট অতীতেও লক্ষ্য করা গেছে গরু-মহিষের গাড়ি ছাড়া বিয়ের কনে ও বরযাত্রীদের যাতায়াত কল্পনাই করা যেত না। বিয়েতে গরু-মহিষের গাড়ির ব্যবহার গ্রামবাংলার একটি অন্যতম ঐতিহ্য। এ ছাড়াও হাটবাজারে নানান পণ্য বহনের জন্য এই গরু-মহিষের গাড়িই সে সময় মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল। সময়ের সাথে দ্রুত চলতে গিয়ে মানুষজন গরু-মহিষের গাড়ির ব্যবহার বাদ দিয়ে এখন ওই একই কাজে ব্যবহার করছেন রিকশা, ভ্যান, নছিমন, ভটভটি, টেম্পু, অটোবাইক, সিএনজি, মাইক্রো, কার, বাস-ট্রাকসহ ইঞ্জিন চালিত নানান বাহন। একই ভাবে জমি চাষাবাদের জন্য সে সময় কাঠের লাঙ্গলই ছিল কৃষকদের একমাত্র ভরসা। এখন কৃষকরা কাঠের লাঙ্গলের ওই স্থানটিতে পাওয়ার টিলারসহ যান্ত্রিক লাঙ্গলকে স্থান করে দিয়েছেন। ওই সময়গুলোতে গ্রামগঞ্জের মানুষ চাল ছাঁটাইয়ের কাজে ঢেঁকি ব্যবহার করলেও ঢেঁকির সে স্থানে এখন চলে এসেছে সব অত্যাধুনিক রাইচমিল। আর কোন গ্রামে ঢেঁকির ধান ভানা শব্দ শোনা যায় না। আবার কৃষক-শ্রমিক তাদের ধুমপানের চাহিদা মেটাতে তৎকালীন সময় হুক্কা ব্যবহার করলেও এখন বিড়ি-সিগারেট দিয়েই সে চাহিদা তারা পূরণ করছেন। এছাড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী হা-ডু-ডু খেলা, গাদল খেলা, মার্বেল খেলা ও ঘুড়ি উড়ানোসহ নানা খেলায় সারা বছরই মেতে থাকতো সব বয়সী ছেলে-মেয়ে। এসব খেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামে-গঞ্জে অনেক সময় বসতো বড় বড় মেলা। এসব মেলায় নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হতো গ্রাম-বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য। এ সময় গ্রামে গ্রামে বিরাজ করতো অন্যরকম খুশির জোয়ার। এখন এসব প্রবীণদের কাছে শুধুই স্মৃতি। দ্রুত বয়ে চলা সময়ের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে গ্রামীণ ঐতিহ্য ভুলে যাচ্ছে। এখন গ্রাম-বাংলার মানুষজনও হয়ে যাচ্ছেন যান্ত্রিক। ওকি গাড়িয়াল ভাই, হাঁকাও গাড়ী তুই চিলমারির বন্দরে--- বিখ্যাত এ গান এখনো কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শোনা গেলে হৃদয়ে ভেসে উঠে গরু-মহিষের গাড়ী হাঁকিয়ে যাওয়ার দৃশ্য। কিন্তু গান থাকলেও, নেই সেই আগের গরু মহিষের গাড়ী, নেই গাড়িয়াল। নেই হৈ হৈ রৈ রৈ হাঁক ডাক, নেই গাড়ির চাকার ক্যাচ ক্যাচ শব্দ। গরুর হাম্বা অথবা গলা ঝোলানো ঘন্টার টুং টাং আওয়াজ। গরুর গাড়ির পরিবর্তে যান্ত্রিক নছিমন, করিমন, আগলামন, বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যন্ত্র যানের কারণে আজ জাদুঘরে স্থান হতে চলেছে গরুর গাড়ী। বংশ পরম্পরায় গাড়িয়ালরা জীবন জীবিকার তাগিদে পরিবর্তন করেছে পেশা। এদের কেউ শহরে মজুর খাটছে, আবার কেউবা রিক্সার হেন্ডেল ধরেছে, কেউ অন্যকোন পেশায় নিয়োজিত। বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলে গরু মহিষের গাড়ির প্রচলন আদিকাল থেকেই। গরুর গাড়িতে বিয়ে, বরযাত্রী, মালামাল পরিবহন, নাইয়রি আনা নেয়া ইত্যাদি এক সময় হতো খুব জাঁকজমকের মধ্য দিয়ে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় শোভা পেতো এই দু' চাকার গাড়িটি। এক সময় বৃহত্তর কুষ্টিয়ার যে কোন গ্রামে অবশ্যই চোখে পড়তো গরু কিংবা মহিষের গাড়ী। সেই দৃশ্য খুব একটা এখন চোখে পড়ে না।

আরো দেখুন