Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

০২ মে, ২০১৪ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অর্থনীতি একাদশ শ্রেনী ভারসাম্য

এইচ এস সি পরীক্ষা ২০১৫,

ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র,

প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআন শরিফ সংরক্ষণ সম্পর্কে যা জান লেখো।

উত্তরঃ ভূমিকাঃ অসংখ্য ধর্মীও গ্রন্থের মাঝে একমাত্র আল কুরআনই সম্পূর্ণ অক্ষত ও অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। তা ছাড়া সকল গ্রন্থই কাল ক্রমে বিকৃত ও পরিবর্তিত হয়েছে। এ অবিকৃত মূলত তার সংকলন ও সংরক্ষনের দৃঢ়তার উপর নির্ভর করেছে। এমন দৃঢ়তা ও কঠরতা  অন্য কোন গ্রন্থের বেলায় তা করা হয়নি।

কোরআন সংরক্ষনের ইতিহাসঃ

১.ক. নাজিলের পূর্বে কোরআন সংরক্ষনঃ

১.ক. লওহে মাহফুজে সংরক্ষন ঃ নাজিলের পূর্বে পবিত্র কোরআনকে মহান আল্লাহ উর্ধ্বাকাশে লওহে মাহফুজে সংরক্ষন করে রেখে ছিলেন এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন

بل هو قرأن مجيد فى لوح محفوظ অর্থাৎ ঃ বস্তুত ইহা সম্মানিত কোরআন। যা লওহে মাহফুযে সংরক্ষন।

 

২. খ. নাজিলের পর কোরআন সংরক্ষনঃ

নাজিলের পর পবিত্র কুরআন সংরক্ষনের দায়িত্ব মহান আল্লাহ তায়ালা নিজেই গ্রহন করেছেন বিধায় তাতে আজ পর্যন্ত কোন পরিবর্তন বা সংস্কার সাধিত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। এ মর্মে ইরশাদ হচ্ছে

 إنا نحن نزلنا القرأن وإنا له لحافظون ‘‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি আর আমিই তা সংরক্ষন করব।’’

 

নাজিলের পর কোরআন সংরক্ষনের প্রক্রিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

২. খ. ১.  রাসূল (সাঃ) এর যুগে কোরআন সংরক্ষনঃ

২. খ. ২. খোলাফায়ে রাশিদিনের যুগে কোরআন সংরক্ষনঃ

২. খ. ৩. খোলাফায়ে রাশিদিনের যুগের পর নোকতা সংযোজনের মাধ্যমে সংরক্ষনঃ

 

২. খ. ১। রাসূল (সাঃ) এর যুগে কোরআন সংরক্ষনঃ রাসুল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় কোরআন নাজিলের ধারা অব্যাহত ছিল তাই তার যুগে একটি গ্রন্থে কোরআনকে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর যুগে পবিত্র কোরআন সংরক্ষনের ক্ষেত্রে ৩টি সাধারণ পদ্ধতীর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

ক. হিফজ বা মুখস্ত প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণঃ      খ. লিখনির মাধ্যমে সংরক্ষণ     গ. কাতেবে ওহি নিয়োগ

২. খ. ১.ক.  হিফজ বা মুখস্ত প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণঃ

ক. মহানবীর (সাঃ) এর ব্যক্তিগত প্রয়াসঃ মহানবী (সাঃ) অক্ষরজ্ঞানহীন ছিলেন। তা সত্তেও কোরআনের যখন যে টুকু নাজিল হত তিনি সাথে সাথে তা কন্ঠস্থ করে নিতেন। এমন কি মুখস্থ প্রক্রিয়া শতভাগ নিভূল করতে জিব্রাইল (আঃ) এর সাথে দু ঠোট নেড়ে আয়াত মুখস্ত করার চেষ্টা করতেন। তিনি রাত দিন সিংহভাগ সময় কোরআন তেলাওয়াত করতেন।এ বিষয়ে তার অন্তহীন পেরেশানি আল্লাহর ঘোষনায় মূর্ত হয়ে উঠে, আল্লাহ বলেন, কুরআন কনঠস্থ করার জে ন্য আপনি এমন তাড়াহুড়া করে আপনার জবান পরিচালনা করবেন না। কুরআনকে হিফাজত করা এবং পরে আপনাকে দিয়ে তা পাঠ করানোর দায়িত্ব আমার।

খ. সাহাবাদের হিফজঃ শুধু মহানবী (সা.) নিজেই নন বরং সাহাবাগণও (রা.) কুরআনের হিফজ প্রক্রিয়ায় বিশেষ অবদান রাখেন। মহানবী (সা.) কুরআন হিফযের নির্দেশ দিলে তাঁরা সকলে এ কাজে নিয়োজিত হন। এব্যাপারে ইরশাদ হচ্ছে ঃ তারা রজনীভর আল্লাহর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করে (আল-ইমরান ১১৩)

গ. জিব্রাঈলে (আ.) এর পুনরাবৃত্তিঃ সর্বোপরি প্রতি রমযানে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ততদিন পর্যন্ত নাযিলকৃত  কুরআনের আয়াতমালা জিব্রাঈল (আ.) এর কাছে এবং জিব্রাঈল (আ.) পুরো কুরআন তাঁর কাছে পুনরাবৃত্তি করতেন। আর এভাবে পবিত্র কুরআন মহানবী (স.) ও সহাবাদের স্মতিপটে কুরআন জীবন্তভাবে সংরক্ষিত হতে থাকে।

২. খ. ২. লেখনীর মাধ্যমে সংরক্ষণঃ  যদিও কুরআন নাযিলকালে শিক্ষিত লোক কম ছিল, তা সত্ত্বেও যারা লেখাপড়া জানতেন তারা মুখস্থ করার পাশাপাশি লিখেও কুরআন সংরক্ষণ নিশ্চিত করেন। এ সময়ে লেখাপড়ার উপাদানের অকল্পনীয় অপ্রতুলতার জন্যে সাহাবাগণ চামড়া, পাথর, পাতা, হাড় প্রভৃতিতে নিদারুণ ধৈর্য ও নিষ্টার সাথে আয়াত লিখে রাখার কাজে আঞ্জাম দিয়েছেন। পরে

অন্যদের লিখিত ও মুখস্থ কুরআনের সাথে মিলিয়ে নিশ্চিত হতেন।

২. খ. ৩. কাতিবে ওহী নিয়োগঃ

নিয়মতান্ত্রিকভাবে কুরআন সংরক্ষণের কাজ সম্পন্নকরার জন্যে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কাতিবে ওহী বা ওহ লেখক নিয়োগ করেন। এদের মধ্যে যায়িদ বিন সাবিত (রা.) প্রধান ছিলেন।  হাদিসের বর্ণনা মতে যারা কোরআন লেখার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তাদের সংখ্যা ছিল ৪২ জন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন, হযরত আবু বকর (রা.) সহ চার খালিফা, হযরত উবাই কাব, যুবায়ের বিন আওয়াম, খালিদ বিন ওয়ালিদ, খালিদ বিন সাঈদ মুগীরা বিন শুবা, মুআবিয়া প্রমুখ (রা.হুম)

২. খ. ২. খোলাফায়ে রাশিদিনের যুগে কোরআন সংরক্ষনঃ খোলাফায়ে রাশিদিনের যুগে কুরআন প্রধানত হযরত আবু বকর ও হযরত উসমান (রা.) এর যুগে সংরক্ষণের কাজ করা হয়েছিল।

২. খ. ২.১ হযরত আবু বকর (রা.) এর যুগে সংরক্ষনঃ

২.১ ক. গ্রন্থাকারে কোরআন সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তাঃ

রাসূল (সা.) এর যুগে পূর্ণাঙ্গ কুরআন লিখিত থাকলেও  একটি গ্রন্থে সম্পূর্ণ কোরআন গ্রন্থাকারে সন্বিবেশিত করা সম্ভব হয় নাই। কারণ তখন কুরআন নাজিল অব্যাহত ছিল। রাসুল (সা,) এর ইনতিকালের পর যখন নিশ্চিত হওয়া গেল যে কুরআন নাজিল সম্পূর্ণরুপে সমাপ্ত হয়েছে, তখন গ্রন্থাকারে সংরক্ষন করার প্রয়োজন পরে।

২.১ খ. হাফিজ সাহাবাদের শাহাদাত বরণঃ ১২ হিজরির ইয়ামামার যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবি শাহাদাত বরণ করেন। এমতবস্থায় হযরত উমর (রা.) আবু বকর (রা.) কে এই মর্মে পরামর্শ দেন যে এভাবে কোরআনের হাফেজ ইনতিকাল করলে কুরআন সংরক্ষন হুমকির মধ্যে পড়বে। হযরত উমর (রা.)এর পরামর্শে আবু বকর (রা.) কে কুরআন সংরক্ষনের উদ্যোগ নেন।

২.১ গ. হযরত যায়দ বিন সাবিত (রা.) এর দায়িত্ব লাভঃ

হযরত আবু বকর (রা.) কুরআন সংকলনের অত্যন্ত পুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাকর এ দায়িত্ব অর্পণ করলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রধান ওহী লেখক ও হাফিযে কুযরআন হযরত যায়দ বিন সাবিত (রা.) এর ওপর

২.১ ঘ. পূর্ণাঙ্গ কুরআন গ্রন্থাবদ্ধকরণঃ হযরত যায়দ (রা.) কুরআন গ্রন্থাবদ্ধ করতে চারটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করেন। যেমনঃ

১. সর্বপ্রথম সাহাবা (রা.) দের স্মৃতিতে সুরক্ষিত কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের পারস্পরিক তুলনা।

২. দ্বিতীয়ত হযরত উমর (রা.) এর ব্যক্তিগত পান্ডুলিপি ও স্মৃতির সাথে তুলনা।

৩. তৃতীয়ত স্বয়ং  রাসূল (সা.) এর সামনে লিপিবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শী দু জন বিশ্বস্ত সাক্ষীর সাক্ষদান এবং এ আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া কোন আয়াত লেখা থেকে বিরত থাক।

৪. চুড়ান্ত পর্যায়ে লিখিত আয়াতগুলো অন্যান্য সাহাবি কর্তৃক লিখিত পান্ডুলিপির সাথে সুষ্ঠুভাবে যাচাই করে মূল পান্ডুলিপির অন্তর্ভুক্ত করা।

এভাবে সম্মিলিত চেষ্টা ও সংশয়হীনতার পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা লাভের পর কুরআন মজিদের একটি পূর্ণাঙ্গ পান্ডুলিপি লেখা হয় যা অবিকল জিব্রাঈল মারফত রাসূলের উপর হুবহু নাজিল হয়েছিল। পরে পান্ডলিপিটি উম্মুল মুমিনিীন হযরত হাফসা (রা.) এর নিকট রেখে তা থেকে নিজেদের লেখা মিলিয়ে নেওয়ার সাধারণ অনুমতি দেওয়া হয়।

 

২. খ. ২.২. হযরত উসমান (রা.) এর যুগে সংরক্ষণঃ

২. ২ ক. খেলাফতের বিস্তৃতি ও কুরআন পাঠে বিভ্রান্তিঃ রাসুলের ইনতিকালের পর আরবের সীমানা পেরিয়ে ইরাক, ইরান, সিরিয়া, মিশর, আফ্রিকা ও ইউরোপে ইসরাম ছড়িয়ে পড়লে কুরআন পাঠের গোত্রীয় ভিন্নতা ব্যাপক বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

২.২. খ. হুযাইফা (রা.) এর প্রস্তাবঃ এ সময়ে আর্মেনিয়া-আজারবইজান অঞ্চলে জিহাদে রত হযরত হুযায়ফা (রা.) যুদ্ধ ক্ষেত্রের বিভিন্ন তাঁবুতে একই কুরআনের অসংখ্য রকম তিলাওয়াত শুনে খলিফা উসমান (রা.) এর নিকট কেবল কুরাইশ রীতিতে কুরআন পাঠের ব্যবস্থা করার নিবেদন করেন।

২. ২. গ. খলিফা উসমান (রা.) এর উদ্যোগ ঃ উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যে উসমান (রা.) মতবিরোধপূর্ণ ব্যক্তিগত কপি সমূহ সংগ্রহ করে সাহাবাদের ঐক্যমতে সেগুলোর সমাধান বের করেন। এরপর হযরত যায়িদ বিন সাবিত (রা.) এর নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট কুরআন সংকলন কমিটি গঠন করেন। এবং তাদেরকে হযরত হাফসা (রা.) এর নিকট রক্ষিত মূল কোরআনের সাতটি কপি তৈরি করে খেলাফতের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র গুলোতে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। ফলে আঞ্চলিকতা বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা পেল কুরআন, আর মুসলিম জাতি রক্ষা পেল অনৈক্য ও বিপর্যয় থেকে।

 

২. খ. ৩. খোলাফায়ে রাশিদিনের যুগের পর নোকতা সংযোজনের মাধ্যমে সংরক্ষনঃ

পরবর্তীকালে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, ব্যাকরণবিদ আবুল আসওয়াদ দোয়ালী ও ফাররাহ প্রমুখের সহযোগিতায় কুরআনে  হারকাত ও নোকতা সংযুক্ত করে কুরআন সংকলন/সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার সকল কাজ সম্পন্ন করেন।

 

উপসংহারঃ কুরআন সংরক্ষণের বিষয়টি বর্তমানে এক প্রশ্নাতীত প্রামাণ্য সত্য। এখন বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মুসলিম কন্ঠস্থ করে এ মহাগ্রন্থ সংরক্ষণ করেন। আল্লাহ বিশেষ রহমতেই এত বিশাল একটি কাজ তাদের পক্ষে নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষের অভিন্নয় প্রচেষ্টা কুরআন সংরক্ষণের বিষয়টিকে সকল সন্দেহ-সংশয়ের উর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত রাখে।

 

প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআন শরিফ সংরক্ষণ সম্পর্কে যা জান লেখো।

উত্তরঃ ভূমিকাঃ অসংখ্য ধর্মীও গ্রন্থের মাঝে একমাত্র আল কুরআনই সম্পূর্ণ অক্ষত ও অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে। তা ছাড়া সকল গ্রন্থই কাল ক্রমে বিকৃত ও পরিবর্তিত হয়েছে। এ অবিকৃত মূলত তার সংকলন ও সংরক্ষনের দৃঢ়তার উপর নির্ভর করেছে। এমন দৃঢ়তা ও কঠরতা  অন্য কোন গ্রন্থের বেলায় তা করা হয়নি।

কোরআন সংরক্ষনের ইতিহাসঃ

১.ক. নাজিলের পূর্বে কোরআন সংরক্ষনঃ

১.ক. লওহে মাহফুজে সংরক্ষন ঃ নাজিলের পূর্বে পবিত্র কোরআনকে মহান আল্লাহ উর্ধ্বাকাশে লওহে মাহফুজে সংরক্ষন করে রেখে ছিলেন এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন

بل هو قرأن مجيد فى لوح محفوظ অর্থাৎ ঃ বস্তুত ইহা সম্মানিত কোরআন। যা লওহে মাহফুযে সংরক্ষন।

 

২. খ. নাজিলের পর কোরআন সংরক্ষনঃ

নাজিলের পর পবিত্র কুরআন সংরক্ষনের দায়িত্ব মহান আল্লাহ তায়ালা নিজেই গ্রহন করেছেন বিধায় তাতে আজ পর্যন্ত কোন পরিবর্তন বা সংস্কার সাধিত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। এ মর্মে ইরশাদ হচ্ছে

 إنا نحن نزلنا القرأن وإنا له لحافظون ‘‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি আর আমিই তা সংরক্ষন করব।’’

 

নাজিলের পর কোরআন সংরক্ষনের প্রক্রিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

২. খ. ১.  রাসূল (সাঃ) এর যুগে কোরআন সংরক্ষনঃ

২. খ. ২. খোলাফায়ে রাশিদিনের যুগে কোরআন সংরক্ষনঃ

২. খ. ৩. খোলাফায়ে রাশিদিনের যুগের পর নোকতা সংযোজনের মাধ্যমে সংরক্ষনঃ

 

২. খ. ১। রাসূল (সাঃ) এর যুগে কোরআন সংরক্ষনঃ রাসুল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় কোরআন নাজিলের ধারা অব্যাহত ছিল তাই তার যুগে একটি গ্রন্থে কোরআনকে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর যুগে পবিত্র কোরআন সংরক্ষনের ক্ষেত্রে ৩টি সাধারণ পদ্ধতীর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

ক. হিফজ বা মুখস্ত প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণঃ      খ. লিখনির মাধ্যমে সংরক্ষণ     গ. কাতেবে ওহি নিয়োগ

২. খ. ১.ক.  হিফজ বা মুখস্ত প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণঃ

ক. মহানবীর (সাঃ) এর ব্যক্তিগত প্রয়াসঃ মহানবী (সাঃ) অক্ষরজ্ঞানহীন ছিলেন। তা সত্তেও কোরআনের যখন যে টুকু নাজিল হত তিনি সাথে সাথে তা কন্ঠস্থ করে নিতেন। এমন কি মুখস্থ প্রক্রিয়া শতভাগ নিভূল করতে জিব্রাইল (আঃ) এর সাথে দু ঠোট নেড়ে আয়াত মুখস্ত করার চেষ্টা করতেন। তিনি রাত দিন সিংহভাগ সময় কোরআন তেলাওয়াত করতেন।এ বিষয়ে তার অন্তহীন পেরেশানি আল্লাহর ঘোষনায় মূর্ত হয়ে উঠে, আল্লাহ বলেন, কুরআন কনঠস্থ করার জে ন্য আপনি এমন তাড়াহুড়া করে আপনার জবান পরিচালনা করবেন না। কুরআনকে হিফাজত করা এবং পরে আপনাকে দিয়ে তা পাঠ করানোর দায়িত্ব আমার।

খ. সাহাবাদের হিফজঃ শুধু মহানবী (সা.) নিজেই নন বরং সাহাবাগণও (রা.) কুরআনের হিফজ প্রক্রিয়ায় বিশেষ অবদান রাখেন। মহানবী (সা.) কুরআন হিফযের নির্দেশ দিলে তাঁরা সকলে এ কাজে নিয়োজিত হন। এব্যাপারে ইরশাদ হচ্ছে ঃ তারা রজনীভর আল্লাহর আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করে (আল-ইমরান ১১৩)

গ. জিব্রাঈলে (আ.) এর পুনরাবৃত্তিঃ সর্বোপরি প্রতি রমযানে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ততদিন পর্যন্ত নাযিলকৃত  কুরআনের আয়াতমালা জিব্রাঈল (আ.) এর কাছে এবং জিব্রাঈল (আ.) পুরো কুরআন তাঁর কাছে পুনরাবৃত্তি করতেন। আর এভাবে পবিত্র কুরআন মহানবী (স.) ও সহাবাদের স্মতিপটে কুরআন জীবন্তভাবে সংরক্ষিত হতে থাকে।

২. খ. ২. লেখনীর মাধ্যমে সংরক্ষণঃ  যদিও কুরআন নাযিলকালে শিক্ষিত লোক কম ছিল, তা সত্ত্বেও যারা লেখাপড়া জানতেন তারা মুখস্থ করার পাশাপাশি লিখেও কুরআন সংরক্ষণ নিশ্চিত করেন। এ সময়ে লেখাপড়ার উপাদানের অকল্পনীয় অপ্রতুলতার জন্যে সাহাবাগণ চামড়া, পাথর, পাতা, হাড় প্রভৃতিতে নিদারুণ ধৈর্য ও নিষ্টার সাথে আয়াত লিখে রাখার কাজে আঞ্জাম দিয়েছেন। পরে

অন্যদের লিখিত ও মুখস্থ কুরআনের সাথে মিলিয়ে নিশ্চিত হতেন।

২. খ. ৩. কাতিবে ওহী নিয়োগঃ

নিয়মতান্ত্রিকভাবে কুরআন সংরক্ষণের কাজ সম্পন্নকরার জন্যে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কাতিবে ওহী বা ওহ লেখক নিয়োগ করেন। এদের মধ্যে যায়িদ বিন সাবিত (রা.) প্রধান ছিলেন।  হাদিসের বর্ণনা মতে যারা কোরআন লেখার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তাদের সংখ্যা ছিল ৪২ জন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন, হযরত আবু বকর (রা.) সহ চার খালিফা, হযরত উবাই কাব, যুবায়ের বিন আওয়াম, খালিদ বিন ওয়ালিদ, খালিদ বিন সাঈদ মুগীরা বিন শুবা, মুআবিয়া প্রমুখ (রা.হুম)

২. খ. ২. খোলাফায়ে রাশিদিনের যুগে কোরআন সংরক্ষনঃ খোলাফায়ে রাশিদিনের যুগে কুরআন প্রধানত হযরত আবু বকর ও হযরত উসমান (রা.) এর যুগে সংরক্ষণের কাজ করা হয়েছিল।

২. খ. ২.১ হযরত আবু বকর (রা.) এর যুগে সংরক্ষনঃ

২.১ ক. গ্রন্থাকারে কোরআন সংরক্ষনের প্রয়োজনীয়তাঃ

রাসূল (সা.) এর যুগে পূর্ণাঙ্গ কুরআন লিখিত থাকলেও  একটি গ্রন্থে সম্পূর্ণ কোরআন গ্রন্থাকারে সন্বিবেশিত করা সম্ভব হয় নাই। কারণ তখন কুরআন নাজিল অব্যাহত ছিল। রাসুল (সা,) এর ইনতিকালের পর যখন নিশ্চিত হওয়া গেল যে কুরআন নাজিল সম্পূর্ণরুপে সমাপ্ত হয়েছে, তখন গ্রন্থাকারে সংরক্ষন করার প্রয়োজন পরে।

২.১ খ. হাফিজ সাহাবাদের শাহাদাত বরণঃ ১২ হিজরির ইয়ামামার যুদ্ধে ৭০ জন সাহাবি শাহাদাত বরণ করেন। এমতবস্থায় হযরত উমর (রা.) আবু বকর (রা.) কে এই মর্মে পরামর্শ দেন যে এভাবে কোরআনের হাফেজ ইনতিকাল করলে কুরআন সংরক্ষন হুমকির মধ্যে পড়বে। হযরত উমর (রা.)এর পরামর্শে আবু বকর (রা.) কে কুরআন সংরক্ষনের উদ্যোগ নেন।

২.১ গ. হযরত যায়দ বিন সাবিত (রা.) এর দায়িত্ব লাভঃ

হযরত আবু বকর (রা.) কুরআন সংকলনের অত্যন্ত পুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাকর এ দায়িত্ব অর্পণ করলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রধান ওহী লেখক ও হাফিযে কুযরআন হযরত যায়দ বিন সাবিত (রা.) এর ওপর

২.১ ঘ. পূর্ণাঙ্গ কুরআন গ্রন্থাবদ্ধকরণঃ হযরত যায়দ (রা.) কুরআন গ্রন্থাবদ্ধ করতে চারটি বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করেন। যেমনঃ

১. সর্বপ্রথম সাহাবা (রা.) দের স্মৃতিতে সুরক্ষিত কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের পারস্পরিক তুলনা।

২. দ্বিতীয়ত হযরত উমর (রা.) এর ব্যক্তিগত পান্ডুলিপি ও স্মৃতির সাথে তুলনা।

৩. তৃতীয়ত স্বয়ং  রাসূল (সা.) এর সামনে লিপিবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শী দু জন বিশ্বস্ত সাক্ষীর সাক্ষদান এবং এ আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া কোন আয়াত লেখা থেকে বিরত থাক।

৪. চুড়ান্ত পর্যায়ে লিখিত আয়াতগুলো অন্যান্য সাহাবি কর্তৃক লিখিত পান্ডুলিপির সাথে সুষ্ঠুভাবে যাচাই করে মূল পান্ডুলিপির অন্তর্ভুক্ত করা।

এভাবে সম্মিলিত চেষ্টা ও সংশয়হীনতার পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা লাভের পর কুরআন মজিদের একটি পূর্ণাঙ্গ পান্ডুলিপি লেখা হয় যা অবিকল জিব্রাঈল মারফত রাসূলের উপর হুবহু নাজিল হয়েছিল। পরে পান্ডলিপিটি উম্মুল মুমিনিীন হযরত হাফসা (রা.) এর নিকট রেখে তা থেকে নিজেদের লেখা মিলিয়ে নেওয়ার সাধারণ অনুমতি দেওয়া হয়।

 

২. খ. ২.২. হযরত উসমান (রা.) এর যুগে সংরক্ষণঃ

২. ২ ক. খেলাফতের বিস্তৃতি ও কুরআন পাঠে বিভ্রান্তিঃ রাসুলের ইনতিকালের পর আরবের সীমানা পেরিয়ে ইরাক, ইরান, সিরিয়া, মিশর, আফ্রিকা ও ইউরোপে ইসরাম ছড়িয়ে পড়লে কুরআন পাঠের গোত্রীয় ভিন্নতা ব্যাপক বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

২.২. খ. হুযাইফা (রা.) এর প্রস্তাবঃ এ সময়ে আর্মেনিয়া-আজারবইজান অঞ্চলে জিহাদে রত হযরত হুযায়ফা (রা.) যুদ্ধ ক্ষেত্রের বিভিন্ন তাঁবুতে একই কুরআনের অসংখ্য রকম তিলাওয়াত শুনে খলিফা উসমান (রা.) এর নিকট কেবল কুরাইশ রীতিতে কুরআন পাঠের ব্যবস্থা করার নিবেদন করেন।

২. ২. গ. খলিফা উসমান (রা.) এর উদ্যোগ ঃ উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যে উসমান (রা.) মতবিরোধপূর্ণ ব্যক্তিগত কপি সমূহ সংগ্রহ করে সাহাবাদের ঐক্যমতে সেগুলোর সমাধান বের করেন। এরপর হযরত যায়িদ বিন সাবিত (রা.) এর নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট কুরআন সংকলন কমিটি গঠন করেন। এবং তাদেরকে হযরত হাফসা (রা.) এর নিকট রক্ষিত মূল কোরআনের সাতটি কপি তৈরি করে খেলাফতের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র গুলোতে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। ফলে আঞ্চলিকতা বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা পেল কুরআন, আর মুসলিম জাতি রক্ষা পেল অনৈক্য ও বিপর্যয় থেকে।

 

২. খ. ৩. খোলাফায়ে রাশিদিনের যুগের পর নোকতা সংযোজনের মাধ্যমে সংরক্ষনঃ

পরবর্তীকালে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, ব্যাকরণবিদ আবুল আসওয়াদ দোয়ালী ও ফাররাহ প্রমুখের সহযোগিতায় কুরআনে  হারকাত ও নোকতা সংযুক্ত করে কুরআন সংকলন/সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার সকল কাজ সম্পন্ন করেন।

 

উপসংহারঃ কুরআন সংরক্ষণের বিষয়টি বর্তমানে এক প্রশ্নাতীত প্রামাণ্য সত্য। এখন বিশ্বের লক্ষ লক্ষ মুসলিম কন্ঠস্থ করে এ মহাগ্রন্থ সংরক্ষণ করেন। আল্লাহ বিশেষ রহমতেই এত বিশাল একটি কাজ তাদের পক্ষে নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। পৃথিবীর সকল প্রান্তের মানুষের অভিন্নয় প্রচেষ্টা কুরআন সংরক্ষণের বিষয়টিকে সকল সন্দেহ-সংশয়ের উর্ধ্বে প্রতিষ্ঠিত রাখে।

Muhammad Asadullah

Lecturer

Syed shah mostofa college

Moulvibazar

01550004166

 

 

 

আরো দেখুন