সহকারী শিক্ষক
১৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০২:২০ অপরাহ্ণ
শখের স্কুল পরিচালনা ।
উদ্ভাবনের গল্প
জিয়াউল হাসান সবুজ
গজালিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়
কচুয়া, বাগেরহাট ।
আমাদের আগামীদিনের প্রজন্ম যাতে সু-নাগরিক হিসেবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম হয়, তার জন্যও তাদের মাঝে মূল্যবোধ শিক্ষার প্রসার করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আর মূল্যবোধ লালন ও বিকাশের জন্য প্রয়োজন আদর্শের পতাকাবাহী মূল্যবোধের মূর্ত প্রতীক শিক্ষক ও শিক্ষক সমাজ। শিক্ষক তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল্যবোধে সৃষ্টিকরে প্রকারান্তরে সমাজ ও দেশকে মূল্যবোধে উজ্জীবিত করতে পারে। একমাত্র শিক্ষকই পারেন ছাত্র ও সমাজের মাঝে মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে। সমাজ ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মূল্যবোধ সৃষ্টির জন্য শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা এই তিনটির সাথে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। আজকের ছাত্র আগামী দিনে জাতির কর্ণধার।শিক্ষক মূল্যবোধ বিনির্মাণের আদর্শ কারিগর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মূল্যবোধ চর্চার অনন্য কারখানা। কিন্তু প্রশ্ন হলো সে সুযোগ কোথায়?
আমি আমার বিদ্যালয়ে কাজটি শুরু করেছিলাম ২০১৬ সালের শেষের দিকে। এখন এটি প্রতিষ্ঠিত একটি ক্লাসে পরিণত হয়েছে । কার্যক্রমটি হচ্ছে এরকম- প্রতি শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত । ইংলিশ স্পোকেন, ছবি আঁকা, বিদেশি মুভির ক্লিপিংস দেখানো, গান শোনা, কবিতা আবৃত্তি ও কুইজ অনুষ্ঠান, বিতর্ক চর্চা গান শেখা প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভূক্ত থাকে । প্রতি সপ্তাহে ২টি বা ৩টি আইটেম বাছাই করে চর্চা করা হয় । এতে ৫টি শ্রেণি থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয় । পুরো ক্লাসটি মাল্টিমিডিয়া নির্ভর । কখনো কখনো অন্য সহকর্মীরাও সহায়তার জন্য যোগ দেয় । প্রতি শিক্ষার্থী শুরুতে প্রতি ক্লাসের জন্য ১০ টাকা করে জমা দেয় এবং সেশনের মধ্যবর্তী সময়ে তাদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করা হয় । কোনো কোনো সময়ে স্থানীয় বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তিবর্গ তাদেরকে শিক্ষা উপকরণ দিয়ে পুরস্কৃত করেন । বর্তমানে এই ক্লাসসমূহে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও যোগ দিচ্ছে । আমার এ কাজে প্রধান শিক্ষক মহোদয় পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে থাকেন । ইদানীং আমাদের আশে-পাশের কয়েকটি বিদ্যালয়েও এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে । সেখানে ক্লাসরুম ম্যাটেরিয়ালস সহ সব ধরণের লজিস্টিক সাপোর্ট আমরা দিয়ে থাকি ।
আমি বিশ্বাস করি শিক্ষার্থীদের শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় শিক্ষিত করলে এই সমাজ, মানুষ, পৃথিবী নিয়ে তাদের কোনো সম্যক ধারণা থাকবে না । তাই তাদেরকে পাঠ্যবইয়ের বাইরে গল্পের বই, কবিতা, উপন্যাসের সঙ্গে পরিচিত করাতে হবে । শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলার বড় দায়িত্ব শিক্ষকদের কাঁধে। কারণ তারা মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির ভালো-মন্দ ব্যবহার এবং প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করে দিকনির্দেশনা দিতে হবে শিক্ষকদের। সর্বোপরি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করতে হবে শিক্ষার্থীদের মানসে । আর এটা কারও একার নয়, বরং সবার দায়িত্ব। সরকার, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পরিবার এবং সমাজের মানুষকে একত্রিত হয়ে সমকালীন বিষয়গুলো মোকাবিলা করতে হবে। ঘরে অভিভাবক আর স্কুলে শিক্ষক সঠিক নজরদারি করলে শিক্ষার্থীদের বিপথে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই । আর সেই বিশ্বাস থেকেই তাদেরকে সৃষ্টিশীল নান্দনিক কিছু কাজের সাথে জড়িত রাখতেই আমার এই প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। আপনাদের যে কোনো পরামর্শ সাদরে গৃহীত হবে। ধন্যবাদ সবাইকে ।