প্রভাষক
০৭ এপ্রিল, ২০২০ ০৪:২০ অপরাহ্ণ
এসো স্বপ্নের কলেজ গড়ি, নিজেকে দিয়ে শুরু করি।
এসো স্বপ্নের কলেজ গড়ি, নিজেকে দিয়ে শুরু করি।
শিক্ষার্থীদের মনকে নাড়া দিতে পারলে যে কিছু পাওয়া যায় তা আমার মনের মধ্যে সব সময়ই উঁকি দিতে ছিল। শিক্ষার্থীদের সাথে শেয়ার করি কিভাবে শ্রেণি কক্ষ ও কলেজ আঙ্গিনা পরিস্কার রাখতে পারি? পরীক্ষার্থী বলল, স্যার বারান্দায় মাঝে মাঝে কয়েকটি ঝুড়ি রেখে দিলে আমরা ক্লাসে পড়ে থাকা কাগজগুলো কুড়িয়ে ঝুড়িতে ফেললে শ্রেণি কক্ষগুলো পরিস্কার রাখা সহজ হবে মনে করি। দারূণ, আমার পূর্ব পরিকল্পিত আইডিয়ার সাথে একেবারে মিলে গেল। পরের দিন শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে কিনে ফেললাম আটিট ঝুড়ি ও একটি দেওয়াল ঘড়ি। ঘড়িটি আমাদের হলরুমে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো আর ঝুড়িগুলো রাখা হলো শ্রেণি কক্ষের সামনে বারান্দায়। প্রথম দুই/তিন দিন শিক্ষার্থীদের সাথে আমিও শ্রেণিকক্ষ পরিস্কারে অংশ নিলাম। পরে দেখি তারা নিয়মিত কাজটি করে যাচ্ছে। ঝুড়িগুলো মাঝে মাঝে হাতে করে শিক্ষার্থীদের সাথে আঙ্গিনা পরিস্কারে অংশ নিই। আমাদের অধ্যক্ষ মহোদয়সহ বেশ কিছু শিক্ষক আমাকে ও শিক্ষার্থীদের মাঝে মাঝে উৎসাহিত করে থাকেন। এভাবেই চলতে থাকে শ্রেণিকক্ষ ও আঙ্গিনা পরিস্কারের কাজ।
এরপর শিক্ষার্থীদের সাথে শেয়ার করি কিছু ফুলের গাছ লাগিয়ে কলেজের পরিবেশটা আরও একটু সুন্দর করা যায় কিনা? অবশ্য সেটাও অধ্যক্ষ মহোদয়ের অনুমতি পেলে। তারাতো বেজায় খুশি। আমি ঐ দিনই স্যারকে আমার নিজ খরচে কিছু ফুল গাছ লাগানোর প্রস্তাব করলে স্যার বেশ খুশির সাথেই সম্মতি দিলেন। পরের দিনই সুইট স্যারকে সাথে নিয়ে ফুল গাছ কিনে এনে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় লাগিয়ে দিলাম। পানি দেওয়ার জন্য কিনে দিলাম একটি ঝর্ণা। প্রচুর পরিমানে জৈব সার যেটা আমি নিজ হাতেই দিয়েছি। কিছুদিন যেতেই অধ্যক্ষ মহোদয় আমাকে ডেকে আরও কিছু ফুল গাছ লাগানোর প্রস্তাব দিলেন। আমিতো খুব খুশি। সাথে সাথে উপাধ্যাক্ষ মহোদয়কে সাথে করে নার্সারী থেকে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার ফুল গাছ এনে লাগিয়ে দিলাম।
এখানেই থেমে থাকি নাই। এর পর শুরু করি শিক্ষার্থীদের কিভাবে স্বাস্থ্য সচেতন করে তোলা যায়। অধ্যক্ষ মহোদয়ের অনুমতি নিয়ে একদিন নিজ খরচে ব্যানার, ফেস্টুন, দিয়ে হলরুম সাজিয়ে মান্যবর অধ্যক্ষ মহোদয়ের উপস্থিতিতে সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনমূলক একটি সেমিনারের আয়োজন করি। সেমিনার শেষে সুইপারকে প্রয়োজনীয় উপকরণ সাপ্লাই দিয়ে টয়লেটগুলো পরিস্কার করিয়ে শিক্ষার্থীদের টয়লেট ব্যবহারের পর হাত ধোয়ার অভ্যাস করায়। সেইসাথে টয়লেট ব্যবহারের পর পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করা, বৈদ্যুতিক সুইচ অফ করাসহ প্রতিষ্ঠানের সকল জিনিস যত্নসহকারে ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করি। আর এগুলোর সবটাই সম্ভব হয়েছে আমার ঐ সকল প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও সহযোগীতায়। তবে এর জন্য শিক্ষার্থীদের আপন করে নেওয়ার একটা প্রয়াসও আমাদের মাঝে থাকতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমার নিজ থেকে নেয়া এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো আমাদের ও শিক্ষার্থীদের মনকে একটু হলেও দোলা দিতে সক্ষম হবে। আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় বলতেই পারি আমাদের কলেজের চেহারা কিছুটা হলেও পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। আসুন আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে এমন কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করি যে উদ্যোগগুলোই হয়তো একদিন এদেশের প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানতো বটেই সেইসাথে সকল প্রতিষ্ঠানই অচিরেই স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
মোহা: জহুরুল ইসলাম
প্রভাষক- ভূগোল বিভাগ
নূরুজ্জামান বিশ্বাস কলেজ
আল্লারদর্গা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া।
মোবাইল নং- ০১৭১৮-৭৩২৩৮২