Loading..

খবর-দার

০৭ এপ্রিল, ২০২০ ১১:১৫ অপরাহ্ণ

করোনা আতঙ্ক নয়, নিয়ম মেনে প্রতিরোধ সম্ভব

করোনা আতঙ্ক নয়, নিয়ম মেনে প্রতিরোধ সম্ভব

#এমদাদুল_হক_মিলন

_______________________________________________
আজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস।
প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। সর্বশেষ সারা বিশ্বে প্রায় ১৪ লক্ষ করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে, মোট মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ৭৭ হাজার এবং সুস্থ হয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ১৬৪ জন। তাদের মধ্যে ৩৩ জন সুস্থ হয়েছেন এবং মৃত্যু হয়ছে ১৭ জনের। করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতামূলক তথ্যের অভাবে ব্যক্তি সচেতনতা নিয়ে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গবেষক ও চিকিৎসকরা বলছেন, আতঙ্ক নয়, করোনা প্রতিরোধে প্রয়োজন নিজের করণীয় সম্পর্কে জানা। তথ্যের অভাব ও ভুল সংবাদ প্রচারকে এ আতঙ্ক সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানসিক চিকিৎসকরা বলছেন, এ আতঙ্ক নিজের ও পরিবারের জন্য ক্ষতিকর। করোনার এই ক্ষতির হাত থেকে দেশ ও জাতিকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রনোদনা ঘোষণা করেছেন।
আমি আশা করি বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক সমাজ সহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এর অন্তর্ভুক্ত হবে। আজ ৭ই এপ্রিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং দেশের অন্যান্য কর্মীদের জন্য সরকারে বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মার্চ মাস থেকে যারা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করছেন, আমি তাদের পুরষ্কৃত করতে চাই।’' প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন 'গণভবন' থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ১৫টি জেলার জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যকালে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার তাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য বিশেষ প্রণোদনা দেবে। এছাড়াও দায়িত্ব পালনের সময় কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে তাদের জন্য ৫-১০ লাখ টাকার একটি স্বাস্থ্য বীমা থাকবে। কেউ মারা গেলে স্বাস্থ্য বীমার পরিমাণ পাঁচগুণ বেশি হবে।’'
দেশের শহর ও গ্রামে বসবাসরত মানুষের মধ্যে ভুল তথ্য, গুজব মারাত্মক ক্ষতিকর। যা মানুষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। যা মানুষের মনে ভীতি ও উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দেয় এবং হজম শক্তি ও রোগপ্রতিরোধের জন্য ক্ষতিকর। মনস্তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতঙ্কের তিনটি ধাপ আছে। এর মধ্যে প্রাথমিক ধাপ ছাড়িয়ে যাওয়ার পর থেকেই মস্তিষ্কের চাপ বাড়তে থাকে এবং শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা দেখা দিতে পারে। করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে করণীয় কী? করোনার সময়কালে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ইতিবাচক ভাবনা। ইতিবাচক ভাবনা তাড়াতে পারে মনের বিষাদ ও উদ্বেগ।
ইতিবাচক ভাবনাগুলো যেমন হতে পারে—

* করোনা আক্রান্ত অধিকাংশ রোগী ভালো হয়ে যায়।

*. কোয়ারেন্টাইন (সঙ্গরোধ) বা আইসোলেশন মানে নিজের সুরক্ষা করা সবার থেকে আলাদা রেখে।

*. নিজেকে রক্ষা করা মানে পরিবারেরকেও নিরাপদ রাখা। সমাজ ও দেশ করোনামুক্ত করার যুদ্ধে অংশ নেওয়া।

* এই মূহুর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ঘরে থাকা। এটা দেশ প্রেমের বহিঃপ্রকাশ।

ঘরে থেকে মানসিক অবসাদ কাটাতে যা করতে পারি

*. গান শোনা, বই পড়া, লেখালেখি করা অথবা আনন্দময় বা সৃষ্টিশীল কাজ করা।

*. এ সুযোগে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করা।

*. যার যার ধর্মীয়চর্চা করা।

*. শিশুদের মনের কথা শোনা। তাদের মতামত নেওয়া। করোনা নিয়ে তাদের মনোভাব তাদের বয়সের স্তরে নেমে বোঝা।

*. বয়স্কদের প্রতি যত্নবান হওয়া।

*. সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী ঘরে এক্সারসাইজ (ব্যায়াম) করা। মেডিটেশনও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ইতোমধ্যে করোনাভীত ও আতঙ্কিত রোগীদের ক্ষেত্রে করণীয় কিছু মানুষ আছেন যাদের মধ্যে ফোবিয়া (ভীতি) বা অ্যানজাইটি ডিসঅর্ডার (দুশ্চিন্তা) আছে। তারা বাসা থেকে বের হতে কিংবা কারো সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিচ্ছেন। অনেক বেশি আইসোলেটেড হয়ে পড়ছেন। সেক্ষেত্রে আমি মেডিটেশন নেওয়ার কথা বলছি। নেগেটিভ চিন্তা থেকে বিরত থাকা। একইসঙ্গে এ সময়টা নিজেদের সেলফ ডেভেলপমেন্টের জন্য উপযুক্ত সময়। কারো কোনো বিষয়ে দুর্বলতা থাকতে পারে সেগুলো কাটিয়ে উঠতে পারে। পাশাপশি গান শোনা, সৃজনশীল কাজ করতে পারেন। আর অবশ্যই সচেতনার পাশাপাশি এসব কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
করোনা আতঙ্ক থেকে দূরে থাকতে হলে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। গায়ে জ্বর অনুভব মানেই করোনা নয়। এটি হতে পারে সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা। এজন্য আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতায় খেয়াল রাখা, নিজে সচেতন হওয়া ও মানুষকে সচেতন করা, ভুল তথ্য ও সংবাদ এড়িয়ে চলা।
সরকারের সাহায্যে যোগ্য ও যারা অসহায় তাঁদের কাছে জনপ্রতিনিধিগন পৌছে দেওয়া এই মহুর্তে নৈতিক দায়িত্ব দেশের অধিকাংশ মানুষের প্রত্যাশা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মাধ্যমে এাণ সহায়তা দিলে তার অনিয়ম ও দুর্নীতি হবে না। আমাদের ভাবতে অবাক লাগে দেশের এই ক্রান্তিলগ্নেও কিছু মানুষ এাণ সহায়তায় অনিয়ম করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন সহায়তায় কোন অনিয়ম মানা হবে না।
একটা বিষয় খুবেই পজিটিভ যে বাংলাদেশের অনেক মানুষ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গরীব ও অসহায়দের জন্য সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তবে তাঁরা যেন সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে সাহায্যে হাত প্রসারিত করেন। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য নিতে হবে। যেহেতু এখনো করোনাভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি, তাই এ রোগ প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ও বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন।

_______________________________________________
#লেখক
সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি)
সোনাপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়,দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ।
সাধারণ সম্পাদক
অ্যালামনাই এসোসিয়েশন(ইংরেজি ডিপার্টমেন্ট)
সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।