ঈদের প্রকৃত অর্থ কি?
শুধু দামী পোশাক, রঙ্গিন জামা, হরেক রকম
সুস্বাদু খাবার আর নানা ধরণের আনন্দ-উৎসবের
নাম ঈদ নয়। ঈদের উদ্দেশ্য কি তা আল্লাহ
তা’আলা নিন্মোক্ত আ’য়াতের মাধ্যমে প্রকাশ
করেছেন:
ﻭَﻟِﺘُﻜْﻤِﻠُﻮﺍ ﺍﻟْﻌِﺪَّﺓَ ﻭَﻟِﺘُﻜَﺒِّﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺎ ﻫَﺪَﺍﻛُﻢْ ﻭَﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺸْﻜُﺮُﻭﻥَ
”আর যেন তোমরা নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ
করতে পার এবং তোমাদেরকে যে সুপথ
দেখিয়েছেন, তার জন্যে তোমরা আল্লাহর
মমত্ব প্রকাশ কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা হও
।” (সূরা বাকারাঃ ১৮৫) এই আয়াত
থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, ঈদের উদ্দেশ্য হল দুটি:
১) আল্লাহর বড়ত্ব মমত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব
ঘোষণা করা।
২) আল্লাহ যে নেয়ামত দান করেছেন তার জন্য
আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা।
ঈদ সংক্রান্ত কতিপয় বিধান
নিন্মে আমরা অতি সংক্ষেপে কুরআন ও সহীহ
হাদীসের আলোকে ঈদ সংক্রান্ত কতিপয়
বিধান আলোচনা করার চেষ্টা করব
যাতে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের
নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসারে আমরা আমাদের ঈদ
উদযাপন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
করতে পারি।
১) ঈদের দিন রোযা রাখা নিষেধ: প্রখ্যাত
সাহাবী আবু সাঈদ (রা:) হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, “নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল
আযহা এ দু দিন রোযা রাখতে নিষেধ
করেছেন।” (বুখারী হাদীস নং ১৮৫৫)
২) ঈদের রাত থেকে তাকবীর পাঠ করা: ঈদের
রাতের সূর্য ডুবার পর থেকে আরম্ভ করে ঈদের
নামায পড়া পর্যন্ত এ তাকবীর পড়তে হবে।
পুরুষগণ মসজিদ, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট
তথা সর্বত্র উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করবে। এর
মাধ্যমে একদিকে যেমন ঈদের আনন্দ প্রকাশ
করা হয় অন্যদিকে আল্লাহর আনুগত্যের
স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। তাকবীর পড়ার নিয়ম
হল, “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-
ইলাহা ইল্লালাহু ওয়াল্লাহু আকবার। আল্লাহু
আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ্।”
৩) ঈদ উপলক্ষে পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করা:
মুসলমানগণ পরস্পরে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়
করাতে অসুবিধা নেই। কারণ সাহাবীগণ ঈদ
উপলক্ষে তা করতেন। তারা এই
বলে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করতেন ﺗَﻘَﺒَّﻞَ ﺍﻟﻠﻪُ ﻣِﻨَّﺎ ﻭَﻣِﻨْﻚَ
”তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম”
অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের এবং আপনার (ইবাদত-
বন্দেগী) কবুল করুন। (বায়হাকী (২/৩১৯)-সনদ
হাসান)।
৪) ভালো পোশাক ও ভালো খাবারের আয়োজন
করা: ঈদ উপলক্ষে যথাসম্ভব পরিবারের
সদস্যদেরকে ভালো খাবার ও সুন্দর পোশাক
দেয়ার ব্যবস্থা করা উত্তম। তবে অপচয়
যাতে না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী।
অনুরূপভাবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের
সাথে দেখা-সাক্ষাত করা কর্তব্য। সেই
সাথে প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর রাখতে হবে।
দরিদ্রদের যথাসম্ভব সাহায্য-সহযোগিত
া করতে হবে। যাতে ঈদের আনন্দ
থেকে তারা বঞ্চিত না হয়।
৫) ঈদের নামাযের প্রতি যত্মশীল হওয়া: ঈদুল
ফিতরের নামায বিলম্বে পড়া সুন্নত।
যাতে ঈদের দিন সকালবেলা ফিতরা বণ্টন করার
সময় পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে ঈদুল আযহার
নামায তাড়াতাড়ি পড়া সুন্নত।
৬) গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
নামাযে যাওয়ার পূর্বে গোসল করে পরিষ্কার-
পরিচ্ছন্ন হবে। তারপর সুগন্ধি ব্যাবহার করে ও
সাধ্যানুযায়ী সবচেয়ে সুন্দর কাপড় পরিধান
করে ঈদগাহ অভিমুখে যাত্রা করবে। তবে কাপড়
পরিধান করার সময় সাবধানতা অবলম্বন
করতে হবে, যেন পুরুষের কাপড় টাখনুর
নিচে না যায়। কেননা, পুরুষের জন্য টাখনুর
নিচে কাপড় পরিধান করা হারাম। আর
মহিলাকে তার সর্বাঙ্গ আবৃত
করতে হবে এবং রূপ-সৌন্দর্য পরপুরুষের
সামনে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত
সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক। কেননা মহান
আল্লাহ বলেন:
ﻭَﻻ ﻳُﺒْﺪِﻳﻦَ ﺯِﻳﻨَﺘَﻬُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﺒُﻌُﻮﻟَﺘِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺁﺑَﺎﺋِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺁﺑَﺎﺀِ ﺑُﻌُﻮﻟَﺘِﻬِﻦَّ ﺍﻵﻳﺔ
“আর তারা (মহিলাগণ) তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ
করবে না তাদের স্বামী, পিতা,স্বামীর
পিতা…..ছাড়া অন্যের নিকট।” (সূরা নূর: ৩১)
৬) ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে কোন কিছু খাওয়া:
ঈদুল ফিতরে ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে কোন
কিছু খাওয়া সুন্নত। আনাস (রা:) বলেন,
“নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটা খেজুর
না খেয়ে ঈদের মাঠে যেতেন না। আর
তিনি তা বেজোড় সংখ্যায় খেতেন।” (বুখারী)।
পক্ষান্তরে ঈদুল আযহায় তিনি ঈদগাহে যাওয়ার
পূর্বে কিছুই খেতেন না। ঈদগাহ
থেকে ফিরে এসে নিজের কুরবানীর গোস্ত
খেতেন।
৭) মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া:
মহিলাদেরকে সাথে নিয়ে ঈদের নামায
পড়তে যাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ প্রদান
করেছেন। তিনি বলেন:
(( ﻟِﻴَﺨْﺮُﺝْ ﺍﻟْﻌَﻮَﺍﺗِﻖُ ﺫَﻭَﺍﺕُ ﺍﻟْﺨُﺪُﻭﺭِﻭَﺍﻝْﺣُﻴَّﺾُ ﻭَﻳَﻌْﺘَﺰِﻝُ ﺍﻟْﺤُﻴَّﺾُ ﺍﻟْﻤُﺼَﻠَّﻰ
ﻭَﻟْﻴَﺸْﻬَﺪْﻥَ ﺍﻟْﺨَﻴْﺮَ ﻭَﺩَﻋْﻮَﺓَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ) )
“কর্তব্য হল, পর্দানশীন কুমারী মেয়েরা; এমন
কি ঋতুবতী মহিলারাও ঈদগাহে যাবে।
তবে ঋতুবর্তী মহিলাগণ নামাযের স্থান
থেকে দূরে অবস্থান করে কল্যাণময় কাজ
এবং মুমিনদের দু’আতে শরীক
হবে।” (বুখারীঃ হাদীস নং ৯২৭)
এ সুন্নত পৃথিবীর বিভিন্ন
দেশে এবং বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায়
আজো প্রচলিত আছে। সুতরাং যে সব এলাকায়
তা চালু নেই সেসব স্থানের সচেতন আলেম
সমাজ এবং নেতৃস্থানীয় মুসলমানদের কর্তব্য হল,
আল্লাহর রাসূলের সুন্নতকে পুনর্জীবিত করার
লক্ষ্যে মহিলাদেরকেও ঈদের এই আনন্দঘন
পরিবেশে অংশ গ্রহণের সুযোগ প্রদানের জন্য
এগিয়ে আসা। তবে নারী-পুরুষের অবাধ
মেলামেশা, পর্দা হীনতা,
উচ্ছৃঙ্খলতা ইত্যাদি যাতে না ঘটে তার জন্য
আগে থেকে সকলকে সচেতন ও সাবধান
করা জরুরী। মহিলাগণ যখন বাড়ি থেকে বের
হবে সর্বাঙ্গ কাপড় দ্বারা আবৃত
করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে।
কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
((( ﺃَﻳُّﻤَﺎ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﺍﺳْﺘَﻌْﻄَﺮَﺕْ ﻓَﻤَﺮَّﺕْ ﻋَﻠَﻰ ﻗَﻮْﻡٍ ﻟِﻴَﺠِﺪُﻭﺍ ﻣِﻦْ ﺭِﻳﺤِﻬَﺎ ﻓَﻬِﻲَ
ﺯَﺍﻧِﻴَﺔ))ٌ
“যে মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার করে অন্য মানুষের
নিকট দিয়ে গমন করার ফলে তারা তার ঘ্রাণ
পেল
সে মহিলা ব্যভিচারিণী।” (নাসাঈঃ হাদীস
নং ৫০৩৬)
৮) পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা:
পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা এবং ভিন্ন
পথে ঈদগাহ থেকে ফিরে আসা সুন্নত।
(বুখারীঃ হাদীস নং ৯৩৩)