Loading..

শিক্ষায় অগ্রযাত্রা

০৮ জুলাই, ২০২০ ০৯:২২ অপরাহ্ণ

শিক্ষকদের নৈতিক আচরণ-বিধি কেমন হওয়া উচিত

শিক্ষক সমাজ একটি দেশ গঠনের প্রধান হাতিয়ার। সুশিক্ষা একটি জাতিকে উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। সমাজে আলোকিত মানুষ গঠনে একজন শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য। আর আলোকিত মানুষ তৈরি করার মাধ্যমেই মানবাধিকার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন সম্ভব। যেহেতু শিক্ষকগণ তৈরি করতে পারেন একজন ভালো বিচারক, প্রশাসক সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি, ডাক্তার, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদ। তাই একজন আদর্শবান  শিক্ষককেও কিছু নৈতিক আচরণ-বিধি ও গুণাবলীর অধিকারী হওয়া প্রয়োজন। 

১। প্রত্যেক শিক্ষকের দেশপ্রেম, রাষ্ট্রীয় সংবিধানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, দেশীয় সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করা এবং ছাত্রদের এসব বিষয়ে উজ্জীবিত করা। 
২। দুর্নীতিমুক্ত, ও সুশাসিত স্বদেশ গঠনের প্রত্যয় নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখন্ডতা রক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের সচেতন করা।
৩। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে শিক্ষাকে মুনাফা অর্জনের জন্য পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করা।  
৪। একজন শিক্ষক শিক্ষা ও গবেষণামূলক কাজের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন এটা তার মৌলিক অধিকার যদি সেটা রাষ্ট্রীয় স্বার্থের পরিপন্থী না হয়।
৫। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতা, বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও মানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে তোলা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা।

৬। প্রত্যেক শিক্ষক কোন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধকরণ বা প্রচারণা চালাতে পারবেন না। তিনি নিজেও কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারবেন না। নিজস্ব ধর্মপালনে বা উপাসনালয়ে যাওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা তিনি ভোগ করবেন। কিন্তু অন্যের ধর্মের বিরূদ্ধে কোন নেতিবাচক মতামত প্রদান সম্পূর্ণ বর্জনীয়। তাঁর পদ অথবা প্রাতিষ্ঠানিক বা রাজনৈতিক শক্তির অপব্যবহার করতে পারবেন না।

৭।  প্রত্যেক শিক্ষককে অবশ্যই শারীরিক, মানসিক এবং নৈতিকভাবে যোগ্য হতে হবে। মানসম্মত দক্ষ নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকই পারেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ ও দুর্নীতিবিরোধী চেতনা সৃষ্টি করতে।
৮। কর্মনিষ্ঠা একজন শিক্ষকের অবশ্য পালনীয়। তাঁর নিজ দায়িত্ব গুরুত্ব সহকারে পালন করতে হবে। নিয়মানুবর্তিতা তাঁর এক অন্যতম যোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে।
৯। শিক্ষকের আচরণ রূঢ় না হয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ হতে হবে। পাঠদানে সৌজন্যবোধ এবং শিষ্টাচার থাকতে হবে। শিক্ষকের আচরণে শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষুদ্ধ, বেদনাহত বা অপমানিত না হয় এ বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে। স্বার্থপরতা ও নিষ্ঠুরতা উপেক্ষা করে মমতা, সহানুভূতি, দয়া মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা।
১০। অশুদ্ধ বাংলাভাষায় শিক্ষাদানে বিরত থাকা। এজন্য বাংলাভাষায় পারদর্শিতা অর্জনে সচেষ্ট হওয়া।
১১। প্রত্যেক শিক্ষককে মননশীল, যুক্তিবাদী, নীতিবান, নিজের এবং অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কুসংস্কারমুক্ত, পরমতসহিষ্ণু, বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া।

১২। শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী, আদিবাসীসহ সকল ক্ষুদ্রজাতিসত্তার অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের অবজ্ঞা এবং তাদের সংস্কৃতি ও ভাষাকে অবহেলা না করা।
১৩।  মানবাধিকার লঙ্ঘন, নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বঞ্চনা ও নির্যাতন থেকে বিরত থাকা সহ সকল শিক্ষার্থীর সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা ।
১৪। কোন ক্রমেই কারো বিরুদ্ধে কোন মিথ্যা অভিযোগ আনবেন না। শিক্ষককে সামাজিক রীতিনীতির বাইরে অর্থাৎ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবে না।
১৫। শিক্ষার্থী অথবা অন্য কারো সাথে কোন অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন অথবা অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনে উদ্ধুদ্ধ করা বা প্ররোচিত করা, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। 
১৬। মাদক বা নেশা জাতীয় দ্রব্য, জুয়া, অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন তথা একজন শিক্ষকের আত্মমর্যাদা বিঘ্নিত হয় এ ধরণের  অনৈতিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা।

১৭। ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ, অর্থনৈতিক অবস্থান বা জন্মস্থানের কারণে কোন সহকর্মী অথবা শিক্ষার্থীর প্রতি বৈষম্য, কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের সুবিধা প্রদান করবেন না।

দ্রত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার বৈশিষ্ট্য ও দক্ষতা অর্জন করার মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য শিক্ষক হিসাবে তৈরি করে দেশ ও জাতির উপকারে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া।

আশাকরি কথাগুলো কারো বোধগম্য না হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, কোন ব্যক্তি বিশেষ উদ্দেশ্য করে নয় শুধু মনের অভিপ্রায় প্রকাশ। 


মাওলানা সালাহ উদ্দিন মাহমুদ

সহকারী শিক্ষক (ধর্মীয়)

বাতিসা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়

সপ্তাহের সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা এবং

ICT4E জেলা এম্বাসেডর, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা। 

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি