Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

১২ জুলাই, ২০২০ ০৯:২৭ অপরাহ্ণ

শিশুদের গণতন্ত্র শিক্ষা # দুলাল হালদার # সহকারি শিক্ষক # কুমনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় # ছাতক,সুনামগঞ্জ।

  

শিশুদের গণতন্ত্র শিক্ষা

( শিশুরা শিখবে হাতে কলমে বাস্তবতার আলোকে ) 

তারিখঃ ১২/০৭/২০২০ খ্রিঃ      

  

        সারা বাংলাদেশের মতো ২৩ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার, ছাতক উপজেলার কুমনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও অনুষ্ঠিত হয়ে গেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন -২০২০। সতিই চোখে পড়ার মতো শিশুদের একটি গণতন্ত্র শিক্ষার প্রক্রিয়া। সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার কুমনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতি বছরই স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ নিয়মনীতি অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

        ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রধান শিক্ষক মহোদয়ের ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুর হয় নির্বাচনীক প্রক্রিয়া। তারপর একে একে নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা, প্রথীর নাম লিপিবদ্ধ, প্রার্থীতা বাছাই, অবৈধ প্রার্থীর প্রার্থিতা প্রত্যাহার, চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশের কাজ শুরু হয়। ক্ষুদে প্রার্থীদের মধ্যে জল্পনা কল্পনা শুর হয়ে যায়। কেউ কেউ আছে যারা ভোটে প্রার্থী হবেনা কিন্তু ভোট পরিচালনা পর্ষদের বড় পদটি অথবা পছন্দের পদটি প্রত্যাশা করে। সুন্দর ভাবে ভোট পরিচালনা করতে ভোট কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। প্রধান শিক্ষক সম্ভাব্য প্রার্থী এবং পরিচালনা পর্ষদের সম্ভাব্য সদস্যদের নিয়ে একটি মিটিং ডেকে ছাত্র ছাত্রীদের মূল দায়িত্ব বুজিয়ে দেন। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে তার কাছে যেন প্রার্থীর নাম, মনোনীত সদস্য এবং প্রস্তাবকারীকে সঙ্গে নিয়ে জমা দেয়আমাদের বিদ্যালয়ে সর্বমোট ২০ জন প্রার্থী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। সবচেয়ে বেশি উদ্দীপনা দেখা তৃতীয় শ্রেনির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেতাদের শ্রেণিতে ১০ জন প্রার্থী কাউন্সিলর পদে অংশ গ্রহণ করে। শিশুদের উৎসাহ প্রদানের লক্ষে আমাদের বিদ্যালয়ে নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদে যেসব পদ তৈরি করা হয়েছে তা হলঃ নির্বাচন কমিশনার, রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, পুলিশ, আনসার, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক। প্রচারণার কাজটি তারা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে করেছে। কাউকে জোরপূর্বক ভোট দেওয়া অথবা কোন প্রলোভন দেখানো বা উথকোচ প্রদান থেকে বিরত থাকছে। এই বিষয়টি তাদের সংযমের পরিচয় দিয়েছে। এখানে ধনী-গরিব, মাসল পাওয়ার, কে কার সন্তান ইত্যাদি ভুলে তারা সুষ্ঠ ভাবে নির্বাচন করার চেষ্ঠা করেছে। অধিকাংশ শিশুরা যাকে পছন্দ করবে তাকেই তারা নির্বাচিত করবে। এটাই তো শিশু গণতন্ত্র।

        অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমরা শিক্ষকরা শুধু তাদের গাইড হিসাবে থেকেছি। সম্পূর্ণ কাজটি তারাই করেছে তাদের দায়িত্ব নিয়ে। সকাল ১০টা পর্যন্ত ছিল কেন্দ্র সাজানো, বুথ তৈরি, ব্যালট বাক্স তৈরি এবং ভোটারদের দাঁড়ানোর সুসৃখল পরিবেশ তৈরি করা। সকাল ১০টার পর নির্বাচন শুরু হওয়ার সাথে সাথে সুশৃঙ্খল ভাবে দাঁড়িয়ে ভোটারেরা তাদের ন্যায্য ভোট দিতে লাগলো। মাঝে মাঝে রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসার প্রতিটি বুথের খোঁজ খবর নিচ্ছে, কোন অসুবিধা আছে কি না তার খবর রাখছে। ব্যালট পেপার কয়টি শেষ হয়েছে, আর প্রয়োজন কিনা তার খোঁজ রাখছে। পুলিশ, আনসার এবং নির্বাচনের দায়িত্বে যারা ছিল তারা সকল কাজ খুব সুন্দরভাবে করেছে। প্রায় সব কিছুই তারা করেছে স্থানীয় এবং জাতীয় নির্বাচনের মতো। এমনও দেখেছি যদি কেউ জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছে অথবা অবৈধ কোন কাজ করেছে অথবা নির্বাচনের আইন শৃঙ্খলাবিরোধী কোন কাজ কারেছে, তখনই তাকে পুলিশ ধরে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করেছে। বিরতিহীন ভাবে চলা নির্বাচন বেলা ২টা বাজার সাথে সাথেই তারা তাদের কার্যক্রম শেষ করেছে। তারপর নিয়ম মেনে ভোট গণনা শুরু হয় তারা উৎসুক ভাবে খেয়াল রেখেছে ব্যালট বাক্সের দিকে। কে জিতবে আর কে হারবে এটাই তাদের মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়

        অবশেষে যারা বিজয়ী হয়েছে তারা আনন্দ করল সংযমের সাথে। অন্য দিকে যারা পরাজিত, তারা পরাজয় মেনে নিয়ে তাদের সাথে সাথে থেকে উন্নয়নমূলক কাজ করার সিদ্ধান্ত নিল। এই ফলাফল মেনে নেওয়াটাই সুস্থ সংস্কৃতি। এদের দেখেও আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমার দেখতে খুব অবাক লাগলো যে এত অল্প সময়ের ভিতরে কীভাবে এই ক্ষুদে শিশুরা এত সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিল। তাদের ধন্যবাদ দিলেও ছোট হবে।

        যা হোক এই কোমলমতি শিশুদের সঠিকভাবে যত্ন আর যেকোনো ভালো কাজের সঠিক গাইড দিলে তারাও অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারবেআমরা দেখেছি, সত্যিকারের গণতন্ত্র কাকে বলে। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শিশুরা সংযমের পরিচয় দিয়েছে। সব কিছুর উপরে থেকে তারা স্থান দিয়েছে সকল শিশুর মতামতকে। এটাই তো গণতন্ত্র। এই জিনিসটা তারা পাঠ্য বই থেকে শিখছে। কিন্তু আজ তারা হাতে কলমে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে বুজেছে যে গণতন্ত্র কি এবং এর প্রয়োজন কি? স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচনের মাধ্যমে তারা জানল যে, কোন কাজ অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে সম্পন্ন করলে কাজটি সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয় এবং সবার কাছে গ্রহণ যোগ্য হয়। সবশেষে বলব, আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ তাদের ভালো কিছু শিখানোর মধ্যদিয়ে দেশ ও দশের কল্যান নিশ্চিত হয়। আজকের স্টুডেন্ট কাউন্সিল নির্বাচন তাদের গণতন্ত্রের শিক্ষার একটি উৎকৃষ্ট পন্থা। সকল শিশু ভোটার, প্রার্থী এবং দায়িত্বে থাকা শিশু কর্মকর্তা, সকল সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ এবং এসএমসি ও পিটিএ এর সম্মানিত সদস্যের প্রতি রইল ফুলেল শুভেচ্ছা ও আন্তরিক ধন্যবাদ।

লিপিকার, ধারা ভাষ্যকার এবং ভিডিও এডিটিং এবং গল্প আপলোডার -

দুলাল হালদার

সহকারী শিক্ষক

কুমনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

ছাতক, সুনামগঞ্জ।

জেলা এম্বাসেডর (ICT4E) সুনামগঞ্জ।  

Email: [email protected]