Loading..

প্রকাশনা

০৩ অক্টোবর, ২০১৪ ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কুরবানির শিক্ষা---- এক ত্যাগের মহিমা -- অধ্যক্ষ সুরাইয়া সুলতানা
কুরবানির শিক্ষা---এক ত্যাগের মহীমা অধ্যক্ষ- সুরাইয়া সুলতানা মানব সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে কুরবানির রেওয়াজ চলে আসছে।তারই ধারাবাহিকতায় আজ ঈদুল আজহা আমাদের একেবারেই দ্বারপ্রান্তে । ত্যাগের মহিমা ছাড়া দুনিয়ায় বড় কিছু হয়নি,কখনো হবেও না । কুরবানি অর্থ Sacrifice বা ত্যাগ স্বীকার । এর আর একটি অর্থ-নৈকট্য লাভ - অর্থাৎ ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমেই নৈকট্য লাভ সম্ভব বিধায় একে বলা হয় কোরবানি। মানব সমাজেও এ নৈকট্য মূলত ত্যাগ স্বীকারের মাধ্যমেই অর্জিত হয় । মাতা-পিতা,স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন সকলের নৈকট্যের মূলে রয়েছে ত্যাগের মনোবৃত্তি । আমাদের বৈষয়িক জিবনে সাফল্যও ত্যাগ ও কোরবানির বিনিময়েই সম্ভব। যে শিক্ষার্থী নিজের আরাম আয়েশ ত্যাগ করে রাত জেগে লেখাপড়া করে সাফল্য তার কাছেই ধরা দেয়। ব্যাবসা বানিজ্য, রাজনীতি,চাষাবাদ,চাকুরি-সকল ক্ষেত্রে একিই অবস্থা। এ পৃথিবীতে ত্যাগ স্বীকারের মানদণ্ডে মানুষকে মূল্যায়ন করা হয়। আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্কটাও ত্যাগের মানদণ্ডেই নির্ণীত হয় । আল্লাহর নিষিদ্দ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা ও তাঁর হুকুম পালনেও ত্যাগ অপরিহার্য । এমনকি মুসলমান হওয়ার জন্য প্রাথমিক শর্ত নামাজ ও রোজার মত ইবাদতও ত্যাগ ও ধৈর্য ছাড়া সম্ভব নয়। আরও নৈকট্য লাভের জন্য তাহাজ্জুদের নামাজ এবং দুঃস্থ মানুষ ও আল্লাহর দ্বীনের প্রয়োজনে অকাতরে নিজের ধন সম্পদ ব্যয় করা তাঁর গোলাম ও প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব । এ দায়িত্ব নিজে যেমন পালন করবে তেমনি সকল মানব গোষ্ঠী যাতে মেনে চলতে পারে সেই চেষ্টা করবে। মানুষ যাতে আল্লাহর বিধান মেনে চলতে পারে সেজন্য নিয়ম মাফিক বিধান বলে দিয়েছেন । আদম(আঃ)কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, “আমার পক্ষ থেকে যে হেদায়েত যাবে- যারা তা অনুসরণ করবে তাদের কোন ভয় নেই”-সুরা আল বাকারা-৩৮। সাথে সাথে সতর্কও করে দেন যে, “শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু” –বাকারা ১৬৮। পৃথিবীতে ২টি পথ রয়েছে।।১টি ঈমানদারদের পথ –অর্থাৎ জান্নাতের পথ । ২য়টি শয়তানের অনুসারী কাফেরদের পথ- অর্থাৎ জাহান্নামের পথ। এজন্য পৃথিবীতে হক ও বাতিলের চিরন্তন দন্দ লেগেই আছে। কুরবানি মানব সমাজে সবসময়ই কোন না কোন ভাবে চালু ছিল । হিন্দু সমাজেও বলি দান প্রথা চালু আছে। মুসলমানদের কোরবানি প্রথা হজরত ইব্রাহিম(আঃ) ও তাঁর পরিবারের চরম আত্মত্যাগের স্মরণ হিসেবে চলে আসছে বহু বছর আগে । আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে গিয়ে ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর আদরের প্রিয় সন্তান ইসমাইল (আঃ)কে কোরবানি করার উদ্দেশ্যে তার গলায় ছুড়ি চালাচ্ছিলেন তখন আল্লাহতালা তাঁর ছুড়ির নিচে ১টি জন্তু রেখে ইসমাইলকে সরিয়ে নিলেন । ইব্রাহিম (আঃ) আল্লাহর নির্দেশ ঠিকঠাক ভাবে পালন করে চোখ খুলে দেখেন তাঁর আদরের সন্তান তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে । আর কুরবানি হয়েছে ১টি পশু। আল্লাহর আনুগত্যের জন্য এ ত্যাগের কথা স্মরণ হিসেবে কিয়ামত পর্যন্ত তিনি পশু কুরবানি জারী করে দেন । তিনি কুরআনের ভাষায় জানিয়েছেন -“অনাগত মানুষদের জন্য এ বিধান চালু রেখে তাঁর স্মরণ আমি অব্যাহত রাখলাম । শান্তি বর্ষিত হোক ইব্রাহিমের প্রতি”- সুরা আস সাফফাত-১০৮-১০৯।আল্লাহ্‌ বলেন,”কুরবানির পশুর গোস্ত ও তার রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া বা আল্লাহ্‌ ভীতি । তিনি দেখেন বান্দার ঐকান্তিকতা ও একাগ্রতা । তাই আমাদেরও উচিত আল্লাহর নির্দেশ পালন করে তাকে খুশী করার চেষ্টা করা ,তাতে যদি দুনিয়ার কেহ অসন্তোষ হয় তার দিকে গুরুত্ব না দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করা। আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের জন্য আমরা প্রয়োজনে সব কিছু ত্যাগ করতে পারি এবং তাঁর নির্দেশ ও আনুগত্য যেন ঠিক ভাবে করতে পারি,আমিন।

আরো দেখুন