সহকারী শিক্ষক
২৩ আগস্ট, ২০২০ ০১:১০ অপরাহ্ণ
মনে কি পড়ে সেই দিনের কথা গুলি???
সেই কয় দিন আগের কথা যেদিন ১ টাকায় ৪ টি চকলেট,১ টাকায় পারুটি ২ টাকায় কলমের ১ পাতা শিষ পাওয়া যেতো। হসপিটালে গেলে ফ্রি ফ্রি চুলকানির ওষুধ, খাওয়ার স্যালাইন পাওয়া যেত। ব্রিজের উপর থেকে পানিতে লাফালাফি করতাম । হাজার খুঁজলেও এখনকার মত পকেট ভর্তি ইয়াবা আর ফোন ভর্তি পর্ণ পাওয়া যেত না। ও হ্যা, আমরা মাছ ধরতাম। ঠ্যালা জাল ঠ্যালতাম(তিনকোণা নীল রঙা জাল) । তখন পুটি মাছ পেয়ে যেন ইলিশের আনন্দ পেতাম।
সন্ধ্যে হওয়ার আগেই বাড়ি ফিরতে হত। রোজ হ্যারিকেন মুছে তৈল দিয়ে কুপি জ্বালিয়ে একসাথে চাটায়ে পেড়ে পড়তে বসতাম ভাই বোন মিলে, । রাত পেরিয়ে সকাল হলেই দল বেধে যেতাম মক্তবে কোরআন শিক্ষা নিতে , দিন হলে বা দিন পেরিয়ে সন্ধ্যা হলে আমরা পলিথিন জোগাড় করতাম। আগুন জ্বালাবার জন্য। মা বলতো উলের সোয়েটারে নাকি আগুন লাগে তাই সোয়েটার খুলে আমরা আগুনের কাছে যেতাম। আগুনের ভেতর থেকে হাত পা ঘুরিয়ে আনা আর সুচ দিয়ে আঙুল এর চামড়া ফুটো করে গেথে রাখা ছিল তৎকালীন সময়ে স্মার্টনেসের সর্বোচ্চ নিদর্শন। আগুন জ্বালালে তাতে নষ্ট কলম পোড়ানো ছিল ট্রেন্ড। এই জেনারেশন কখনওই জানবে না পলিথিন আর কলম পোড়ার গন্ধ, কিভাবে চামড়ায় সুচ আটকে রাখা যায় তা তারা শিখে নিতে পারবে কিন্তু রোমাঞ্চকর কোন অনুভূতি পাবেনা। কারণ তারা এখন রোমাঞ্চ পায় ইরোটিক ক্লিপ আর সবজী লাল পানি খাওয়াতেই।
আমরা দেখেছি কিভাবে কেরোসিন আনার জন্য কাচের স্প্রাইটের বোতলের মাথায় দড়ি বাধা হতো। আস্তে আস্তে কিভাবে দড়ি কালো হয়ে যেত আর বোতলের গায়ে ময়লার আবরণ পড়তো। ডাংগুলি, কানামাছি ,বৌছি খেলা তো এখনকার জেনারেশন চিনে কিনা সন্দেহ আছে,, কত যে রোমাঞ্চকর পরিবেশ ছিল ,জায়গায় জায়গায় মারবেল খেলা,সিগারেটের পেকেট এর নকল টাকা দিয়ে কত রকম যে খেলা ছিল,বিশ শতক কখনওই জানবে না ষ্টোভ নেভানোর পর কেরোসিন পুড়ে কেমন সুঘ্রাণ বের হয়, সন্ধ্যাবেলায় প্রতিটা বাড়ি থেকে কিভাবে এক এক্কে এক, দুই এক্কে দুই পড়ার আওয়াজ ব্যাঙ এর ঘ্যাংড় ঘ্যাংড় এর ডাককেও হার মানায়, এরা কখনওই ধারাপাত বই চিনবে না। এরা জানে ইউটিউবের টিউটোরিয়াল, সারাদিনের স্কুলে পরে থাকা মোজার গন্ধ আর বিদেশী রাইটারের বই।
সময় পাল্টে গেছে , আমি যুগের দোষ দেবোনা, সময়ের দোষ দেব না, এই জেনারেশনের দোষ দেব না, দোষ দেব আমাদের, দোষ দেব এই বিশ শতকের । কেন বিশ শতকের শুরুটা এত সুন্দর দিনগুলো কে তাদের ধারে কাছে আসতেও দিল না। সেই দিনগুলো ফেসবুক, ইউটিউবে বন্দী ছিল না তাই আমাদের শৈশব কেটেছে মাঠে ঘাটে, হাওড় বায়ড়ে, আগুনে পানিতে, জলাজঙ্গলে। তোমরা তোমাদের গেম অফ থ্রোনস, ইউটিউব আর ফেসবুক দিয়ে আমাদের সেই স্মৃতির দিনগুলো কে কি কখনো হার মানাতে পারবে?