সহকারী শিক্ষক
২৪ আগস্ট, ২০২০ ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ
বঙ্গবন্ধুকে কেন ভালোবাসি
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ার শেখ পরিবারে জন্মেছিল একটি ফুঁটফুটে
শিশু। বাবা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়রা খাতুন । পরিবারের
লোকজন তাঁকে আদর করে খোকা বলে ডাকত ।
আমরা যদি বাংলাদেশের
পরিচয় চাই, তাহলে বলবো, বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। আবার যদি বঙ্গবন্ধুর পরিচয় চাই,
তাহলে বলতে হবে, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। এ দুটি ভিন্ন সত্ত্বাকে কখনোই আলাদা করা
যাবে না।
বঙ্গবন্ধু ছোট বেলা
থেকেই ছিলেন বন্ধু বৎসল এবং মানবদরদী। একদিন খোকা ভিজে ভিজে স্কুল খেকে বাড়ি আসলে মা জিজ্ঞাসা
করল তোমার ছাতা কোথা ভিজে আসছ কেন? খোকা জবাব দিল আমার এক বন্ধুর ছাতা নেই, তাকে দিয়ে
দিয়েছি। এই কথা শুনে মা মনে মনে খুঁশি হলেন ছেলের মানবতা দেখে। ছোট বেলার আরেকটি ঘটনা
একদিন এলাকার কিছু দূর্ভীক্ষ পীড়িত লোক সাহায্যের
জন্য বাড়িতে আসলে খোকা কাউকে না জানিয়ে গোলা থেকে ধান-চাউল তাদেরকে দিয়ে দেন। পরে বাবা
মা জানতে পেরে ছেলেকে ধমক দেয়ার পরিবর্তে খুশি হয়েছিলেন। এসব কাজের মধ্য দিয়ে খোকার
মানবতাবোধের পরিচয় পাওয়া যায়।
আমি ১৯৪৭ সালের দেশভাগ
, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদ সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারকে দেখিনি। ১৯৫৪ সালের
নির্বাচন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬'র ছয় দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০ এর সাধারণ
নির্বাচনও দেখিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষের আত্মত্যাগ ও দুই লক্ষ নারীর
সম্ভ্রম হারানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের কাহিনী আমি পড়েছি এবং বাবা-মা
ও শিক্ষকদের কাছে শুনেছি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার
পর প্রথমবারের মতো ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের আহ্বানে সাধারণ অধিবেশনে
যোগ দিতে যান। আগত প্রতিনিধিরা জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষায় বক্তব্য দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু
বলেছিলেন, আমার দেশের মানুষ যে ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন, আমি সেই ভাষায়ই এই অধিবেশনে
বক্তব্য দেবো। তা না হলে আমি বক্তব্য দেবো না। বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে সেই ৭৪ সালেই এই
বাঙালির চেতনা মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।
নব্য স্বাধীন দেশে নিরাপত্তা
নিশ্চিত করা, ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয়া ছিলো এই মহান নেতার গুরু দায়িত্ব।
স্বাধীনতার বিরোধীদের গণহারে ক্ষমা করে দেয়া ছিলো তার উদারতা। বাঙালি জাতি যখন বিশ্বের
বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো আরম্ভ করলো ঠিক সেই সময় পরিকল্পিতভাবে জাতির পিতাকে সপরিবারে
হত্যা করা হলো। এই হত্যাকাণ্ডের পর হত্যাকারীদের মাঝে ক্ষমতা বন্টন করা হয়েছে এবং তাদেরকে
বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে।
আমি নিজ চোখে বঙ্গবন্ধুকে
না দেখলেও তাঁর জ্বালাময়ী ৭ই মার্চের ভাষণ আমাকে অনুপ্রেরণা দেয়, বেঁচে থাকার শক্তি
যোগায়। তাঁর হাসি, তাঁর আঙুল তুলে বজ্র কণ্ঠের ভাষণ, তাঁর ইতিহাসের মহানায়ক হওয়ার পরিচয়
বহন করে আমার কাছে।
বঙ্গবন্ধু তখন পশ্চিম
পাকিস্তানে কারাগারে বন্দি। তাকে বলা হলো, তিনি যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা না চান তাহলে
তাকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বানানো হবে। আর যদি চান তাহলে তাকে হত্যা করা হবে।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও আমার দেশের মানুষের মুক্তি চাই। তাতে
যদি আমার জীবন দিতে হয়, তাই দিবো। কিন্তু একটা অনুরোধ, আমার লাশটা যেনো আমার বাংলাদেশের
মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগেই গোয়েন্দারা তাকে
অনুরোধ করে বলেছিলেন, স্যার আপনি আপনার ৩২ নম্বর বাসা ছেড়ে সরকারি বাসভবনে আরো নিরাপত্তা
জোরদার করে থাকবেন। বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, যেই বাঙালি আমার কথায় জীবন দিতে প্রস্তুত,
সেই বাঙালি আমাকে মারতে পারে না।
এই সরল, নিঃস্বার্থ
ও নির্ভীক মানুষটিই ছিল জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই আমি তাঁকে ভালোবাসি।